Header Ads

এক রহস্যময়, পরাবাস্তব এবং কল্পিত জগতের আখ্যান হলো রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ থ্রি


বাজেট কোনো চলচ্চিত্র বা ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রে বড়ো কথা নয়, বড়ো কথা হলো গল্প ও চিত্রনাট্য। কিন্তু বাংলা ছবি ও ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রে বাজেট একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তবে বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি ভালোভাবে জানে যে ভালো গল্প ও চিত্রনাট্য দিয়ে স্বল্প বাজেটে কীভাবে একটা ছবি তৈরি করা যায়। এ প্রজন্মের নিত্যনতুন পরিচালকেরা স্বল্প বাজেটে আন্তর্জাতিকমানের ছবি বানাতে বেশ দক্ষ। উদাহরণ হিসেবে পরিচালক অভিরূপ ঘোষের নামই উল্লেখ করা যায়। কারণ সম্প্রতি তার মুক্তিপ্রাপ্ত ওয়েব সিরিজ রহস্য রোমাঞ্চ থ্রি এই কথায় বলছে। 


পরিচালক অভিরূপ ঘোষ বারবার নিজস্ব পরিচালনাকে নতুন রূপ দিচ্ছেন। আসুন তার পরিচালিত ওয়েব সিরিজ রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ  থ্রি নিয়ে আলোকপাত করা যাক। রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ ও রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ টুর পরবর্তী অংশ হলো রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ থ্রি। রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজের চরিত্ররা আবারো ফিরে এসেছে রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ থ্রিতে। রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজের ত্রিলোকচক্র সমিতি ও শকুনিদের আবির্ভাব ঘটেছে এই অংশে। এই সিরিজে যুক্ত হয়েছে একটি নতুন চরিত্র যে চরিত্রটি খুবই ইন্টারেস্টিং। এই চরিত্রের নাম হলো মড়া। যে এক কঠিন অজানা রোগে আক্রান্ত যে মনে করে সে মারা গেছে তাই তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্রমশ পচে যেতে শুরু করেছে।  

গল্পটি শুরু হয় কালো নেকড়ের মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসে তার বাড়িতে প্রত্যাবর্তন নিয়ে। সেই বাড়িতে ভাড়া নিয়ে থাকে একটি মেয়ে তার পরিচয় গোপন করে। এই মেয়েকে ঘিরে শুরু হয় উত্তেজনা। হঠাৎ করে একদিন কালো নেকড়ের ওপর আক্রমণ নেমে আসে৷ মেয়েটি নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এই মেয়েটিকে খোঁজার জন্য  ময়দানে নেমে পড়ে সে৷ আর পুরো কন্ট্রাক্ট নিতে মড়ার কাছে হাজির হয় সে। মড়ার সাহায্যে ঐ মেয়েটিকে সন্ধান করতে গিয়ে এক গোপন পাচারকারী সংস্থার খোঁজ মেলে। ঐ মেয়েটি এই পাচারকারী সংস্থা থেকে যে মেয়েগুলোকে চালান দেওয়া হয় তাদের যৌনকর্মের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়। কালো নেকড়ে যুদ্ধ করে ধ্বংস করে দেয় এই পাচারকারী সংস্থাকে। কালো নেকড়ের এই মিশনে মড়া দারুণভাবে সাহায্য করে। এই মিশনের সমাপ্তির পর মড়া শিকার হয়ে যায় ত্রিলোকচক্র সমিতির। 

মড়ার সাথে ত্রিলোকচক্র সমিতির সাক্ষাৎ হয়। ত্রিলোকচক্র সমিতি থেকে একটি জটিল গেমের কথা বলা হয় মড়াকে। সে রাজীও হয়ে যায়। এই গেমে মড়া জয়ী হয়। মড়ার সূত্র ধরে ত্রিলোকচক্র সমিতি শকুনির কাছে পৌঁছে যায়। ত্রিলোকচক্র সমিতির সাথে শকুনি চিটিং করার জন্য শকুনিকে আবারো একটি গেমে অংশ নিতে হয়। এরপর বাকিটা তো যারা এই সিরিজটি দেখেছেন তারা জানেনই এবং এই ওয়েব সিরিজটি যারা দেখেননি তারা বাকীটা সিরিজের মধ্যে দেখবেন। 

শকুনি যার আসল নাম সৈকত চ্যাটার্জী যাকে সকলে ঈর্ষা করে শকুনি বলে ডাকে। এই শকুনির চরিত্রে অভিনয় করেছেন কাঞ্চন মল্লিক। তিনি এই সিরিজে অসাধারণ অভিনয় করেছেন।  ত্রিলোকচক্র সমিতি মানে সায়নী ঘোষের অভিনয়ও নজর কেড়েছে। কালো নেকড়ের চরিত্রে শাওলি চট্টোপাধ্যায়ও অনবদ্য। সিরিজের শেষ অংশে ঝন্টু মোটরসের আগমনের দৃশ্যে রুদ্রনীল ঘোষও দারুণ অভিনয় করেছেন। তবে সকলের অভিনয়কে ছাড়িয়ে এই সিরিজে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ সৌরভ দাস। মড়া চরিত্রটিকে তিনি চমকপ্রদ করে তুলেছেন। সৌরভ দাসের এই সিরিজে অভিনয় একটা আলাদা মাইলস্টোন তৈরি করেছে। 

এককথায় যদি এই সিরিজটির গল্প বর্ণনা করতে হয় তাহলে বলা যায়, কালো নেকড়ের ইতিহাস, শকুনির পরিণাম ও মড়ার আগমন মিলিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ থ্রি। সিরিজের শেষ দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ ফোর আসবে। আর দর্শকরা মড়াকে নতুন করে ফিরে পাবে। হয়তো ঝন্টু মোটরসের ঝন্টুদা মানে রুদ্রনীল ঘোষও ফিরে আসবে। পরিচালক অভিরূপ ঘোষের বুদ্ধিদৃপ্ত পরিচালনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই সিরিজে। পরিচালক প্রচণ্ড এক্সপেরিমেন্টও করেছেন এই সিরিজে। চিত্রনাট্য ও গল্পটিকে তিনি বেশ শক্তিশালী করে তুলেছেন। সিরিজের ডায়লগ ডেলিভারি, অ্যাকশন সিকোয়েন্স, লোকেশন, লাইট এফেক্টস, ভিএফএক্স, আবহ সঙ্গীত সবই নজরকাড়া। চরিত্র নির্ধারণের জন্য চরিত্রগুলোকে বাস্তবিক রূপ দিতে মেকআপের জুড়ি নেই এই সিরিজে। রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ থ্রির সবচেয়ে বড়ো প্লাস পয়েন্ট হলো সম্পাদনা। সিরিজের ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যও টানটান। সিরিজটি এতোটাই চমৎকার যে সিরিজটির শুরু থেকে শেষ অবধি নিঃশ্বাস ফেলারও উপায় নেই।  

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments