Header Ads

নিষিদ্ধপল্লীর শিশুদের সামাজিক উন্নয়নের জন্য লড়াই চালাচ্ছে প্রিয়া মণ্ডল


যৌনকর্মীরাও মানুষ, তারাও সমাজের অংশ। আমাদের সমাজব্যবস্থায় তাদের নিম্ন চোখে দেখা হয়। আমরা হয়তো কখনো ভাবিনি যে তারা পেটের তাগিদে এই পেশাকে বেছে নিয়েছে। তারা জীবনের সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়ে এই পেশার সাথে যুক্ত হয়। প্রতিদিন হাজার হাজার মেয়ে হিউম্যান ট্রাফিকিং এর শিকার হয়ে যাচ্ছে। মেয়েদের শরীরকে চোরাবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। কিছু অসামাজিক মানুষজন টাকার লোভে নিজের মেয়েদের বিক্রি করতেও দ্বিধা বোধ করে না। অসামাজিক মানুষদের জন্য সমাজ আজকে ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে। 


যৌনকর্মীরা জন্মায় না, যৌনকর্মী বানানো হয়। এই যৌনকর্মীদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, বক্সিং ও মার্শাল আর্ট শেখাচ্ছে ১৭ বছর বয়সী বউবাজার এলাকার বাসিন্দা প্রিয়া মন্ডল। এই মেয়েটির বয়স হতে পারে অনেক কম কিন্তু তার কাজ যে-কোনো বড়ো ব্যক্তিকেও হার মানাতে পারে। নিষিদ্ধপল্লির 'অঙ্কুররা' যে সমাজের মূল অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন নয় তা প্রমাণ করতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে সে মরীয়া হয়ে কাজ করে চলেছে। তার এই কাজ সমাজকে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। 

প্রিয়া জন্ম থেকেই বউবাজার হাড়কাটা গলির নোংরা পরিবেশে দিন কাটিয়েছে। এখান থেকেই সে বেড়ে উঠেছে। তার মা-বাবা নেই। এমন পরিবেশের মধ্যে থেকেই দিনরাত পড়াশুনো করে সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সে বর্তমানে আদি মহাকালী পাঠশালার একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। গত ১৯ শে নভেম্বর, বৃহস্পতিবার প্রিয়ার জীবনে ঘটে গেল এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে শিশু সুরক্ষা কমিশন এদিন এক বিশেষ ব্যবস্থাপনার আয়োজন করে। মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য বিধাননগরে রাজ্য অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সনের চেয়ারে বসানো হয় তাকে।  

শিশুর অধিকারে তার যা যা দাবি রয়েছে সবকিছু সে খুলে বলে। সে যা যা দাবি তোলে সবকিছু চার্টার অফ ডিমান্ড আকারে লিপিবদ্ধ করে রাজ্যের শিশু সুরক্ষা মন্ত্রীকে পাঠানো হয়। সে কমিশনের দৈনন্দিন কাজকর্মও খতিয়ে দেখে। শুধু তাই নয়, দৈনন্দিন কাজকর্ম খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ফাইলেও সই করেছে সে। প্রিয়া জানিয়েছে যে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপরে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। তারা যাতে পেট ভরে খেতে পায় এবং পড়োশোনা করতে পারে সে বিষয়ে প্রশাসনকে আরো অনেক বেশি উদ্যোগী হতে হবে। 

রেডলাইট এলাকায় মায়েরা গোটা রাত জেগে কাজ করে। তাদের বাচ্চারা সারারাত বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ায়। কেমন যেন একটা অদ্ভুত ভায়োলেন্সের মধ্যে তাদের থাকতে হয়। অশ্লীল কথাবার্তা, অশ্লীল ইঙ্গিত নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই শিশুদের। সেই কারণেই এই শিশুদের একটা সুস্থ পরিবেশ, স্কুলে ভালোভাবে পড়ার ব্যবস্থা, লাইব্রেরী, খেলাধূলা, সেলফ ডিফেন্সের ব্যবস্থা করা উচিৎ বলে মনে করছে প্রিয়া। বাস, ট্রাম, ট্রেন সহ সমস্ত পরিবহনের ভাড়ায় ছাড় দেওয়া উচিৎ বলেও সে জানায়৷ 

  
প্রিয়া ক্যারাটেতে পার্পেল বেল্ট অর্জন করেছে। মেয়েদের আত্মরক্ষার জন্য মেয়েদের ক্যারাটে, তাইকোন্ডা, বক্সিং শেখানোর পক্ষেও মুখ খুলতে দেখা গেছে তাকে। আগামীদিনে সে ফটোগ্রাফি শিখতে চায়। শুধু ফটোগ্রাফিই নয়, বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়েও কাজ করবার ইচ্ছে রয়েছে তার। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments