Header Ads

শব্দদূষণ প্রতিরোধ ও ডিজের দৌরাত্ম্য রুখতে দুঃসাহসিক অভিযান চালালো হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ


আজকাল উৎসব-অনুষ্ঠানে ডিজের দৌরাত্ম্য সচরাচর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিজের প্রচণ্ড শব্দে হার্টফেল হওয়ার উপক্রম তৈরি হয়। ডিজের আওয়াজে শব্দদূষণ ভীষণভাবে বৃদ্ধি পায়। এমনকি ডিজের আওয়াজও বিরক্তিকর। যা সহজে কানে তোলা যায়না। এই ডিজে বন্ধ করার জন্য বহু মানুষ ও বহু সংগঠন উঠে পড়ে লেগেছে। এ বছর দীপাবলিতে বাংলার নানান জেলাতে অসংখ্য পরিবেশ সংগঠন প্রচার অভিযান চালিয়েছে। 


ডিজের দৌরাত্ম্য কমাতে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা রেখেছে হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক বড়োসড়ো অভিযান চালালো। দীপাবলি উৎসবে শব্দদূষণ রোধের প্রচার করতে ও ডিজের দৌরাত্ম্য কমাতে সারারাত ধরে গ্রামীণ হাওড়ার নানান প্রত্যন্ত এলাকায় এ অভিযান পর্ব চলে। হাওড়া জেলার পরিচিত গ্রামীণ এলাকাতে জনপদে বড় বড় রাজপথে সবার নজরে কয়েকটা পুজো নিয়ম মেনে সম্পন্ন হলেও প্রত্যন্ত এলাকা থেকে নজর দেওয়ার মতো খবর আসতে থাকে। এমন কয়েকটি প্রত্যন্ত এলাকা রয়েছে যে এলাকাগুলো পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে যায়। যেখানে ঠিকমতো মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়না। যেখানে নিয়মকে পরোয়া না করে উৎসবের দিনগুলোতে অতিরিক্ত ডিজে ও শব্দবাজির প্রতিযোগিতা চলে। সেই সব এলাকাতে একগুচ্ছ অভিযোগের সাপেক্ষে অভিযান চালিয়ে হাতে নাতে শব্দের ডেসিবেলমাপক যন্ত্রে পরীক্ষা করে তীব্রস্বরে মাইক বাজানো  ও দেদার শব্দবাজির দাপট রুখতে সরাসরি পৌঁছে গিয়েছিল হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের ৭জনের নজরদারী টিম। 

টিমে ছিলেন বিশিষ্ট সংগঠক মন্টু শী, রনজিত পাল, প্রমিলা বাহিনীর নেত্রী কল্যানী পালুই, হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের সম্পাদক শুভ্রদীপ ঘোষ, হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের কোষাধ্যক্ষ সায়ন দে, ক্যামেরাপার্সন সুকমল দে এবং নারীবাহিনীর পক্ষে রিনা। ১৪ ই নভেম্বর সন্ধ্যা ছটার সময় রাজাপুর থানার তুলসীবেড়িয়া গ্রাম থেকে শুরু হয় এই অভিযান৷ এরপর কুলগাছিয়া, উলুবেড়িয়ার রাজপথ দিয়ে হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের নজরদারি গাড়ি পৌঁছায় শ্যামপুর ১ ও ২ নম্বর ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে। এরই মধ্যে হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের জেলা জুড়ে নাগরিক হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে অভিযোগ আসতে থাকে শ্যামপুর ও বাগনান এলাকার নানা গ্রাম থেকে। তারপর মাইক বাজানো ও ডিজের দৌরাত্ম্যের খবর পেয়ে নজরদারি টিম সেইসব জায়গায় রাতের অন্ধকারে গিয়ে হাজির হয়। মদ্যপ অবস্থায় উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের চোখরাঙানী উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতে নিয়ে রাতে দুর্গম গ্রামীণ মেঠো পথ দিয়ে জগদীশপুর, মৌবেশিয়া, রনমহল হয়ে গড়চুমুক, গাজীপুর, বাড়গ্রামের বিভিন্ন পুজো আয়োজকদের কাছে বিপদ সম্বলিত বার্তা ও প্রচারপত্র তুলে দিয়ে অনুরোধ করা হয় উৎসবের দিনগুলোতে সরকারী বিধিনিষেধ মেনে চলতে।

কল্যানী পালুই দীর্ঘদিন মদ্যপান বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। তিনি দীপাবলির রাতে এ বছর মদ্যপ যুবকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর হন। করোনার পরিস্থিতিতে যে মা-বোনেরা করোনাকে উপেক্ষা করে মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের দেখে তিনি কিছুটা হতাশ হয়ে যান। তিনি সেখানে করোনা বিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান সকলকে। প্রতিটি ক্লাব ও পুজো কমিটির কর্মকর্তাদের বোঝানোর কাজ সম্পন্ন করেন মন্টু শী ও সায়ন দেরা। সাউন্ড মিটারে শব্দের তীব্রতা মেপে ডিজে বক্সের ডকুমেন্টেশন করে থানায় ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে ক্রমাগত রিপোর্টিং করে যান শুভ্রদীপ ঘোষ, সহযোগীতা করেন সুকমল দে। 

বাগনান থানার ছয়আনি গুজরাগ গ্রাম থেকে একাধিক মাইক বাজানো ও ডিজে প্রতিযোগিতার অভিযোগ আসতে থাকে। পুলিশকে ফোন করে তা সিজ করার আবেদনও জানানো হয়। রাত দশটার পর পুরো টিম বহু গ্রামে উচ্চস্বরে মাইক চালানোর স্পটে গিয়ে মাইক ও ডিজে বন্ধ করে।

স্পট থেকে ফেরার পথে মধ্যরাতে নিস্তব্ধ রাস্তায় মাদকাসক্ত যুবকদের ভিড়, গাঁজার ঠেক বসানোর মতো কুরুচিপূর্ণ কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের নাগরিক নজরদারী টিমের। 

সমস্ত তথ্য প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হবে বলেও জানানো হয়। গ্রামীণ এলাকার বয়স্ক মানুষজনদের সাথে কথা বলেন হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের কোষাধ্যক্ষ সায়ন দে৷ গ্রামবাসীরা ওনাকে জানান - "আমাদের খুব কষ্ট হয় এ কদিন। কিছু বলতে পারিনা। পাড়ার ছেলেরা বলে এক দুদিন আনন্দ করবো না? আপনার এলেন। এভাবে বললেন৷ কেউ আগে বলেনি এভাবে। এবার নিশ্চয়ই ওরা বুঝবে বা ভয় পাবে।" 

হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের মতে তাদের ডিজে ও শব্দদূষণের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযানে যদি সকল মানুষ কিছুটা হলেও সচেতন হয়। তারাও যদি সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেয় তাহলে তাদের এ অভিযান সফল হবে। 

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা

No comments