Header Ads

পর্তুগিজরা বাংলা ছেড়েছে সেই কবে তবুও ঐতিহ্য হারায়নি ব্যান্ডেল চিজ


বাঙালি রসগোল্লা আবিষ্কার করেছে ঠিকই কিন্তু রসগোল্লার জন্য যেভাবে ছানা কাটতে হয় সেই পদ্ধতি বাঙালি শিখেছে পর্তুগিজদের কাছে। বাঙালির রান্নার হেঁসেলে ছানা ঢোকে পর্তুগিজদের হাত ধরে ষোড়শ শতকের দিকে। সত্যি তারা না এলে চামচ দিয়ে বাটিতে তৃপ্তি করে রসগোল্লা, কালোজাম, সন্দেশ খাওয়ার সুযোগই আমরা পেতাম না। পর্তুগিজদের কাছে ছানার ব্যবহার শিখে বাঙালি আজকে মিষ্টিতে গোটা বিশ্বকে পাল্লা দিচ্ছে। 


এ দেশে পর্তুগিজরা দুধ কেটে তৈরি করতো ছানা। যে ছানার তারা নাম দিয়েছিল কটেজ চিজ। সেই ছানাতে মজে একাকার হয়ে যায় গোটা বাংলা। বাঙালি পর্তুগিজদের নিকট তিন প্রকারের ছানা যেমন কটেজ চিজ, ব্যান্ডেল চিজ ও ঢাকাই পনিরের ব্যবহার শেখে। এই তিন প্রকার চিজ ব্যবহার হলেও পরবর্তীকালে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ব্যান্ডেল চিজ। হুগলির গঙ্গার তীরে ব্যান্ডেল শহরে পর্তুগিজদের হাত ধরে জন্ম হয় ব্যান্ডেল চিজের। 

ব্যান্ডেল চিজ প্রধানত দু'রকমের হয়, সাদা রঙের সাধারণ চিজ ও বাদামি স্মোকড চিজ। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোলাকৃতি আকারের হয় এই চিজ। যার ভেতরে অনেকটা লবণ দেওয়া থাকে। লেবুর রস দিয়ে দুধ থেকে ছানা পৃথক করে এগুলো বানানো হয়। ছাঁচে ফেলে তারপর সেগুলো ছোটো ঝুড়িতে ভরা হয়। তারপর তাতে ধোঁয়া ঢোকানো হয়। শুকনো ঝুরঝুরে আর ধোঁয়াটে স্বাদের জন্য এই চিজ বিখ্যাত। 

ব্যান্ডেল চিজ কলকাতায় আজও সমান জনপ্রিয়। বাঙালির কাছে এই চিজের ঠিকানা কলকাতার নিউমার্কেট। প্রখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের অত্যন্ত প্রিয় খাবার ছিল ব্যান্ডেল চিজ। এই চিজের টানে তিনি প্রায়ই নিউমার্কেটে আসতেন। তাঁর পুত্র সন্দীপ রায়েরও ভালো লাগে এই চিজ। সন্দীপ রায়ের পুরো পরিবার পাগল এই চিজের জন্য। নিউমার্কেটে সাদা ও ধূসর রঙের সন্দেশ আকারে ব্যাপক হারে বিক্রি হয় ব্যান্ডেল চিজ। নিউমার্কেটে শুধু ব্যান্ডেল চিজই নয় আরো দুটো চিজের প্রাণকেন্দ্র। ড্যানিশ ব্লু চিজ ও ডাচ এডাম চিজের জন্যও নিউমার্কেট বিখ্যাত। 

কলকাতার নিউমার্কেট ছাড়াও হুগলির তারকেশ্বর ও বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরেও উন্নতমানের ব্যান্ডেল চিজ তৈরি হয়৷ এতো বছর আগে পর্তুগিজরা বাংলা ছেড়ে চলে গেছে তারপরও এতটুকু ঐতিহ্য হারায়নি ব্যান্ডেল চিজ। এই সুস্বাদু খাবারটিকে নিয়ে খাদ্যরসিকরা কয়েক শতক ধরে মুগ্ধ থাকলেও বাংলার এই নিজস্ব চিজ এখনও কুটির শিল্পের স্তরেই থেকে গেছে। ব্যান্ডেল চিজকে বিশ্বব্যাপী ছড়াতে হলে উন্নতমানের প্যাকেজিং এর সাথে তা বিদেশে এক্সপোর্ট করতে হবে।  

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments