Header Ads

পাঞ্জাবি হয়েও শ্যামা সঙ্গীত গেয়ে আলোচিত হয়েছিলেন অমৃক সিং অরোরা


শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ তিনি। পাঞ্জাবি পরিবারে জন্মেছিলেন তিনি। কলকাতার বুকেই সারাটা জীবন কেটেছে তাঁর। শৈশব থেকে ভক্তিমূলক গানের প্রতি একটা আলাদা আগ্রহ তৈরি হয় তাঁর মধ্যে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে একাত্ম গড়ে উঠেছিল তাঁর। বাংলার বৈচিত্র্যের সাথে মিলে গিয়ে তিনি প্রায় বাঙালিই হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি হলেন স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী অমৃক সিং অরোরা। 


অমৃক সিং অরোরার গায়কী জীবন শুরু হয় ১৯৬১ সালে। কলকাতায় অবস্থিত গুরুদ্বার বড় শিখে শিখ সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে সঙ্গীত জীবনের সূচনা হয় তাঁর। তিনি প্রায় ২৫০০ দেশাত্মবোধক, আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক গান রচনা করেছিলেন৷ যে গানগুলো শ্রোতাদের হৃদয়ে বহুদিন পর্যন্ত স্থান করে নিয়েছিল৷ ১৯৮৩ সাল থেকে তিনি শ্যামা সঙ্গীত গাওয়া শুরু করেন। এই শ্যামা সঙ্গীত তাঁকে নীল আকাশের নীচে জায়গা দিয়েছিল। 

শ্যামা সঙ্গীত বদলে দেয় তাঁর জীবন। শ্যাম সঙ্গীত গাওয়ার জন্য জাতীয় সম্মান অর্জন করেন তিনি। শ্যামা সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শ্যামা মায়ের আরাধনাতে মন দেন তিনি। প্রকাশিত হতে থাকে তাঁর একের পর এক শ্যামা সঙ্গীতের অ্যালবাম। ত্রিনয়নী, রাঙা চরণ, তারা নামে মন মজেছে, ভুবন মোহিনী মা, জয় তারা জয় ক্ষ্যাপার মতো শ্যামা সঙ্গীতের অ্যালবাম বের করেন তিনি। তাঁর এই গানগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয় হতে থাকে। পুজো-পার্বণেও বাজতে শুরু করে তাঁর গাওয়া শ্যামা সঙ্গীত। 

তাঁর মিষ্টি কণ্ঠ জার্মানি, আমেরিকার মতো দেশেও পৌঁছে গিয়েছিল। বেশ কিছু শ্রোতা প্রাণভরে তাঁকে অনুসরণ করেছিল৷ অমৃক সিং অরোরা মহাজাতি সদনের পাশে বিশুধা নন্দ বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে বহুবার গান গেয়েছিলেন। তিনি ব্লু ফক্স রেস্তোঁরায় ১৯৬৬ সালে দেশাত্মবোধক গান গাইতে গিয়েছিলেন। তিনি কলকাতার প্রথম গীট, গজল, পাঞ্জাবি ফিল্মের গান ও ভাঙড়া গানের প্রচলনকারী কণ্ঠশিল্পী। তিনি কলকাতার বহু সংস্থার হাত ধরে মুম্বাই, দিল্লি, মার্কিন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গান গাইতে গিয়েছিলেন। তাঁর মর্মস্পর্শী কণ্ঠ বারংবার আলোচিত হয়েছে। 

বাংলার শ্যামা সঙ্গীত ছাড়াও বাংলা লোকগীতি, বাংলার ভূমিজ গীত ও বাংলা ছায়াছবির বহু গানও তিনি রেকর্ডিং করেছিলেন। তিনি দূরদর্শনে প্রায়ই গান শোনাতেন। দক্ষিণেশ্বরে পুজোর সম্প্রচারেও বাজানো হতো তাঁর গান। এককথায়  তাঁর সঙ্গীত জীবন ছিল  গৌরবময়। তিনি ২০১১ সালে দুরারোগ্য ক্যান্সারে প্রয়াত হন। তাঁর মৃত্যুর এতো বছর পরেও কেউ মনে রাখেননি তাঁকে। উইকিপিডিয়া বা ঐ জাতীয় অন্যান্য ওয়েবসাইটেও তাঁর সম্বন্ধে  কোনো তথ্য পাওয়া যায়না। বাংলার প্রতিটি মানুষের স্মরণ করা উচিৎ এই ব্যক্তিটিকে। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments