Header Ads

মাত্র ৫০ থেকে ১০০ টাকায় পোট্রের্ট বিক্রি করেন কলকাতার এক বৃদ্ধ শিল্পী


মাত্র ৫০ থেকে ১০০ টাকাতে পোট্রের্ট বিক্রি করেন কলকাতার এক চিত্রশিল্পী। জীবনপথে হাজারো যন্ত্রণা গ্রাস করেছে তাকে। জীবনের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট ভুলে তিনি শিল্পের সঙ্গেই সংসার বেঁধেছেন। নিজের হাতে যত্ন করে পোট্রের্টগুলো তিনি এঁকে সেগুলো বাঁধিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বিক্রি করেন। তার বানানো পোট্রের্টগুলি আশ্চর্যকর। অসাধারণ শৈল্পিক প্রতিভার পরিচয় রাখেন তিনি পোট্রের্টের বিষয় নির্বাচনে। 


বয়স তার অনেক হলো। তিনি বর্তমানে একজন বৃদ্ধ মানুষ। নিজের পেশার ওপর ভর করে এখনও দিব্যি দিন কাটাচ্ছেন তিনি। তার সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো এতো নজরকাড়া পোট্রের্ট কীভাবে তিনি ৫০ থেকে ১০০ টাকাতে বিক্রি করছেন? আসল কথা হলো শিল্পের মায়া৷ শিল্পের টানে মানুষ এমনই হয়ে ওঠে। শিল্পের কাছে অর্থের থেকেও বড় হয়ে দেখা দেয় শিল্পের মায়া। শিল্পের প্রতি অগাধ ভালোবাসা থেকেও তিনি এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। 

প্রতি বুধবার ও শনিবার কলকাতার গোল পার্কে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের সামনে পোট্রের্ট বিক্রি করার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ঐ বৃদ্ধ শিল্পীকে। এই অঞ্চলের সকলেই কম-বেশি তাকে চেনেন, তিনি হলেন শিল্পী সুনীল পাল। তিনি তার সুন্দর সৃষ্টি নিয়ে বসে থাকেন কলকাতার বিভিন্ন অলিগলিতে। প্রতিদিনের রুটি রোজগারের জন্য এই বৃদ্ধের সৎভাবে এমন লড়াই সমাজকে আলাদা শিক্ষা দেয়। সুনীল পালদের মতো মানুষদের তুলনা হয়না৷ তাদের শিল্পকর্ম সভ্যতার কথা  বলে। তাদের শিল্পকর্মে রক্ত-মাংস ও ঘামের গন্ধ মিশে রয়েছে। সকল প্রকার কষ্টের হিসেবও লুকিয়ে আছে তাদের শিল্পকর্মে। 

শিল্পী সুনীল পাল পরিবারের শেষ সম্বল হারিয়ে ফেলেছেন। বহু বছর হলো তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। তার ছেলেমেয়েরা তাকে বাড়িতে থাকার জায়গা দেয়নি। বিনা কারণে তার ছেলেমেয়েরা তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে৷ ভিটেমাটি সম্বলহীন মানুষ হয়ে তিনি একাকী দিনযাপন করেন৷ হাতিবাগানের এক ছোট্ট কামরাতে তিনি মাথা গোঁজার মতো ঠাঁই পেয়েছেন। অসহায় এই মানুষটির কাছে এখন শিল্পই সব। তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজস্ব শিল্পকর্মকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চান। 

মহানগর কলকাতার বুকে সুনীল পালের মতো বহু শিল্পী আজও রয়েছেন যারা দুঃখ যন্ত্রণার অতল সাগর পেরিয়েও শিল্পের মায়া ত্যাগ করতে পারেন না। শিল্প না থাকলে দুর্বিষহ হয়ে উঠতো সুনীল পালের মতো মানুষদের জীবন। দুঃখের কথা হলো সুনীল পালের মতো শিল্পীদের কেউ খোঁজ নেয়না। তাদের শিল্পের দাম দেওয়ার মতো মানুষেরও বড়োই অভাব। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments