Header Ads

সোনার কেল্লার সিধুজ্যাঠা দশ বছর বয়সে ক্ষুদিরামের ফাঁসি নিয়ে ডাইং পেট্রিয়ট রচনা করেন


ভারতের স্বাধীনতার জন্য বাঙালিদের অবদান কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায়না। তৎকালীন সময়ে বাঙালিদের রক্তে ছিল লড়াই করার চেতনা। শিশুদের মনে পর্যন্ত জেগে উঠত দেশ স্বাধীন করার বাসনা। গ্রাম বাংলার এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে বিপ্লবী তৈরি হয়নি। আন্দামান সেলুলার জেলের বিপ্লবীর সংখ্যা, ১৯১১ তে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ফুটবলের লড়াই, রাইটার্স বিল্ডিং এ বোমা বর্ষণ এ ধরণের বৈপ্লবিক কাজকর্ম করতো বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স, অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর সমিতির মতো দলগুলি। বালক বা যুবক বয়সে নাটক করে বা পত্রিকা চালানোর জন্য প্রায়ই গ্রেপ্তার হয়েছেন বহু বাঙালি। এই লেখালেখির মাধ্যমে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে শিশু বয়সে কবিতা লেখা এমনকি হাতে লিখে ম্যাগাজিন চালানোরও উদাহরণ আছে।

ক্ষুদিরামের ফাঁসি সারা বাংলায় আলোড়ন তুলেছিল। ক্ষুদিরাম বসুর মতো এক কিশোরের আত্মবলিদানে গান কবিতা লেখার পাশাপাশি শোকসভা এসবেরও আয়োজন হয়েছিল সারা বাংলায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিপ্লবীদের কাছে ছড়িয়ে পড়েছিল ওনার আত্মত্যাগের কাহিনী। এমনকি হায়দ্রাবাদে জন্মানো এক বঙ্গসন্তান হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের তখন বয়স ছিল মাত্র দশ বছর। এত কম বয়সেই তিনি হায়দ্রাবাদে লিখলেন 'ডাইং পেট্রিয়ট' কবিতা। ইংরেজি সাহিত্য, চলচ্চিত্রে অসাধারণ অভিনয়, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও রাজনৈতিক কাজের জন্য উনি সারা ভারতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। আগে একটি নিয়ম ছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি না থাকলেও মেধা প্রমাণ করতে পারলে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া যেত। তিনি 'ফিস্ট অফ ইউথ' কাব্যগ্রন্থের জন্য কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করার সুযোগ পান। হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বাবা অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ভারতের প্রথম ডি.এ.সি.। হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ছোটো ভাই ছিলেন কমিউনিস্ট বিপ্লবী বীরেন চট্টোপাধ্যায় এবং বোন ছিলেন দেশনেত্রী সরোজিনী নাইডু। ওনার সহধর্মিনী ছিলেন কৃষ্ণা রাও, যিনি পরবর্তীকালে সমাজসেবী কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় নামে পরিচিত হন।

অসহযোগ আন্দোলনের জন্য তিনি ব্রিটেন থেকে ভারতে ফিরে আসেন। ফিরে এসে তিনি অসহযোগ আন্দোলন নিয়ে গান লেখেন যার ফলে ছয় মাস কারারুদ্ধ হন তিনি। দেশ বিদেশের বহু পত্রিকায় হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা প্রকাশিত হতো। ওনার লেখা কবিতার প্রশংসা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং। ওনার লেখা কাব্যগ্রন্থগুলি হল 'দি ফিস্ট অফ ইউথ', 'ডার্ক ওয়েল', 'ব্লাড অফ টোনস', 'দি কফিন', 'দি ডিভাইন ভ্যাগাবন্ড', 'এনসিয়েন্ট উইং', 'দি উইজার্ড মাস্ক', ইত্যাদি। ওনার লেখা নাটকের গ্রন্থগুলি হল 'ফাইভ প্লেজ', 'আবু হাসান'  এবং 'সিদ্ধার্থ', 'দ্য ম্যান অফ পিস'

বিশ্ববিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালিত 'সোনার কেল্লা', 'গুপী গাইন বাঘা বাইন','সীমাবদ্ধ' সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন। 'সোনার কেল্লা' ছবির সিধুজ্যাঠা চরিত্রে ওনার অনবদ্য অবদানের জন্য তিনি সারা বাংলায় সিধুজ্যাঠা নামে পরিচিত হন। তিনি ১৯৫২ সালে বিজয়ওয়াড়া কেন্দ্র থেকে লোকসভার সাংসদ হন। হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের লোকসভায় তীব্র বাদানুবাদ তর্কের সময় হাস্যরস সহযোগে ব্যাঙ্গাত্মক পরিহাস ছিল সর্বজনবিদিত।


No comments