Header Ads

'প্রেমে পড়া বারণ' ও 'মন কেমনের জন্মদিন' গানের স্রষ্টা রণজয় ভট্টাচার্যের সাক্ষাৎকার


বর্তমান প্রজন্মের অত্যন্ত জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী হলেন রণজয় ভট্টাচার্য। 'প্রেমে পড়া বারণ', 'মন কেমনের জন্মদিন' এর মতো গানে শ্রোতাদের মন ভরিয়েছেন অতি অল্প সময়ের মধ্যেই। লিটারেসি প্যারাডাইসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ধরা দিলেন তিনি।


লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনার 'প্রেমে পড়া বারণ' গানটি দর্শকদের হৃদয়ে বিশেষ ভাবে জায়গা করে নিয়েছে। এই গানটির সাথে কী আপনি নিজের জীবনের মিল খুঁজে পান? 

রণজয় ভট্টাচার্য- জীবনের মিল বলতে আমরা যখন প্রতিটা গান বা ক্রিয়েশন তৈরি করি, প্রত্যেকটা গানই কিন্তু কোনো না কোনো ভাবে জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই অনুপ্রাণিত। এবার সেটা নিজের জীবনও হতে পারে, অন্য কারো জীবন আমি যেভাবে দেখছি সেটাও হতে পারে। 'প্রেমে পড়া বারণ' গানটি অবশ্যই জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই তৈরি হয়েছে। জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বানিয়েছি বলেই অর্গ্যানিক্যালি গানটা এতো মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে। 

লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনি 'সোয়েটার' ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। যে ছবির প্রতিটি গানই অনবদ্য। গানের মধ্যে এই গভীরতাটা কীভাবে তুলে ধরেন? 

রণজয় ভট্টাচার্য- আমি একটা গান যখন তৈরি করি তখন অর্গ্যানিক্যালি ব্যাপারটিকে নিয়ে ভাবি৷ এমন নয় যে আমি একটা ছবির জন্য গান লিখছি বা আমার যে একটা সিচুয়েশনাল ব্রিফ থাকে সেটা অনুযায়ী করছি, সেটাও করি। আমি কিন্তু গানটা অর্গ্যানিক্যালি ফিল করে তৈরি করি৷ আমার মনের মধ্যে যখন যেরকম পরিস্থিতি চলছে কিংবা জীবন যখন যেরকম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেগুলোকে ছেঁকে ছেঁকে আমি গান বানিয়ে থাকি। আর 'সোয়েটার' ছবির ক্ষেত্রে আমার যেটা হয়েছিল, সেই ছবির 'প্রেমে পড়া বারণ' বা 'আদূরে দিন' এই গানগুলো আমার আগের বানানো গান। ছবির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কিছু লিরিক্স পরিবর্তন করে গানগুলো ব্যবহার করি৷ কিন্তু গানের বেসিক আইডিয়া ও বেসিক স্ট্রাকচার গোটাটাই আগের থেকে বানানো ছিল৷ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে গানগুলো আমি ইমোশন থেকে বানিয়েছি কাজেই গানের গভীরতাটা ওখান থেকেই এসেছে বলে আমি মনে করি। 

লিটারেসি প্যারাডাইস- সম্প্রতি আপনি 'হৃদপিণ্ড' ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করলেন। এই সিনেমার পরিচালকও শিলাদিত্য মৌলিক৷ এনার সাথে কাজ করে আপনার কেমন অভিজ্ঞতা হলো?

রণজয় ভট্টাচার্য-  শিলদার সাথে কাজ করতে আমার খুব ভালো লাগে কারণ শিলদার ভালো মিউজিকের প্রতি একটা ন্যাক আছে। শিলদার মিউজিক টেস্টও ভালো। এরকম পরিচালকের সাথে কাজ করলে সবসময় একটা অ্যাডেড অ্যাডভান্টেজ থাকে যেহেতু মিউজিক্যাল টেস্টটা ভালো হয়। শিলদার সাথে এমনিতেও একটা ভালো বন্ধুত্ব আছে। এমনকি ওনার সাথে আমার রুচিরও মিল আছে। ফলে কাজ করাটা অনেক সহজ হয়ে যায়।   

লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনি 'আবার বছর কুড়ি পরে' নামের আরেকটি বাংলা ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা শুরু করতে চলেছেন। আপনি এই ছবিতে কী ধরণের গান নিয়ে আসতে চলেছেন? 

রণজয় ভট্টাচার্য- আমি 'সোয়েটার' ছবিতে এবং 'হৃদপিণ্ড' যে ছবির গানগুলো খুব জনপ্রিয় হয়েছে, এই দুটো ছবিতে যেরকম গান বানিয়েছি তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা গান তৈরি করতে চলেছি 'আবার বছর কুড়ি পরে' ছবিতে। আমি একদম নতুন করে নিজেকে এক্সপ্লোর করার চেষ্টা করছি 'আবার বছর কুড়ি পরে' ছবিতে। আমি ছোটোবেলা থেকে যাদেরকে আইডিওলাইজ করেছি, বাংলা ফিল্মের গান বা ব্যান্ড মিউজিক সবকিছুর প্রভাব পাওয়া যাবে এই ছবিতে। ফলে আমার একটা নতুন অভিজ্ঞতা হতে চলেছে এই ছবির মাধ্যমে। কারণ মানুষ আমাকে এর আগে এমনভাবে শোনেনি, এটুকু আমি বলতেই পারি। 

লিটারেসি প্যারাডাইস- মানুষের জীবনে গান শোনার কতটা প্রয়োজন আছে বলে আপনার মনে হয়?

রণজয় ভট্টাচার্য- গান শোনার অবশ্যই প্রয়োজন আছে কারণ আমার মনে হয় সঙ্গীত মানুষকে ঠিক যতটা রিলিফ দেয়, ঠিক যতটা ভাবায়, মানুষের দুঃসময়ে যেভাবে মানুষকে এক করতে পারে আর কোনো অনুশীলন শিল্পকর্মই সেটা পারে না। সমস্ত শিল্পকর্মকে শ্রদ্ধা জানিয়েই বলছি মিউজিকের মতো এতো এফেক্টেড শিল্প আর পৃথিবীতে নেই৷ করোনার পরিস্থিতিতে ইতালির একটি ভিডিওতে দেখলাম সেখানে পাড়ার প্রতিটি বাড়ির ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কেউ পিয়ানো বাজাচ্ছে, কেউ ভায়োলিন বাজাচ্ছে, কেউ সেক্সোফোন বাজাচ্ছে সময় কাটানোর জন্য; এটাই হচ্ছে মিউজিকের আসল ক্ষমতা। সঙ্গীতের চেয়ে বড়ো কিছু আর হতেই পারেনা বলে আমি মনে করি। 

লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনার কোন কোন বিষয় বেশি পছন্দ গানের ক্ষেত্রে? 

রণজয় ভট্টাচার্য- আমি ব্যক্তিগত ভাবে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বা রাগ সঙ্গীত বলা হয় যেটাকে। কারণ আমার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা হচ্ছে ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক। আমার যেহেতু একটা ক্ল্যাসিক্যাল শিক্ষা আছে সেহেতু গান বানানোর ক্ষেত্রে সেই শিক্ষাটা বেরিয়েও আসে। ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক ছাড়াও সবরকম গানই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমার স্পেশালি বাংলা রক মিউজিক, অলটারনেটিভ রক মিউজিক ও ওয়েস্টার্ন রক মিউজিক শুনতে আমার ভীষণ ভালো লাগে বিশেষ করে ওদের পিয়ানোর আওয়াজটা। 


লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনি গত বছর পুজোর সময় 'ফিরবি চল' নামের একটি ইনডিপেনডেন্ট মিউজিক নিয়ে কাজ করেছিলেন। বাংলা ইনডিপেনডেন্ট মিউজিকের অবস্থা নিয়ে আপনি কী বলতে চান?

রণজয় ভট্টাচার্য- ইনডিপেনডেন্ট মিউজিকের অবস্থা এখন খুবই ভালো। প্রচুর নতুন নতুন ভালো কাজ হচ্ছে। সবচেয়ে ভালো কথা হলো মানুষ আবারো নতুন করে ইনডিপেনডেন্ট মিউজিক শোনার দিকে ঝুঁকছে। ইনডিপেনডেন্ট মিউজিকে তোমার সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা আছে। তুমি গানটা যেমন ভাবে করতে চাও ঠিক তেমন ভাবেই করতে পারো। যেটা বেশিরভাগ ফিল্মের ক্ষেত্রে হয়না। ফিল্মের গানের ক্ষেত্রে অনেক কিছু মাথায় রেখে গানটা বানাতে হয় যেমন সিনেমার পরিস্থিতি বোঝা, গায়ক-গায়িকা নির্বাচন করা। আমি যেভাবে গানটি ভাবছি সেভাবে হয়তো করতে পারছি না গল্পের কনস্ট্রেন্টের ব্যাপারের জন্য। কিন্তু  ইনডিপেনডেন্ট মিউজিকের ক্ষেত্রে কনস্ট্রেন্টের কোনো ব্যাপার নেই। এই যে মানুষ এখন নতুন করে ইনডিপেনডেন্ট মিউজিকের দিকে ঝুঁকছে, এটা একটা খুবই পজিটিভ লক্ষণ। 

লিটারেসি প্যারাডাইস- এই বছর আপনি আর কোন কোন ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করতে চলেছেন?  

রণজয় ভট্টাচার্য- 'হৃদপিণ্ড' ছবির গান তো আপাতত রিলিজ করে গেছে৷ আর 'আবার বছর কুড়ি পরে' ছবিরও মিউজিকের কাজ চলছে।যেটা আমার কাছে অত্যন্ত বড়ো একটি প্রজেক্ট।এছাড়াও আরো দুটো বাংলা ছবি এবং একটি ওয়েব সিরিজে কাজ করছি৷ এখানে বসেই মুম্বাইয়ের অ্যাডভার্টাইজমেন্টের কাজ চলছে। তাছাড়াও একটি হিন্দি সিঙ্গেল গান আসছে খুব তাড়াতাড়ি। এটা মুম্বাইয়ের কাজ৷ এর পাশাপাশি নিজের ইনডিপেনডেন্ট গান নিয়েও কাজ করছি।

 
প্রতিবেদন- সুমিত দে 

No comments