Header Ads

ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো ইতিহাসে প্রথমবার হতে চলেছে ভিন্ন নিয়মে


কলকাতার ঐতিহ্যবাহী সাবেকি দুর্গাপুজো হলো শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো৷ ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের পর রাজা নবকৃষ্ণ দেব শোভাবাজার রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। চলতি বছরে ২৬৩ তম বর্ষে পদার্পণ করতে চলেছে এই পুজো। প্রতি বছর ধূমধাম করে পালিত হয় এই দুর্গাপুজো। 


উত্তর কলকাতার অন্যতম বনেদি বাড়ির পুজো হলো শোভাবাজার রাজবাড়ি। স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণও একবার এসেছিলেন এ বাড়ির পুজোতে। এখানকার পুজোতে প্রতিমার বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। এ বাড়িতে মা দুর্গাকে বৈষ্ণবী রূপে পুজো করা হয়৷ এই বনেদি বাড়ির পুজোতে প্রধান প্রসাদ হিসেবে অন্নভোগ বানানো হয়। এই অন্নভোগে ব্যবহৃত হয় গোটা ফল, গোটা শাক-সব্জী, গজা, চাল, মতিচুর ও তেত্রিশ রকমের মিষ্টি। কামানের তোপ দেগে সেকেলে সন্ধিপুজোর সূচনা করা হতো। উল্টো রথের দিন করা হতো কাঠামো পুজো। সে যুগে একটি রৌপ্য কারুকার্য নির্মিত সোনার সিংহাসনে মা দুর্গার প্রতিমাকে বসানো হতো। রাজবাড়িতে পশুবলিরও তখন চল ছিল৷ দশমীর দিন নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে পালন করা হতো দশমীর রীতি। 

কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে পুজোর বোধন হতো৷ সেই দিন থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত চণ্ডীপাঠের আসর বসানো হতো দালানবাড়িতে। বর্তমান সময়ে শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো বহুধা ভাগে বিভক্ত হলেও সাবেকি রীতি মেনে আজও পুজো চলে। ২০২০ তে করোনা সংক্রমণের জেরে এবার নিয়মকানুনের কিছু পরিবর্তন ঘটতে চলেছে এই পুজোতে। ইতিহাসে এই প্রথমবার শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো সম্পন্ন হতে চলেছে ভিন্ন রীতিতে। 

রাজবাড়ির বাইরে যে মাঠে ভিড় জমতো, সেই মাঠে ভিড় করা যাবে না দর্শকদের। রাজবাড়ির ভেতরে ঠাকুর দালানের সামনে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। কেবল বাড়ির সদস্যরাই উপস্থিত থাকবেন ঠাকুর দালানে। সেইসঙ্গে তাদের সাথে রাখা হবে পরিচয় পত্র। একসাথে একাধিক সাংবাদিকদেরও ঢুকতে দেওয়া হবেনা। কমপক্ষে তিনজন সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারে পুজো প্রাঙ্গণে তার বেশি নয়। 

ঠাকুর নিয়ে আসা এবং ভাসানের সময় বত্রিশ জন কুলির প্রয়োজন হয়। এই বছর স্বাস্থ্যবিধি মেনে হ্রাস করা হচ্ছে এই সংখ্যা। ঠাকুর সামলানোর দায়িত্ব এ বছর তুলে দেওয়া হবে শুধু একজন ব্যক্তির ওপর। পুজোর আচার-আচরণেও বদল আনা হচ্ছে। প্রতি বছর পুজোতে দেবীকে ২৫ রকমের মিষ্টি অর্পণ করা হয়৷ রাজবাড়ির হেঁসেলে বানানো হয় এই মিষ্টি। এই বছর মিষ্টি তালিকাটা একেবারেই ক্ষুদ্র করা হবে। কোনো ঢাকিও রাখা হবেনা এই বছরের পুজোতে। সাউণ্ড সিস্টেমের মাধ্যমে মাইকে বাজানো হবে ঢাকের আওয়াজ। 

কলকাতার বড়ো বড়ো পুজোর মধ্যে শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজোও বিখ্যাত। কলকাতার অনেক পুজো কমিটি যেখানে হিমশিম খাচ্ছেন কীভাবে পুজোর নিয়মবিধি বানানো হবে সেখানে শোভাবাজার রাজবাড়ি এক লহমায় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। এই বছর পুজোটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শক ছাড়া সম্পন্ন করা হলেও আগামী বছর থেকে আবারো দুর্গাপুজো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে  

No comments