আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্যের দূর্দিনেও মাত্র চার টাকাতে মিষ্টি বিক্রি করেন যিনি
মিষ্টি খেতে কম-বেশি সকল বাঙালিই ভালোবাসেন। রসগোল্লা, জিলিপি, ল্যাংচার স্বাদ অতুলনীয়। বাংলার মিষ্টির এক জগৎজোড়া খ্যাতি রয়েছে। উৎসব অনুষ্ঠানে বাঙালির শেষ পাতে মিষ্টি না পড়লে পুরো ভোজন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বাংলার অর্থনীতির অন্যতম বস্তু হলো মিষ্টি। দেশ-বিদেশে বাংলার মিষ্টি এক্সপোর্ট হওয়ার জন্য বাংলাতে অনেক ইউরো ও ডলার ইনকাম হয়। বাংলার প্রত্যেক জেলায় এক এক রকম স্বাদের মিষ্টি পাওয়া যায়।
একটা সময় ছিল যখন এক টাকা বা দু টাকায় মিষ্টি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন অত্যধিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য এতো কম দামে মিষ্টি সচরাচর পাওয়া যায়না এখন সাত টাকা বা আট টাকার নীচে এক পিস মিষ্টিও পাওয়া যায় না৷ আমরা মিষ্টি দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য অকারণে ময়রাদের দোষারোপ করি। আসলে দোষটা তাদের নয়। দেশের দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দেশের সরকার। তারা যখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করছে তখন ময়রাদেরও মিষ্টির দাম বাড়াতে হবে। নাহলে ব্যবসার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হবে তাদের৷
বর্তমান সময়টা ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। ব্যবসাতে টিকে থাকাটা এখন অনেকটা চ্যালেঞ্জের মতো। যদিও অনেক বাঙালি ব্যবসায়ী নিজেদের সাইকোলজিকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসাতে সফল হচ্ছেন। যে-কোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে মার্কেটিং হলো আসল কথা৷ তবে মিষ্টি ব্যবসার ক্ষেত্রে বাঙালি ময়রারা মার্কেটিং এর ব্যাপারে অত্যন্ত দক্ষ।
আমাদের সমাজের অনেক মানুষ মিষ্টি দোকান বা মিষ্টি ডেলিভারির কাজকে ব্যবসা বলে স্বীকার করতে চান না। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না মিষ্টি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বাংলার শহরগুলোতে গড়ে উঠেছে মিষ্টি হাব। যেখানে বার্ষিক ইনকাম হয় কোটি কোটি টাকা। বাংলার ব্যবসাকে সমৃদ্ধ করার পিছনে মিষ্টির যথেষ্ট অবদান আছে। বহু কালোবাজারি আজকাল নামীদামী মিষ্টির দোকানের নাম নকল করে নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করেন৷ যেটা বাংলাকে আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।
আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দূর্দিনে এখনও অনেক ব্যক্তি সততার সাথে স্বল্প মূল্যে কিছু দ্রব্য বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেন। এমনই একজন ব্যক্তি হলেন মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরের ডাহাপাড়ার বাসিন্দা শ্রী নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ। যিনি পেশায় একজন ময়রা৷ তিনি সাইকেলে করে যে-কোনো মিষ্টি বাড়িতে বাড়িতে কড়া নেড়ে মাত্র চার টাকায় বিক্রি করে থাকেন। তার এই কাজের প্রশংসা করেন ডাহাপাড়ার লোকেরা। তার নিজের হাতে বানানো মিষ্টির স্বাদ ও গন্ধও নজরকাড়া৷
বহরমপুর শহরের স্থানীয়দের মতে বহরমপুরে সাইকেলে করে বা অন্যান্য যানবাহনে ঘরে ঘরে মিষ্টি পৌঁছে দেওয়ার একটা চল আছে। ওখানে মিষ্টি ব্যবসা এভাবেই সাধারণত চলে থাকে৷ সবার মিষ্টির দাম এক নয়। একমাত্র ব্যতিক্রম নারায়ণ বাবু, যিনি মাত্র চার টাকাতে সবরকম মিষ্টি বিক্রি করে থাকেন। এতে তার খুব একটা অসুবিধা হয়না। কোনোরকমে স্বাচ্ছন্দ্যেই মিষ্টি ব্যবসা করে সংসার চলছে তার৷
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment