Header Ads

কলকাতার যান্ত্রিক জীবন থেকে যারা বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন || প্রথম পর্ব


এককালে সূদুর রাশিয়া থেকে লন্ডন সবারই খুব প্রিয় শহর ছিল কলকাতা। হবে নাই বা কেন। সেকেলে কলকাতার মতো শহর ভারতে দুটো ছিল না৷ থাকলেও কলকাতার সাথে টেক্কা দেওয়া সেইসব শহরের স্বপ্নই থেকে যেত। অর্থনৈতিক অবস্থায় তখন বিলেতও পেরে উঠতো না কলকাতাকে। তাই তো পর্তুগীজ, ফরাসি ও ব্রিটিশরা বাণিজ্যিক স্বার্থে কলকাতায় প্রথম ঔপনিবেশিক বসতি স্থাপন করে। বর্তমানেও কলকাতা স্বমহিমায় বিদ্যমান। তবে সেকেলের মতো আর্থিক অবস্থা এখন আর নেই। এর পিছনে অনেক রাজনৈতিক কারণ আছে। কিন্তু অন্যান্য শহরের থেকে এখনও বিভিন্ন দিক থেকে কলকাতা এগিয়ে রয়েছে। নগরায়নের উন্নয়ন হলেও সবুজ সজীবতা শহরে হ্রাস পাচ্ছে। এই সজীবতা হীন শহর ছেড়ে অনেক মহান ব্যক্তিই বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। 



আমরা ধারাবাহিক ভাবে এই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে এমন কয়েকজন ব্যক্তির কথা বলবো যারা কলকাতার যান্ত্রিক জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় 'কলের কলকাতা' নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। যে প্রবন্ধে একজন গ্রামের মানুষের চোখ  দিয়ে কলকাতার বিবরণ তুলে আনা হয়েছিল। যেখানে শহরের ক্লান্ত পরিবেশের চিত্র আঁকা হয় গ্রাম বাংলার সেই মানুষটির মাধ্যমে, যার নাম মোনা ঠাকুর। যার কাছে কলকাতাকে কলের কলকাতা মনে হয়েছিল। কলকাতার বড়ো বড়ো বাড়ি, যানবাহনের ভিড়, বিচিত্র সব যান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপ দেখে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল। সে মোটরগাড়ি বা হাওয়াগাড়িকে হুস হুস করে কলকাতার রাস্তা ধরে চলে যেতে দেখেছিল। লাইন পাতা রাস্তার ওপর দিয়ে ট্রাম চলতে দেখেছিল ঠন ঠন শব্দ তুলে। রাস্তার অজস্র মানুষের আনাগোনা দেখেছিল মোনা ঠাকুর৷ অগুনতি বাড়ি আর গাড়ি, হাজার হাজার দোকানপাট দেখে তার মনে হয়েছিল কলকাতায় কোথাও মাটি নেই, সাঁকো নেই, শুধু চুন-বালি-পাথর দিয়ে গড়া কলের এই কলকাতা। সে কোথাও খুঁজে পেলনা গ্রামের সবুজ সজীবতায় ভরা পরিবেশ৷ এই প্রবন্ধে যেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় মোনা ঠাকুরের মধ্যে নিজের মুক্তিলাভের কথা লিখেছেন। 

কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় ছাড়াও আরো অনেক মহান বাঙালি ব্যক্তি আছেন যারা কলকাতার শহরকেন্দ্রিক জীবন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন। এক এক করে সেই সমস্ত ব্যক্তিদের কথা তুলে ধরা যাক। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'আমি দেখি' কবিতা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় তিনিও কলকাতার শহরকেন্দ্রিক জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। তিনি 'আমি দেখি' কবিতায় বলেছেন "অনেক দিন জঙ্গলে যাওয়া হয় নি, জঙ্গলে দিন যাপন করা হয়নি৷ বহুদিন ধরে এই শহরেই আছি, শহরে সবুজের ভীষণ অভাব।" 

লেখক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় কবেই কলকাতা ছেড়ে বিভিন্ন জায়গার জঙ্গলে ভ্রমণ করে গল্প ও উপন্যাস লিখতেন। শহুরে জীবন ছেড়ে প্রকৃতির সবুজ সজীবতাকে তিনি বেছে নেন৷ প্রকৃতি যেন হাতছানি দিয়ে তাঁকে ডাকতো৷ তিনি জঙ্গল কতটা ভালোবাসতেন তা আরণ্যক ও চাঁদের পাহাড় উপন্যাসেই স্পষ্ট। কবি সমর সেন তিনিও কলকাতার যান্ত্রিক জীবন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন৷ তিনি প্রবলভাবে নগর জীবনের ক্লেদ ও ক্লান্তি, মধ্যবিত্ত জীবনের প্রতি অবজ্ঞা এবং সংগ্রামী গণচেতনাকে কাব্যে রূপ দিয়েছেন৷ লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও কলকাতার শহুরে যান্ত্রিক জীবন পছন্দ করতেন না। তাঁর লেখা 'কলকাতার জঙ্গলে' উপন্যাসে  এর স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। কবি নবারুণ ভট্টাচার্য, সুবিমল বসু, সুভাষ ঘোষ সকলেই কলকাতাকেন্দ্রিক জীবনে ক্লান্তি অনুভব করেছিলেন। (চলবে) 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments