"রেডিওতে বাংলা গান না বাজানোর ফলে নতুন শিল্পীদের গান মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে না"- বিস্ফোরক জনপ্রিয় গায়িকা মধুরা ভট্টাচার্য ও উজ্জয়িনী মুখার্জী
রেডিওতে বাংলা গান না চালানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ধীরে ধীরে বাংলার বেশিরভাগ সঙ্গীতশিল্পীই মুখ খুলছেন৷ বাংলা শিল্পী পক্ষের ডাকে শুরু হয়েছে এই প্রতিবাদ। সোশ্যাল মিডিয়াতে শিল্পী থেকে শ্রোতা সকলেই মিলিত ভাবে প্রতিবাদ করছেন। রেডিওর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শ্রোতারা বাংলা গানের অনুরোধ করছেন৷ তা সত্বেও রেডিওতে বাজানো হচ্ছে না বাংলা গান। বেশ কয়েকজন শ্রোতাদের অভিযোগ বাংলা গানের অনুরোধ করলেই রেডিও চ্যানেল থেকে নাকি তাকে ব্লক করা হচ্ছে। রেডিওর সাথে যুক্ত অনেক ব্যক্তি শ্রোতাদের নাম না করে সরাসরি বলে দিচ্ছেন রেডিওতে বাংলা গান শোনার দরকার হলে নিজে রেডিও চ্যানেল বানাও। রেডিওর এমন খারাপ আচরণে খুশী নন কোনো সচেতন বাঙালি।
হিন্দি ভাষার আগ্রাসন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে বাংলার মাটিতে৷ রেডিও হোক বা টেলিভিশন প্রতিটি জায়গাতে পড়ে পড়ে মার খাচ্ছে বাংলা মায়ের গান। যা একজন প্রকৃত বাঙালির কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এককালে সব রেডিও চ্যানেলে বাংলা ব্যান্ডের গান, মৌলিক গান বাজতো এমনকি সেই ব্যান্ড তৈরি বা মৌলিক গানের নেপথ্যে গল্পও বলা হতো। আজকে কোথাও না কোথাও সেই দিনগুলো আমরা একেবারেই হারিয়ে ফেলেছি।
এবার রেডিও এফএম চ্যানেলে বাংলা গানকে বঞ্চিত রাখার বিরুদ্ধে মুখ খুললেন এ প্রজন্মের দুই জনপ্রিয় গায়িকা উজ্জয়িনী মুখার্জী ও মধুরা ভট্টাচার্য। বাংলা পক্ষকে সমর্থন জানিয়ে তাঁরা রেডিওতে বাংলা গানের অবস্থা, কীভাবে সেখানে বাংলা গান বঞ্চিত আছে, বাঙালি হিসেবে বাংলা গানের প্রতি আমাদের কতটা দায়বদ্ধতা থাকা উচিৎ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে তাঁরা তুলে ধরেছেন।
উজ্জয়িনী মুখার্জী জানান "বাংলা পক্ষের কারণে আবার বাংলা গান নিয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছি। আমি স্কুল জীবনে রেডিওতে বাংলা গান শুনেই বড়ো হয়েছি। তখন ১০৬.২ আমার এফএমে সারাদিন বাংলা গান হতো। তবে বাংলা সিনেমার গান নয় বরং বাঙালি শিল্পীদের মৌলিক গান৷ আমি ছোটো থেকেই লোপাদি, রূপঙ্করদা, শুভমিতাদি, শ্রীকান্তদার গান শুনে বড়ো হয়েছি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের প্রজন্ম তাদের মতো সুযোগ আর পাচ্ছে কই? আমাদের কন্টেন্ট প্রচারের অভাবে সুযোগ পাচ্ছে না মানুষের কাছে পৌঁছানোর। যেটা আগে আমার সিনিয়ররা পেয়েছেন। কেবল ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব নয় তার জন্য রেডিও স্টেশনগুলিকে খুব প্রয়োজন। আমি জানি রেডিও স্টেশনগুলির ওপর হিন্দি গান বাজানো নিয়ে অনেকরকম চাপ দেয় তাদের হেডঅফিস। কিন্তু তাও আমি অনুরোধ করবো বাংলা ভাষা, বাংলা গানকে বাঁচাতে আপনারা কিছুটা হলেও বাংলা গান বাজান।"
উজ্জয়িনী মুখার্জীর পাশাপাশি মধুরা ভট্টাচার্য জানান "আমরা অনেকদিন ধরেই এই লড়াই লড়ছি। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। মানুষজন এখন অনেকেই বলেন বাংলায় নাকি ভালো গান হচ্ছে না৷ কথাটা একদমই ভুল৷ এখন প্রচুর নতুন বাংলা গান নিয়ে কাজ হচ্ছে। এ প্রজন্মের অনেক শিল্পীই আছেন যারা নতুন নতুন গানের মাধ্যমে নিজের প্রতিভা কে তুলে ধরছে। কিন্তু প্রচারের অভাবে তা সকলের কাছে পৌঁছচ্ছে না। আমি নিজের গান রিলিজের সময়ও দেখেছি প্রচারের অভাবে মানুষজন জানলোই না গানটির ব্যাপারে। নিজের গান প্রচারের জন্য রেডিও চ্যানেলে কথা বলেছি কিন্তু তারাও তাদের সীমাবদ্ধতার জন্য সেই গান বাজাতে পারেনি৷ তাই তাদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, আপনারা বাংলায় রেডিও চ্যানেল চালিয়ে বাংলা গান এত কম চালালে কিভাবে হবে বলুন তো? আমাদের গান ও আমাদের ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে বাংলা গানের প্রচার একান্ত প্রয়োজন। আমি সকল শ্রোতাদেরও বলবো আপনারা বাংলা গান শোনার জন্য রেডিও চ্যানেলগুলোকে অনুরোধ জানান তাহলে নিশ্চয় বাংলা গান বাজবে।"
প্রতিদিন এভাবে বহু শিল্পী রেডিওতে বাংলা গানের বাস্তবতা নিয়ে একান্তে কথা বলছেন। এই কথাগুলো সকল বাঙালির জানা উচিৎ। আমাদের ঘরের কত কত ছেলেমেয়ে বাংলা ব্যান্ড নিয়ে স্বপ্ন দেখে, কত মানুষ বাংলা লোকগান নিয়ে স্বপ্ন দেখে, কত মানুষ বাংলা গানকে আঁকড়ে ধরে সারাটা জীবন অতিক্রম করে তারপরেও আমরা কী একবারও ভাবতে পারিনা তাদের কথা? আজকে বাংলা গানকে যখন অবজ্ঞা করা হচ্ছে তারপরেও বাঙালির একাংশ অজান্তেই হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের শিকার হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে কবে বাঙালি ফিরে আসবে তা সময়ই বলবে।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment