শীতল শহরের গল্প, যে দশটি বাংলা ছবিতে দার্জিলিং ধরা দিয়েছে অচেনা হয়ে
বাংলার শৈলশহর দার্জিলিং। সবুজ প্রকৃতি, পাহাড়ি ঝর্ণা, ঠান্ডা হিমেল পরিবেশ প্রাণ জুড়িয়ে দেয় প্রতিটি মানুষের। একগুচ্ছ মায়া জড়িয়ে আছে দার্জিলিং এর আকাশে বাতাসে। বাংলা মায়ের এক অপরূপ বৈচিত্র্যময় স্থান হলো দার্জিলিং। দেশ-বিদেশ থেকে সারা বছর এখানে ভিড় করেন বহু পর্যটক। বাংলা চলচ্চিত্রে ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলে দার্জিলিং উত্তরের সুন্দরী কন্যার মতো উঠে এসেছে। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা তুলে ধরবো এমন দশটি বাংলা ছবির নাম যে ছবিগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে ওটা দার্জিলিং।
১.ছায়া ও ছবি- কৌশিক গাঙ্গুলী পরিচালিত এই ছবিতে দার্জিলিং যেন অচেনা দার্জিলিং হয়ে দৃশ্যপটে ধরা দিয়েছে। দার্জিলিং এর সংস্কৃতি, মানুষের জীবনযাত্রা, যাতায়াত ব্যবস্থা, আচার আচরণ খুব সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে ছবিতে। চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো দার্জিলিং এর অপূর্ব নান্দনিক স্থানগুলোর দর্শন মেলে এই ছবির মধ্যে।
২.ববির বন্ধুরা- সুদীপা মুখোপাধ্যায় পরিচালিত এই ছবিটিও শ্যুটিং হয় দার্জিলিং এ। একটি বাচ্চা ছেলের কল্পনায় অত্যন্ত যত্ন সহকারে দার্জিলিং এর প্রতিটি নৈসর্গিক দৃশ্যের মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে এ ছবিতে। পাহাড়ি জঙ্গলের ওপর অভূতপূর্ব ড্রোনের ব্যবহারে জীবন্ত দার্জিলিং ফুটে উঠেছে ববির বন্ধুরা ছবিতে।
৩.ফাইনালি ভালোবাসা- অঞ্জন দত্ত পরিচালিত একটি অন্যরকম প্রেমের ছবি হলো ফাইনালি ভালোবাসা। যে ছবিটিও শ্যুটিং হয়েছে দার্জিলিং শহরে। পাহাড়ি রাস্তা, ঘরের উঠোন, পাহাড়ি বাড়িগুলোর ভেতরের সাজসজ্জা, সবুজ জঙ্গল সুন্দর করে ছবির চিত্রপটে প্রস্ফুটিত হয়েছে। ছবির ঘটনাচক্রেও লেখা হয়েছিল দার্জিলিং এর কথা।
৪.কেয়ার অফ স্যার- এক অন্ধ শিক্ষকের দিনযাপন এ ছবির মূল বিষয়বস্তু। এ ছবিটিও পরিচালনা করেছেন কৌশিক গাঙ্গুলী। তিনি যেহেতু পাহাড় দারুণ ভালোবাসেন তাই বেশিরভাগ ছবির চিত্রনাট্যে কোনো না কোনো ভাবে জড়িয়ে যায় দার্জিলিং। বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির একটা বিরাট অংশের ছবির লোকেশন হিসেবে প্রথম পছন্দ দার্জিলিং। এ ছবিতে একটু আলাদা ভাবে চিত্রনাট্যে দার্জিলিং এর দেখা মেলে৷
৫.চুপকথা- কেবল বৈচিত্র্যময় পরিবেশ নয়, গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো স্থানেরও অভাব নেই দার্জিলিং এ। ভৌতিক ছবি শ্যুটিং এর জন্য উপযুক্ত শৈলশহর হলো দার্জিলিং। ঋক বসু পরিচালিত চুপকথা ছবিতে শিহরণ জাগিয়েছে দার্জিলিং। এক অচেনা দার্জিলিং উঠে এসেছে এ ছবিতে।
৬.খাদ- কৌশিক গাঙ্গুলী পরিচালিত খাদ ছবিতে দার্জিলিং এর পাহাড়ি দৃশ্য হৃদয় তোলপাড় করার মতো। কয়েকজন ব্যক্তির পাহাড়ের খাদে হারিয়ে যাওয়ার পর আবারো জনজীবনে ফিরে আসার গল্প তুলে ধরা হয় খাদ ছবিতে।
৭.যকের ধন- সায়ন্তন ঘোষাল পরিচালিত গোয়েন্দানির্ভর ছবি হলো যকের ধন। যে সিনেমার বেশিরভাগ শ্যুটিং হয়েছে দার্জিলিং এ। রহস্য-রোমাঞ্চকর ছবির জন্যও যে দার্জিলিং চমকপ্রদ তা যকের ধন ছবিটি দেখলেই বোঝা যায়৷
৮.সোনার পাহাড়- এক মা ও ছেলের সোনার পাহাড় খুঁজতে যাওয়ার গল্প হলো এই ছবি৷ পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত সোনার পাহাড়ে রূপকথার জগৎ হিসেবে দার্জিলিং কে কল্পনা করা হয়েছে। ছবির গল্পে মুখ্য চরিত্রে এক বৃদ্ধা মায়ের কথা বলা হয়েছে। যিনি গল্প লিখতে ভালোবাসেন। তার গল্প লেখার প্লট হিসেবেও দার্জিলিং উঠে এসেছে।
৯.হাইওয়ে- একটি মনোমুগ্ধকর সম্পর্কের ছবি হলো হাইওয়ে। এ ছবিরও শ্যুটিং হয় দার্জিলিং এ৷ সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত এ ছবিতে দার্জিলিং কে অন্য চোখে পরিদর্শন করার সুযোগ আছে। টয় ট্রেন যাওয়ার দৃশ্য, টয় ট্রেনে কোনো এক রকস্টারের আপন মনে গান গাওয়া, পাহাড়ি রাস্তায় হেঁটে চলা, চা বাগানের দৃশ্যের মধ্য দিয়ে শৈল্যরানীর বিশেষ চিত্র আঁকা হয়েছে।
১০.অর্জুন- প্রেম প্রকাশ মোদী পরিচালিত এ ছবিতে রোমাঞ্চকর দৃশ্যের সঙ্গে আপনার পরিচয় ঘটতে পারে দার্জিলিং এর৷ বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধ সন্যাসীর আনাগোনা এ ছবির দেখার মতো দৃশ্য। তাছাড়াও ছবির গল্পে যে জায়গাগুলোর কথা বর্নণা আছে তাও আশ্চর্যভাবে ধরা পড়েছে ছবির মধ্যে।
শুধু এই দশটি ছবিই নয় পুরানো ও নতুন অসংখ্য ছবির শ্যুটিং হয়েছে দার্জিলিং এ। পুরানো ছবিতেও যে দার্জিলিং কে দেখতে খারাপ লাগতো এটাও বলা ভুল হবে। সেকেলের বহু ছবিতে দার্জিলিং এর চিত্র উঠে এসেছে। পুরানো কিছু ছবির দার্জিলিং ডায়েরিজ নিয়ে অন্য কোনো প্রতিবেদনে আলোচনা করা হবে। আপাতত এই প্রতিবেদনে আমরা কেবল নতুন ছবির কথাই একমাত্র তুলে ধরলাম৷ বিভিন্ন লোকের ভিন্ন মত হতে পারে ছবিগুলোর বিচারে৷ কিন্তু আমাদের মতামত অনুযায়ী দার্জিলিং এ শ্যুটিং হওয়া সেরা দশটি ছবি হিসেবে এই ছবিগুলোকেই সেরা মনে হয়েছে। শুধু বাংলা ছবিই নয়, দেশী-বিদেশি বিভিন্ন বিজাতীয় ভাষার শ্যুটিংও হয়েছে দার্জিলিং এ। সারা বছর ধরে এখানে শত শত ছবির শ্যুটিং হয়। বেশিরভাগ চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের অত্যন্ত প্রিয় জায়গা হলো দার্জিলিং।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment