Header Ads

বাংলার বাইক অ্যাম্বুলেন্স দাদা


দিন নেই রাত নেই, ফোন আসছেই মালবাজারের রাজাডাঙার করিমুল হকের কাছে। কে তিনি? বিধায়ক? সাংসদ? নেতা-মন্ত্রী? আজ্ঞে না, ১৯৯৮ সাল থেকে আশেপাশের অন্তত 20টা গ্রামের অসময়ের বন্ধু পদ্মশ্রী  করিমুল হক। 


গল্পটা শুরু থেকেই বলি। সালটা ১৯৯৫, নিজের অসুস্থা মা কে শুধু অ্যাম্বুলেন্স এর অভাবে বাঁচাতে পারেন নি করিমুল। বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তাঁর মা। ছেলে প্রতিজ্ঞা করেন যে আর কাউকে তিনি অ্যাম্বুলেন্স এর অভাবে মরতে দেবেননা।

একদিন তাঁর এক সহকর্মী প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে নিজের পিঠে বেঁধে বাইকে চড়িয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দেন করিমুল। প্রাণ বেঁচে যায় সেই বন্ধুর। তারপর থেকে আর পিছনে তাকান নি এলাকার প্রাণপ্ৰিয় "বাইক অ্যাম্বুলেন্স দাদা"। ২০১৯ পর্যন্ত নিদেনপক্ষে ৫০০০ রোগীকে বিনামূল্যে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন করিমুল। এখন তাঁর বাইকে যুক্ত হয়েছে একটা carriage, যেটা কার্যত একটা বিছানা !! আর পাঁচটা অ্যাম্বুলেন্স এর মতোই তাঁর বাইক অ্যাম্বুলেন্স এও রয়েছে নীল রঙের ঘূর্ণিয়মান আলো, রয়েছে হুটার। এই অসাধারণ যান যে কত মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। 

পাশের গ্রামের শংকর রায়ের কথায় "করিমুলদা আমাদের কাছে দেবতার সমান, আমাদের পরিবারের তিন জনকে বাঁচিয়েছে করিমুলদা।" আরেক গ্রামবাসী সাইরুন বিবি জানান, "আমার ছেলেটার জ্বর আর তড়কা, ওর বয়স তখন সাড়ে তিন, করিমুলদা এগিয়ে না এলে বোধহয় ওকে বাঁচাতেই পারতাম না।" 

করিমুলবাবুর গোটা পরিবারই এখন এই বাইক অ্যাম্বুলেন্সে যুক্ত। করিমুলবাবু বলেন "আমি চাই, আমার ছেলে আমার পরে এই অ্যাম্বুলেন্স চালু রাখুক।" পাশে দাঁড়িয়ে মিষ্টি লাজুক হাসিতে সম্মতি জানায় ছেলে। বাড়ির সবাই গর্বিত করিমুলবাবুর এই আশ্চর্য কার্যকলাপে। বাঁধা দেওয়া তো দূরের কথা, সার্বিক ও সক্রিয় সহযোগিতা দিয়ে তাঁরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এই মহান মানুষটিকে। "অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়নি কখনো?" এই prshner উত্তরে একগাল হেসে করিমুলবাবুর উত্তর "হয়েছে তো, তবে সেটা মানুষের থেকে নয়। বেশ কয়েকবার বুনো বাইসন আর হাতির পাল পথ আটকে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া আমাদের এই তরাই অঞ্চলে বৃষ্টি তো প্রবল। কাজেই বর্ষাকালটায় বেশ কষ্ট হয় এই তিনচাকার বাইক চালাতে। ছোট ছোট নালাগুলোও তখন যেন বড় নদী।" 

২০১৭ সালে ভারত সরকার তাঁকে এই অনবদ্য সমাজসেবার স্বীকৃতি হিসাবে ভূষিত করেছেন পদ্মশ্রী পুরস্কারে। তাতে অবশ্য কর্মসূচিতে বা জীবনযাত্রায় কোনও পার্থক্য আসে নি করিমুলের। আজও তিনি আপামর মানুষের কাছে এক জীবন্ত দেবদূত, এক অলৌকিক ত্রাতা।

প্রতিবেদন- প্রবাল চক্রবর্তী

No comments