Header Ads

লকডাউনে মালদা শহরে বইদাতার কাজ করে চলেছেন গ্রন্থগারিক তুষার মণ্ডল


লাইব্রেরিতে বসে বই পড়তে অনেকেই ভালোবাসেন। মনের মতো বই পড়ার উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান হলো যে-কোনো লাইব্রেরি। জ্ঞান আহরণের জন্য বিশাল বইয়ের ভাণ্ডার সজ্জিত থাকে লাইব্রেরিতে। প্রতিদিন লাইব্রেরিতে অজস্র ছেলেমেয়েরা বই পড়তে, বই নিয়ে আড্ডা দিতে ও কোনো একটা প্রজেক্টের কাজে ভিড় করে। কিন্তু লকডাউনের সময়ে বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত পাঠাগার। স্বাভাবিক ভাবেই অফলাইনে বই পড়া জটিল হয়ে দাঁড়ালো। কাজেই বই পড়ার দ্বিতীয় উপায় হিসেবে সকলকেই পিডিএফ বই বেছে নিতে হলো। তবে অফলাইন বই পড়ে যে স্বাদ পাওয়া যায় তা একেবারেই অনলাইন বুকে নেই। তবুও লকডাউনের সময়ে পিডিএফ বুককেই আঁকড়ে ধরে আসল বই পড়ার মজা সামলাতে হয়েছে বইপ্রেমীদের।  


লকডাউনে বই পড়ার অভ্যাস এবং বইপ্রেমকে বাঁচিয়ে রাখতে এক উদ্ভাবনী দায়িত্ব নেন মালদা শহরের একজন জেলা গ্রন্থগারিক। যার নাম তুষার মন্ডল।  লকডাউনের কারণে জেলা গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বেতনভুক্ত অবস্থায় দিন কাটছিল তার। মালদা জেলা গ্রন্থাগার তার দরজা বন্ধ করে দিলেও এই উদ্যোগী গ্রন্থাগারিক সদস্যরা যে বইগুলি পড়তে চেয়েছিল তার পিডিএফ সংস্করণ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং হোয়াটস অ্যাপে প্রেরণ শুরু করে।   
          
লকডাউন শুরু হওয়ার কয়েকদিন পর তুষারবাবু নিয়মিত পাঠকদের সঙ্গে তার লাইব্রেরিতে এসে আলোচনা করেন কয়েকদিনের জন্য একটি ই-লাইব্রেরি বানানো নিয়ে। তিনি স্পষ্টই বুঝতে পারেন কোভিড-১৯ এর কারণবশত যেহেতু পাঠাগার বন্ধ, তাই আগ্রহী পাঠকদের ই-রুট নিতে হবে। বইপ্রেমীদের একটি ছোট্ট অংশের সহায়তায় তিনি একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছিলেন। এই গ্রুপটির মাধ্যমে পিডিএফ ফাইল বানানোর কাজ শুরু করে দেওয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠকের সংখ্যা ছিল হাতে গোণা। যদিও এই অল্প পাঠকদের নিয়ে অতোটা অসুবিধা হয়নি কেননা ঐ অল্প সংখ্যক পাঠকই বহু মানুষকে প্ররোচিত করে গ্রুপটিকে অনেকটাই বড় করে তুলেছে।            
                                       
জেলার গ্রন্থগারিকরা প্রত্যহ এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিভিন্ন সংবাদপত্রের ই-সংস্করণগুলো আপলোড করে পাঠকদের পাঠাতে শুরু করেন। এক সপ্তাহের মধ্যে তুষারবাবু বইগুলো স্ক্যান করে পিডিএফ সংস্করণে রূপান্তরিত করেন। পাঠকদের অনুরোধে তাল মিলিয়ে তিনি পিডিএফগুলো আপলোড করতে থাকেন। তিনি কেবলমাত্র কপিরাইটবিহীন বইগুলোকেই পিডিএফ সংস্করণে রূপান্তরিত করেন। মে মাসে চল্লিশজন নিয়মিত পাঠকদের নিয়ে উদ্যোগটি শুরু হলেও এখন গ্রুপটির সাথে জড়িত দেড় শতাধিক সক্রিয় সদস্য। গ্রন্থাগারের ৪৫০০ সদস্যের মধ্যে ৩০০ জনেরও বেশি নিয়মিত পাঠক আপাতত যুক্ত আছেন।     
         
শুধু তুষারবাবুদের সদস্যরাই নয় তিনি এ গ্রুপে সকলকেই স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি এ কাজে এতেটাই দক্ষ যে বাংলাদেশের কয়েকটি পাঠাগার থেকেও পিডিএফ সংস্করণ সংগ্রহ করছেন। ঘটনাচক্রে মালদা জেলার গ্রন্থাগারে ৭২০০০ এর বেশি বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে যার মধ্যে ৮০০০ বই পিডিএফ সংস্করণে রূপান্তরিত হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগগ্রস্থ সময়ে তিনি ই-লাইব্রেরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তুষারবাবুর এমন কাজের জন্য কৃতজ্ঞ বহু পাঠক। অসময়ে বইদাতা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে।           
           
প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ডেস্ক 

No comments