যন্ত্রের ওপর মানুষের চরম দাসত্বের গল্প উঠে এলো পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের 'স্টাক' ছবিতে
যান্ত্রিক সভ্যতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে মানুষ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজ লাগিয়ে মানুষ বর্তমানে জীবনধারণ করছে। প্রাকৃতিক নির্জনতা থেকে মানুষ যেন এখন নিজেকে গোটাতে ব্যস্ত। যন্ত্রের ওপর মানুষের দাসত্ব চরম থেকে চরমতম আকার নিচ্ছে। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তৈরি হলো বাংলা ছবি 'স্টাক'। এটি একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি। মাত্র দশ মিনিটেই মানুষের যান্ত্রিকতার প্রতি আসক্তি অনবদ্য ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
বাংলাতে এই প্রথমবার এ আই নিয়ে তৈরি হলো ছবি। স্বনামধন্য পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের পরিচালনায় তাঁর অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পেয়েছে এই ছবি৷ মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিশিষ্ট অভিনেতা রাহুল। যান্ত্রিকতা নির্ভর জীবনযাপনকে তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে যত্ন সহকারে জাগ্রত করেছেন। একটি মানুষ ও একটি পিঁপড়ে গল্পের আসল চরিত্র। একজন মানুষ যান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিণামে একলা হয়ে পড়ে। সেই যন্ত্রময় নিঃসঙ্গতা কতটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে তারই জালবুনন হয়েছে মূল গল্পে।
স্টাক ছবির প্রসঙ্গে পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন "আমার পরিচালিত ছবি হলেও এই ছবিটি মূলত রিক সুন্দর ও রাকা চৌধুরী নামে দুই গবেষক অ্যাকাডেমিক প্রকল্পের জন্য ফিল্মটি বানাতে চেয়েছিল। রাকা এআই-তে কাজ করে এবং রিক বাংলা সাহিত্যে ভূত নিয়ে তাঁর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পেপার উপস্থাপন করার কথা ছিল। তারা তাদের পেপার সহ একটি ফিল্ম প্রদর্শন করতে চেয়েছিল এবং ধারণাটি নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। আমি এটি পছন্দ করেছি এবং অবশেষে এটি তৈরি করেছি। ছবিটি গত বছর আগস্টে ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদর্শিত হয়েছিল।"
'রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত', ও 'গোয়েন্দা'র পর তিনি বানালেন 'স্টাক'। কয়েকমাস আগে তাঁর পরিচালনায় 'ঢেউ' শিরোনামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি মুক্তি পায়। যেখানে নদীর চরে এক দম্পত্তির কুঁড়ে ঘরে সুখ খোঁজার গল্পকে তুলে ধরা হয়। সেই ছবিটিও দর্শকদের কাছে দারুণ ভাবে প্রশংসিত হয়। 'স্টাক' ছবিটি সম্পূর্ণ নির্বাক। আগে অনেক মানুষই নির্বাক ছবি দেখতে সেভাবে স্বাছন্দ্যবোধ করতেন না। ইদানীং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে শর্টফিল্মের কল্যাণে নির্বাক ছবিও মানুষ গ্রহণ করছে। নির্বাক ছবি হতে পারে নির্বাক কিন্তু একটা নির্বাক বিষয়ও অনেক কথা বলে৷ মনে রাখতে হবে আমরা বিভিন্ন চিত্র প্রদর্শনীতে যে সাইকোলজিক্যাল ছবিগুলো দেখতে পাই সেই ছবিগুলোও নির্বাক, অথচ সেই ছবির পিছনেও লুকিয়ে থাকে কোনো এক রোমহর্ষক গল্প৷
'স্টাক' ছবির গল্প অনুযায়ী দৃশ্যগুলো নির্বাক ভাবে নির্মাণ করা মোটেও সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য নিজের শ্রম ও বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে এ ছবিটিকে জীবন্ত করে তুলেছেন। এই প্রথমবার তিনি কল্পবিজ্ঞানের ওপর শর্টফিল্ম বানালেন। কল্পবিজ্ঞানের ওপর এতো উন্নতমানের ছবি এর আগে কখনো হয়নি বাংলাতে। এ ছবি নিঃসন্দেহে দশে দশ পাওয়ার মতো। যদিও কোনো চলচ্চিত্রকে নাম্বারের মাপকাঠিতে বিচার করা যায়না। ছবির বিচার হয় গল্প, অভিনয়, চিত্রনাট্য, নির্মাণশৈলী দিয়ে। এ ছবির পরিবেশ, ঘরের আসবাবপত্র, চরিত্রের পোশাকের ধরণ সবই ছবিটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। ছবিটি দেখার পর যে-কোনো দর্শকই বলতে বাধ্য হবেন এমন শর্টফিল্ম যেন বারংবার বাংলাতে হয়।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment