Header Ads

প্লে ব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের জীবনাবসান


বাঙালি প্লে ব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর আর নেই। গত সোমবার সন্ধ্যা ৬ টা ৫৫ মিনিটে প্রয়াত হলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। বহুদিন যাবৎ নন-হজকিন লিম্ফোমা ব্লাড ক্যান্সারে দীর্ঘদিন ভুগছিলেন তিনি। নন-হজকিন লিম্ফোমা ব্লাড ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ে এসেও তিনি লড়াই করেছেন জীবন-মৃত্যুর সাথে। দীর্ঘ দশ মাস ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে তাঁকে মেনে নিতে হলো পরাজয়। বাংলাদেশের গানের জগতে প্রবল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি৷ তাঁর অসংখ্য গান মানুষের মুখে মুখে ঘোরে। এন্ড্রু কিশোর সশরীরে না থাকলেও বাঙালির মধ্যে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন আজীবন। 


২০১৯ সালের ৯ ই সেপ্টেম্বর অসুস্থ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসা পাবার আশায় তিনি পাড়ি দেন সিঙ্গাপুরে। ১১ ই সেপ্টেম্বর তাঁর শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক লিম সুন থাইয়ের অধীনে তাঁর চিকিৎসা চলে। হঠাৎ একদিন তিনি জানতে পারেন তাঁর লিম্ফোমা বেঁকে গেছে। ডাক্তাররা যথাসাধ্য চেষ্টা করেও এটা সারাতে পারেননি। এ কথা জানাজানির পর এন্ড্রু কিশোর লিম সুই থাইকে জানান তিনি নিজের দেশ বাংলাদেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চান। কথামতো সামনের মাস অর্থাৎ জুনের ১১ তারিখ তিনি নিজের বাড়ি রাজশাহীতে ফিরে আসেন।রাজশাহীতে নিজের বোনের হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি৷ সোমবার আইসিইউতে তাঁকে স্থানান্তরিত করার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। অবশেষে দেশের মাটিতেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। 

বাংলা গান গেয়ে প্রায় আটবার জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি৷ তাঁর গানে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলার সঙ্গীত জগত। বহু ছবিতে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। তাঁর সর্বাধিক জনপ্রিয় গান হলো হায়রে মানুষ রঙের ফানুস, সবাই তো ভালোবাসা চায়,  জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার বুকের মধ্যে খানে, ভেঙ্গেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, ভালোবেসে গেলাম শুধু প্রভৃতি। আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে তিনি সঙ্গীতের প্রাথমিক পাঠ শুরু করেন৷ মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি নজরুল গীতি, রবীন্দ্র সঙ্গীত, আধুনিক, লোকগীতি ও দেশাত্মবোধক গানে বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন। 

এন্ড্রু কিশোর মৃত্যুর একুশ ঘন্টা আগে একটি ফেসবুক পোস্ট করেন৷ সেখানে তিনি লেখেন "এটাই আমার শেষ পোস্ট, এরপর আর কিছু বলা বা লেখার মতো মানসিক অবস্থা আমার থাকবে না। এখনও মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্ন মনে হয়, কিশোর থাকবে না অথচ আমি থাকব। মেনে নিতে পারছি না।" 

এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুতে শোক স্তব্ধ দুই বাংলার সঙ্গীত অনুরাগী মানুষেরা। অনেকে তিনি যে আর নেই, এটা মেনে নিতে পারছেন না৷ বাংলা সঙ্গীত জগতের একজন সফল তারকাকে এভাবে কেউ হারাতে চাননি। কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাসকে আমাদের মেনে নিতেই হবে। জীবন-মৃত্যু তো আর আমাদের হাতে নেই। জগতের নিয়মে যেভাবেই হোক সকলকে বিদায় নিতে হবে। তবে তিনি কোনো সাধারণ মানুষ ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন শিল্পী৷ একজন শিল্পীর এতো তাড়াতাড়ি চলে যাওয়াটা বিশ্বাসযোগ্য নহে। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments