Header Ads

"এফএম এ প্রাইম টাইমে বাংলা গান চালানো হোক", প্রতিবাদ করে বললেন সঙ্গীত শিল্পী রূপঙ্কর বাগচি


"আমি বাংলায় গান গাই, আমি আমার আমি কে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই"। সঙ্গীত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় বাংলা ভাষা ও বাংলা গানের প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে এ গান রচনা করেছেন। বড়ো আশা নিয়েই তিনি এ গান লিখেছেন। বাংলার প্রতি গভীর ভালোবাসা ছাড়া এমন গান লেখা সম্ভব নয়। বাংলার সংস্কৃতি-ঐতিহ্য বাঙালির প্রাণ। শুধু প্রতুলবাবুর গানই নয় কবিগুরুও বাংলা ভাষা নিয়ে গভীর স্বপ্ন দেখতেন। তাই তো লিখেছেন তিনি "বাঙালির ভাষা, বাঙালির আশা, সত্য হউক, সত্য হউক, হে ভগবান।" গ্রাম-বাংলার প্রাণের কবি জীবনানন্দও তো লিখেছেন "বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।" 


লোকাল ট্রেনের কামরায় বৃদ্ধ বাউল ফকির অথবা গ্রাম্য রাঙামাটির মেঠো পথে কোনো গানওয়ালা বাংলা মায়ের গান গায়। রাস্তার পাশে কোনো এক ফেরিওয়ালা বাংলা গান গেয়ে  আসবাবপত্র বিক্রি করে। কোনো এক অজ গাঁয়ের চারণ কবিও বাংলা গান নিয়ে বাঁচে। কোনো একলা পথিকেরও সঙ্গী বাংলা গান। তারপরেও আমরা বাংলা গানকে অবজ্ঞা করি। বাংলা ভাষাকে তাচ্ছিল্য করি৷ বিজাতীয় ভাষাতে স্বাছন্দ্যবোধ করি। 

বাংলার রাজধানী কলকাতার বুকে ক্রমশ স্থায়িত্ব হারাচ্ছে বাংলা ভাষা। বাংলার রেডিও স্টেশনগুলোর সঞ্চালকরা হিন্দিতে সঞ্চালন করে জনসাধারণকে হিন্দি গান শোনাচ্ছে। বাঙালি দু'হাত ভরে গ্রহণ করেও নিচ্ছে সেই গান৷ বাঙালির অজান্তেই হারিয়ে যাচ্ছে কত শত বাংলা গান। বহু শিল্পী বাংলা গান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আর হীনমন্যতা তিলে তিলে আমাদের মেরে ফেলছে৷ বাংলার আভিজাত্যপূর্ণ সংস্কৃতি গুরুত্ব হারাচ্ছে। 

রেডিওতে বাংলা গান চলছে না, তাতে কী গান তো চলছে। সে হিন্দি হোক বা ইংরেজি গান তো চলছে। বাংলা ভাষাকে তো ভালোবাসি৷ বাঙালি হলেই যে বাংলা গান শুনতে হবে কে বলেছে? এখানেই মারাত্মক ভুল করে থাকে বাঙালিরা। বাঙালি বাংলা গান শুনলে তারই যে একদিন উপকার হবে সেই কথা তারা ভুলে যাই। বাংলা গানের সাথে বহু বাঙালির যে জীবন জড়িয়ে আছে আমরা তা এড়িয়ে যাই। যেখানে মানবিকতাও আমাদের কাছে ছোটো হয়ে যায়। 

ইদানীং বাংলা শিল্পী পক্ষ এফএম চ্যানেলে বাংলা গান না বাজানোর প্রতিবাদে সকলকে আহ্বান জানিয়েছে। তাদের প্রতিবাদে এক এক করে সোচ্চার হচ্ছেন বাঙালি শিল্পীরা। ইতিমধ্যে ভূমি ব্যান্ডের ভোক্যালিস্ট সৌমিত্র রায়, সঙ্গীত শিল্পী ইন্দ্রজিৎ দে ইন্দ্র, সৈকত বন্দোপাধ্যায় ও ক্যালকাটা ব্লুজের ভোক্যালিস্ট ইমন সেন সোচ্চার হয়েছেন প্রতিবাদে৷ শুধু এনারাই নন, মুখ খুললেন আরেক জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী রূপঙ্কর বাগচি৷ যিনি মিষ্টিসুরে সঠিক ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়াতে৷ 

রূপঙ্কর বাগচি প্রতিবাদে মুখর হয়ে বলেন "আমি বাংলা শিল্পী পক্ষের সাথে একদমই সহমত যে বাংলা এফএম রেডিও স্টেশনগুলোতে বাংলা গান বাজানো হচ্ছে না। আমার মনে হয় আমাদের সংস্কৃতি যেটাকে সংযুক্ত করে বাংলা সাহিত্য, বাংলা গান, বাংলা-বাঙালি ও বাঙালিয়ানা৷ কিন্তু বাংলার রেডিও স্টেশন সেগুলো একদমই মেনে চলছে না৷ কয়েকটি কতিপয় রেডিও চ্যানেলে হাতে গোণা বাংলা গান কিছু বাজলেও বেশিরভাগ রেডিও চ্যানেলে একেবারেই বাংলা গান চালানো হচ্ছে না৷ আমি এরকমও দেখেছি রেডিও জকিরা নিজেদের মধ্যে বাংলা পর্যন্ত বলছে না৷ তারা মূলত হিন্দিতে কথোপকথন চালায়। এই কমিউনেশনের সূত্রটা যদি পশ্চিমবঙ্গের বুকে হিন্দি হয় তাহলে সেটা বাংলার জন্য খুবই দুঃখজনক। আমরা যদি নিজের ভাষাকে ভুলে যায়, এতো দিনের সংস্কৃতিকে ভুলে যায়, এতো ছায়াছবির গান, অতুলপ্রসাদের গান, রজনীকান্তের গান, সর্বোপরি রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি এগুলোকে কীভাবে অস্বীকার করা যায়? রেডিও চ্যানেলগুলো কেন এগুলো অস্বীকার করছে আমি বুঝতে পারছি না। রেডিওতে এই গান চালালে লোকে শুনবে না এটা আমি বিশ্বাস করি না। এই গানগুলো শোনাতে হবে৷ মানুষকে শিক্ষিত করতে হবে। নিজের সংস্কৃতি সম্পর্কে সকলকে সচেতন করতে হবে। সেটা রেডিও স্টেশনগুলোই একমাত্র পারে৷ রেডিওর জকিরাই পারেন সেটা করতে। রেডিওর প্রত্যেকটি স্টেশনের যারা কর্ণধার ও রেডিও জকি তাদের অনুরোধ করবো এই ব্যাপারটি নিয়ে একটু ভাবুন৷ বাংলা গান চালানোর নির্দিষ্ট সময় করুন৷ সেটা প্রাইম টাইমে করুন৷ এই নয় যে শুধু ভোরবেলায় বা সকাল ছটা কিংবা রাত দুটোর সময়। প্রাইমে টাইমে বাংলা গান চালান। বাংলা আধুনিক গান, বাংলা ছায়াছবির গান, অতুলপ্রসাদ, দ্বীজেন্দ্র গীতি, রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি এই যে বাংলার এতো সম্ভার সেগুলো আপনারা ভুলে গেলেন। রেডিও চ্যানেলগুলো আপনারা ভুলে গেলেন দুদিন আগে ১০৬.২ এর মতো এতো বড়ো একটা এফএফ সংস্থা বন্ধ হয়ে গেল। সেখানে তাও অনেক বাংলা গান বাজতো। রেডিও জকিরাও বাংলায় কথা বলতেন৷ এটা আপনারা করবেন না। এটা আপনারা করতে পারেন না। আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি প্রতিবাদটা কোনো ঝগড়াসুলভ ভাবে নয়, বিনয়ের সাথে প্রতিবাদ করছি৷ আপনারা এই বিষয়গুলো একটু ভাবুন। বাংলা পক্ষ আজকে যে উদ্যোগটা নিয়েছে আমি পুরোপুরি সাপোর্ট করছি।" 

শিল্পীদের সম্মিলিত এই প্রতিবাদের যথেষ্ট প্রয়োজন আছে বর্তমানে। শিল্পীরা এভাবে এগিয়ে এলেই এফএফ চ্যানেলগুলো বাধ্য হবে বাংলা গান চালাতে। বাংলা মায়ের গানকে অবজ্ঞা করা সত্যিই অন্যায়। বাংলা শিল্পী পক্ষ এবং শিল্পীদের মিলিত প্রতিবাদ একদিন না একদিন সফল হবেই। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে   

No comments