Header Ads

এফ এম এ বাংলা গান ব্রাত্য রাখার বিরুদ্ধে সোচ্চার সঙ্গীত শিল্পী ইন্দ্রজিৎ দে ইন্দ্র


"এই ভাষাতেই মধুর সুরে বাজে বাঁশের বাঁশি, বাংলা আমার হৃদয়ের গান শুনতে ভালোবাসি।' আমরা বাঙালিরা মায়ের মুখে যে অক্ষর শুনে বড়ো হয়েছি তা বাংলা ভাষার অক্ষর। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। মায়ের সমতুল্য গুরুত্ব আছে মাতৃভাষার। মাকে যেমন ভালোবাসতে হবে তেমন মাতৃভাষাকেও ভালোবাসতে হবে। মাতৃভাষাতে লুকিয়ে আছে লক্ষ কোটি মায়া৷ এ মায়ার বাঁধন ভেঙ্গে ফেলা খুবই অন্যায় কাজ। মাতৃভাষার অপমান মানে মায়েরও অপমান৷ এ কথা জীবনপথে আমরা ভুলে যাই৷  আজকের যুগে আমরা অতিরিক্ত আধুনিক হতে গিয়ে  হিন্দি বা ইংরেজি গ্রহণ করি। ছেলেমেয়েদের আমরা ইংরাজি মাধ্যমে পড়াচ্ছি। হিন্দি গান শুনিয়ে তাকে বড়ো করছি। পশ্চিমী কালচার গ্রহণের কথা বলছি৷ সুনীল-মানিকের বদলে চেতন ভগতের বই পড়াচ্ছি৷ বাউল-লোকগান ছেড়ে আমরা তাদের ডিস্কো শোনাচ্ছি। জন্মের পরই উত্তর ভারতীয় সংস্কৃতি অনুকরণের দিকে আমরা ছেলেমেয়েদের ঠেলে দিচ্ছি৷ যার ফলে বাঙালির ঐতিহ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতি থেকে বেশিরভাগ বাঙালি দূরে সরে যাচ্ছে। 


আজকের বাঙালি সমাজে একজন বাঙালি বাংলা ভাষার অধিকার নিয়ে আন্দোলন করলে তাকে প্রাদেশিক অথবা বিচ্ছিন্নতবাদীর তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়। বাঙালির বাংলা ভাষার প্রতি অনীহার সুযোগ নিয়ে এখন বাংলার মাটিতে হিন্দি আগ্রাসন মাথা চাড়া দিচ্ছে। বাংলার রেডিও চ্যানেলে আগে কত রকমের বাংলা গান বাজতো৷ বাংলা ব্যান্ড, রক, রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি, আধুনিক সঙ্গীত, চলচ্চিত্র সঙ্গীত, বাংলা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, বাংলা স্বাধীন গান ও আরো কত কী।  সেই দিনগুলো আমরা হারাতে বসেছি নিজেদের সচেতনতার অভাবে৷  

এক বাঙালি ব্যক্তি বাংলা গান শুনলে অপর বাঙালি ব্যক্তি তাকে দেখে দাঁত বের করে হাসে। তাকে নিয়ে ট্রোল করে, মিম বানায়। বাংলা গান শোনাও যে বাঙালির এক গুরু দায়িত্ব সেকথা তারা ভাবে না। আপনি একটা কথা কখনো ভেবে দেখেন না এক দিকে বিজাতীয় কোনো ভাষার গান শুনলে সেই ভাষা যেমন সমৃদ্ধ হয়। তেমনই অন্য দিকে নিজের ভাষার গান না শুনলে বাংলার সঙ্গীত শিল্পীরা হতাশ হয়ে পড়ে৷ বহু শিল্পীদের বাংলা গান নিয়ে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন থাকে৷ আপনারা বাংলা গান না শুনলে সেই স্বপ্ন তাদের খানখান হয়ে যাবে। আপনাদের অপরাধে রেডিও তে চলা বাংলা গানের স্বর্ণযুগ শেষ হয়ে গেছে। প্রতিদিন রেডিও খুললেই তাতে বাংলা গান ব্রাত্য। 

এফ এম এ বাংলা গান না চালানোর প্রতিবাদে কেউ ময়দানে না নামলেও বাংলা শিল্পী পক্ষ নিজেদের মতো করে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে। তারা কয়েকজন বাঙালি শিল্পীকে খোলা চিঠি দিয়েছে। ধীরে ধীরে একের পর এক সঙ্গীত শিল্পী এ চিঠির সঠিক উত্তরও দিচ্ছেন। এফ এফ এ বাংলা গান না চালানোর প্রতিবাদে সরব হচ্ছেন অনেক শিল্পী। চিঠিগুলোর মধ্যে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে জবাব দেন ভূমি ব্যান্ডের ভোক্যালিস্ট সৌমিত্র রায়৷ এবার দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এফ এম এ বাংলা গান না চালানোর ব্যাপারে বাইটস দিলেন সঙ্গীত শিল্পী ইন্দ্রজিৎ দে ইন্দ্র। যার সঙ্গীত জীবনের পথচলা শুরু হয় জনপ্রিয় বাংলা ব্যান্ড ফসিলসের কিবোর্ড আর্টিস্ট ও মিউজিক ডিজাইনার হিসেবে। সহকারী পরিচালক হিসেবে তিনি কাজ করেছেন 'কাগজের বউ', 'চার অধ্যায়' ও 'মহানগর @ কলকাতা' ছবিতে। তিনি বিক্রম ঘোষের সাথে 'জাল' চলচ্চিত্রে কাজের মাধ্যমে পেয়েছেন অস্কার নমিনেশন। ২০১৮ সালে 'মাইকেল' ছবিতে একক ভাবে তিনি সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন  

ইন্দ্রজিৎ দে ইন্দ্র তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এফ এম এ বাংলা গান ব্রাত্য রাখার প্রতিবাদে সকলকে আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তি দিয়ে কয়েকটি পয়েন্ট তিনি দারুণ ভাবে উন্মোচন করেছেন। রেডিওতে বাংলা গানের যে একটা স্বর্ণযুগ ছিলো সেই দিনগুলোর কথাও স্মরণ করিয়েছেন তিনি। 

তিনি বলেন " বাংলা গান যদি এফএম এ ভালো করে চলে তাহলে তার প্রমোশন তো হবেই, শুধু প্রমোশনই নয়, আপনারা শুনে বুঝতে পারবেন গানটা ভালো কী খারাপ। কারণ তিনটে গান চললে আপনারা বুঝতে পারবেন কোর বা আনকোর স্বর্ণযুগে যেমন হেমন্তবাবু, মান্নাবাবু, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এবং অন্যান্য আর্টিস্টরা যারা ছিলেন, তাদের গাওয়া বাংলা গান আকাশবাণী রেডিও চ্যানেলে বাজতো, কারণ আমার বাবা আকাশবাণীর পোগ্রামিং এক্সিকিউটিভ। ওখানে যখন বাংলা গান চলতো তখন ওরা বলতো যে আমরা বাংলা আর্টিস্টদের প্রমোট করছি। কিছু ভালো গান যাচ্ছে কিছু খারাপ গানও যাচ্ছে। তবে মানুষ কিন্তু সেই ভালো গানগুলোকেই মনে রেখে দিচ্ছেন। সেই সময় চালানোর ফলেই তাদের গান আজ মুখে  মুখে ঘুরছে। রেডিওতে যদি তাদের গান না চালানো হতো, তাহলে সেইসব আর্টিস্টদের নাম আমরা জানতে পারতাম না৷ সেকেলে টিভির চলও সেভাবে থাকেনি, রেডিওর চল ছিল৷ এখন তো ফেসবুকের চল আছে, টিভির চল আছে কিন্তু এফ এম রেডিও আমাদের কাছে নস্টালজিয়া। আর এফ এম তো রেডিওরই অংশ। তাই এফ এম এ আজকে আমরা বাংলা গান শুনছি। ঠিক সেই পুরানো দিনে ফিরে যেতে চাইছি। আমরা কিছু কাজ না করি আধঘন্টা এফ এম এ গানটি মন দিয়ে শুনবো। পরবর্তী কালে যেন গান শুনতে শুনতে কাজও করতে পারি৷ 

আমার মনে আছে ঠিক এক সময় রেডিও তে দূর থেকে গান চলতো৷ রূপম ইসলাম, রূপঙ্কর, ফসিলস সব গান চলতো। কাজেই রেডিওর বিষয়টি যেন আমরা সিরিয়াসলি গ্রহণ করি। প্রথমত বাংলা গান যদি কেউ না শোনে তাহলে বাংলা আর্টিস্টদের বাংলা গান বানিয়ে কী লাভ হবে? দ্বিতীয়ত আপনার ছেলে পরবর্তী কালে যখন পারফর্ম করবে আপনার নিজেরও হয়তো ভালো লাগবে না যে আমার ছেলেমেয়ের গান কেন রেডিওতে চলছে না। একই ভাবেই যেমন আমাদের বর্তমানে বন্ধ হয়ে গেছে আশা-প্রত্যাশা। তাই সকলকে ভবিষ্যতের কথা ভেবে অনুরোধ করবো এবার একটু বাঙালিকে ভালোবাসুন, বাংলা গানকে ভালোবাসুন৷ আমরা কিন্তু সবাই বাঙালি আর প্রত্যেকে সেই জায়গাটায় যেতে পারবো। যেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো এফ এম এ বাংলা গান চালালে যে জিনিসটা হয় আমি আপনি দূর্দান্ত রেডিও শুনছি। আমার গান ও আপনার গান রেডিওতে চলছে, টিভিতে বাজছে এটারও কিন্তু ব্যাপার আছে। অতএব আমরা রেডিও নিয়ে যে প্রতিবাদ করছি সেটাকে একটু সমর্থন করুন।"

এক এক করে নামী শিল্পীরা যখন রেডিওর বাংলা গান সম্পর্কিত ব্যাপারগুলো ভেবে দেখছেন তখন ধরেই নেওয়া যায় এর একটা উপকার তো হবেই৷ এর পরও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, রেডিওতে বাংলা গান কী আগের জায়গায় ফিরতে পারবে? শিল্পীদের প্রতিবাদ কী সফল হবে? যদিও মানুষের ইতিহাস অন্য কথা বলে। মানুষ চেষ্টা করলে সফল হবেই। সকল বাঙালি শিল্পী ও মনোগ্রাহী শ্রোতাদের সম্মিলিত প্রতিবাদে রেডিওতে বাংলা গান ফিরে পাক নিজস্ব প্রাণ। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

1 comment:

  1. বাংলা সঙ্গীতশিল্পীরা গান গায় নাকি? তারা সরকারি পদ চায়, ভোটে দাঁড়ায় - গান গাওয়া বাদে বাকি সব কিছুই করে। হেমন্ত মান্না মানবেন্দ্রকে নাকি সুরে ভিক্ষা চাইতে হয়নি। ভালো করে গান গা, লোকে শুনবে, আর লোকে শুনলে এফ এম ও বাজাবে।

    ReplyDelete