দশম শ্রেণির বাঙালি কিশোরের চমক, জন্ম দিলো এক অভিনব ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ 'দৃষ্টি'
আধুনিক সভ্যতার উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে টেকনোলজি। গত কয়েক বছরে জীবনযাত্রার মান বদলে দিয়েছে উন্নতমানের প্রযুক্তির সহায়তায়। এই তো বছর কুড়ি আগেও মোবাইল আসেনি সবার হাতে। আর এই দীর্ঘ কয়েক বছরের মধ্যেই যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এখন একজন মানুষ একটা স্মার্টফোনে স্পর্শ করে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে ভিডিও কলিং থেকে শুরু করে চ্যাটিং, ভিডিও কনফারেন্স করে দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে। সভ্যতার অগ্রগতি এখানেই। ইন্টারনেটের কল্যাণে সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা প্রচুর অচেনা মানুষের সাথে পরিচিত হই।
করোনার যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে রোজগেরে মানুষের বাড়ি থেকে সমস্ত কাজ পরিচালনা করার জন্য, ব্যবসা পরিচালনার জন্য বা ছাত্রদের অনলাইন ক্লাস কিংবা শিল্পজগতের মানুষদের অনলাইনে অনুষ্ঠান, কনসার্ট, ভিডিও কনফারেন্সের জন্য অনেক প্ল্যাটফর্মের জন্ম হয়েছে। যে প্ল্যাটফর্মগুলোকে কাজে লাগিয়ে সফল ভাবে গৃহবন্দী অবস্থাও প্রতিটি কাজ সেরে ফেলা যাচ্ছে। অফিসের একটা মিটিং হলে অনেক সময় বহু মানুষ অনুপস্থিত থাকেন মিটিং হলে, কিন্তু অনলাইন অ্যাপের মাধ্যমে বাড়িতে মিটিং করা যাচ্ছে। তবে বেশিরভাগ মিটিং বা কনফারেন্সের ক্ষেত্রে সেই সফটওয়্যার হয়ে থাকে পেইড। যদি কেউ ফ্রিতে সেই সফটওয়্যার ব্যবহার করতে চান সেখানে সময় ও জনসংখ্যা সীমিত থাকে। অনেক মানুষের পক্ষে পেইড সফটওয়্যার ব্যবহার সম্ভব নয়।
এখন পর্যন্ত বাজারে যতগুলো ভিডিও কনফারেন্স ও মিটিং অ্যাপ আছে বেশিরভাগ পেড, যার দামও হয়তো মোটা অঙ্কের। আর ফ্রিতে ট্রায়াল ভার্সনে ডাউনলোড করতে হয়৷ দুদিক থেকেই সমান অসুবিধার সম্মুখীন হয় স্বনির্ভর গোষ্ঠী, বহু স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা,অধ্যাপক-অধ্যাপিকা এবং ছাত্রছাত্রীরা৷ এবার সব সমস্যার নিমেষে সমাধান করলো এক বাঙালি কিশোর৷ ঘাটালের মাধ্যমিক পরিক্ষার্থী অর্ণব মোদক এক আশ্চর্যজনক অ্যাপ বানিয়ে চমকে দিলো গোটা বাংলাকে। যে অ্যাপের মাধ্যমে একসাথে একশো জন ভিডিও কনফারেন্স করতে পারে।
দেশীয় প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঘাটালে বসেই অর্ণব মোদক তৈরি করে ফেলেছে অ্যাপটি। সে অ্যাপটির নামকরণ করেছে 'দৃষ্টি'৷ দশম শ্রেণির এক কিশোরের এই বিস্ময় একজন বাঙালি হিসেবে গর্ব করার মতো। এতো কম বয়সে এতো উন্নতমানের অ্যাপ তৈরি করা সত্যিই তাজ্জব ব্যাপার। নিজের মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের ন্যায় কাজে লাগিয়েছে অর্ণব৷ যে-কোনো ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপকে পিছনে ফেলে দেওয়ার মতো এ অ্যাপ। বহু মানুষের সময়, ব্যয় ও পরিশ্রমকে সে লঘু করে দিয়েছে।
২০১৭ সালের এপ্রিলে অর্ণবের বাবা কিনে আনেন একটি স্মার্টফোন। সে নিজের বাবার ফোন লুকিয়ে ব্যবহার করে শিখে ফেলে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ও ওয়েবসাইট বানানোর পদ্ধতি। ২০১৮ সালে বাবার মেল আইডি দিয়ে সে একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলে। অল্প দিনের মাথায় চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইব দাঁড়ায় চৌদ্দ হাজার। তবে পড়াশোনার চাপের জন্য ইউটিউব চ্যানেলটি মুছে দিতে হয় তাকে। যদিও পড়াশোনাতে সে খুব একটা ভালো নয়।
এই ছেলেটি পড়াশোনাতে ভালো না থাকার জন্য বাড়ি থেকে শুরু করে পাড়া প্রতিবেশী কেউই তাকে অতোটা পাত্তা দেয়না৷ স্কুল শিক্ষকও তার কাজ নিয়ে তাকে হেয় করেছে। হাসাহাসি পর্যন্ত করেছে। কেউ তাকে কোনো বিষয়ে ছোটো করলেই কোনো একটা নতুন কাজ তৈরিতে জেদ চেপে যায় তার মধ্যে। এই জেদ নিয়েই সে জন্ম দিয়েছে 'দৃষ্টি'র মতো একটি দূর্দান্ত অ্যাপের।
অ্যাপটির প্রসঙ্গে অর্ণব মোদক লিটারেসি প্যারাডাইসকে জানায় "অ্যাপটি করার প্রধান কারণ হলো গ্রুপ ভিডিও কলিং। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি যে-কোনো সময় একশো জনের সাথে কল করতে পারবেন। পরবর্তী কালে আরো সংখ্যাটা বাড়ানো হবে। যার কাজ এখন চলছে। এখানে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। বাজারে এখন যে অ্যাপগুলো চলছে সেখানে সময়সীমা থাকে। নির্দিষ্ট সময়সীমা বাড়াতে গেলে পেমেন্ট করতে হয়৷ আমাদের এখানে পুরোটাই ফ্রী অফ কস্ট৷ কোনো চার্জ লাগছে না। কোনো বিজ্ঞাপনও থাকছে না। আমাদের অ্যাপটা একদম সিকিওর। এই অ্যাপে সিকিউরিটির কয়েকটি লেয়ার আছে, প্রথমত এখানে কোনো স্ক্রিন রেকর্ডার বা স্ক্রিনশট কাজ করবে না। সেই হিসেবে কোনো ডেটা কেউ স্ক্রিনশট করে কোনোভাবেই লিক করতে পারবে না। দ্বিতীয়ত শেয়ার স্ক্রিন এর অপশন রাখা হয়নি৷ এটা রাখলে স্ক্রিনের ওপর একটা অ্যাক্সেস চলে যায়। তৃতীয়ত আপনি যখন লগ ইন আইডি পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করবেন তখন কোনো তথ্য চুরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ইমেল হ্যাক হওয়ারও সম্ভাবনা নেই৷ সম্পূর্ণ বিনা খরচে নিরাপদ অ্যাপ হলো দৃষ্টি।"
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.arnab.dristi
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.arnab.dristi
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment