Header Ads

'জাস্টিস ফর জগদীশ', রেডিওর আসল আবিষ্কর্তা যে জগদীশ চন্দ্র প্রমাণ করেন মার্কোনি পৌত্র


রেডিওর আসল আবিষ্কর্তা কে? এই নিয়ে তর্কটা বহুদিনের। সারা বিশ্বের মানুষ জানেন রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন মার্কোনি কিন্তু তারও আগে যে জগদীশ চন্দ্র বসু এই রেডিও আবিষ্কার করেছেন সেই কথা অজানা ছিল গোটা বিশ্বের কাছে। জগদীশ চন্দ্র বসুর আবিষ্কারের মূল্যায়ন বিবেচনা করা হয়নি। তিনি উপযুক্ত প্রচার ও বাণিজ্যিক চাহিদা সৃষ্টি করার অভাবে পৌঁছাতে পারেন নি সারা বিশ্বের কাছে। তাঁর এই অভাবের সুযোগ নেন মার্কোনি। বিস্তৃতির আড়ালে থেকে যান জগদীশ চন্দ্র বসু। তবে সেদিন দেশ পরাধীন ছিল বলে 'জাস্টিস ফর জগদীশ' বলে কোনো আন্দোলন হয়নি৷ 


মার্কোনির রেডিওর প্রসার সুদূরপ্রসারী হলেও তিনি যে রেডিওর আসল আবিষ্কর্তা নন একথা বর্তমানে প্রমাণিত। জগদীশ চন্দ্র বসু আসল আবিষ্কর্তা হিসেবে জাস্টিস পেলেন ২০১৮ সালে। জগদীশ চন্দ্র বসুর সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে কলকাতার বোস ইনস্টিটিউটে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু স্মারক বক্তৃতা দিতে এসেছিলেন মার্কোনি পৌত্র ডঃ ফ্রানচেস্কো পারসে মার্কোনি। ইতালিয়ান ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের বর্ষীয়ান বিজ্ঞানী প্রকৃতপক্ষে জ্যোতির্বিদ হলেও তাঁর বেতার যোগাযোগ সম্বন্ধে টনটনে জ্ঞান রয়েছে। 

ফ্রানচেস্কো পারসে মার্কোনি কখনই মেনে নেননি যে মার্কোনিই রেডিওর আসল আবিষ্কর্তা। জগদীশ চন্দ্র বসুর  সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে তিনি তথ্যসহ প্রমাণ করেন যে রেডিওর মূল আবিষ্কারক হলেন স্বয়ং জগদীশ চন্দ্র বসু।  কেবল মার্কোনির পৌত্রই নয়, এ বিষয়ে বিজ্ঞানী ব্রুনো লাঙ্গের নামও উল্লেখ করা ভালো। বিজ্ঞানী ব্রুনো লাঙ্গে তাঁর 'ফটো এলিমেন্ট' গ্রন্থে জগদীশ চন্দ্র বসুর আবিষ্কার মূল্যায়ন করে লিখেছিলেন "গ্যালেনা, টেলুরিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ নির্দেশকের আবিষ্কার হয়েছিল সুদূর পূর্বপ্রাচ্য কলকাতায়।" 

১৯০১ সালে মার্কোনি আটলান্টিকের ওপারে বেতার সংকেত পাঠান এবং পাল্টা সংকেত গ্রহণ করেন। সম্ভবত এর আগেই ১৮৯৯ সালে মার্কোনি জগদীশ চন্দ্র বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ মার্কোনির পৌত্রই দেন এই তথ্য। যদিও যোগাযোগের কোনো দলিল পাওয়া যায়নি। তবে এর প্রক্রিয়ার কাজ এখনও চলমান। তিনি নিজে একজন ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির জ্যেষ্ঠ জ্যোতির্বিদ। 

মার্কোনির পৌত্র আসল আবিষ্কর্তা হিসেবে জগদীশ চন্দ্র বসুকে স্বীকৃতি দিলেও তিনি গোপনে এটাও মানেন যে রেডিওর আবিষ্কর্তা হিসেবে জগদীশ চন্দ্র বসু ও মার্কোনি দুই ব্যক্তিরই অবদান সমান। জগদীশ চন্দ্র বসু রেডিওর পুরো সিস্টেমটা কেবল আবিষ্কার করেছিলেন কিন্তু মার্কোনি শুধুমাত্র রেডিও টানিং সিস্টেম আবিষ্কার করেন। 

জগদীশ চন্দ্র বসু রেডিও আবিষ্কার করে এর নাম রেখেছিলেন 'আলোক কোষ'। যার পেটেন্ট নিয়েছিলেন ভগিনী নিবেদিতা ও সারা বুল। তবে বেদনার কথা হলো এই আবিষ্কারটির সময়সীমা স্বল্পদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। অন্যদিকে মার্কোনি পরবর্তীকালে স্বীকার করেন যে বেতার তরঙ্গে প্রেরিত সংকেত আদান-প্রদানের কাজে তাঁর দাদু বোজের উদ্ভাবিত যন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন। এখানেও শুরু হয় বিতর্ক। প্রশ্ন ওঠে যে যন্ত্রটি মার্কোনি পেলেন কোথা থেকে? যে যন্ত্র বিলেতের রয়েল সোসাইটির কাছে থাকার কথা তা কীভাবে মার্কোনির অধীনে এলো? এর জবাব তিনি কী দিয়েছিলেন তার তথ্য আমাদের কাছে নেই। 

১৮৯৭ সালে মার্কোনি রাতারাতি একটা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন। তারপর তিনি জানালেন রেডিও যন্ত্রের কথা। সঙ্গে সঙ্গে তা পেন্টেন্টও হয়ে যায়৷ জগদীশ চন্দ্র বসুর আবিষ্কৃত যন্ত্রের সাথে মার্কোনির রেডিও কোম্পানি যে সেট ব্যবহার করেন সাধারণ মানুষ এটাকেই সম্ভবত নকল বলে প্রচার করেছেন। 

মার্কোনি রেডিও আবিষ্কারের আগেই জগদীশ চন্দ্র বসু তার ছাড়া এক জায়গা থেকে আরেক জায়গাতে তথ্য আদান-প্রদানে সক্ষম হয়েছিলেন। তারপরও ১৯০৯ সালে নোবেল জিতলেন মার্কোনি। বঞ্চিত থেকে গেলেন জগদীশ চন্দ্র বসু। একজন বাঙালি হিসেবে এভাবে আরেক বাঙালির অপমান মেনে নেওয়া যায়না। তবে কথায় আছে সত্য কখনো চাপা থাকে না। গোটা বিশ্বও আজকে মানতে বাধ্য হয়েছে রেডিওর আসল আবিষ্কর্তা প্রকৃতপক্ষে জগদীশ চন্দ্র বসুই। মার্কোনি রেডিওর কিছু টেকনোলজির অদল বদল করেছিলেন মাত্র। আর তেমন কিছুই নয়৷ 


তথ্যসূত্র- প্রথম আলো, ডঃ জে. সি. ঘোষের জার্নাল  

No comments