"রেডিও চ্যানেলগুলো বাঙালি শিল্পীদের সাথে বেইমানি করছে" গর্জে উঠলেন ইমন সেন
ইউটিউবে সার্চ করলেই বাংলার নতুন নতুন মৌলিক গান চোখে পড়ে৷ যে গানের ভিডিও, সুর, কথা ও কণ্ঠদান থেকে আরম্ভ করে মার্কেটিং সবটাই সেই গানটির গায়ক নিজের পকেট থেকে খরচ করেন। মৌলিক গানে বড় কোনো ইনভেস্ট নেই। বড় প্রডিউসারদের দেখা নেই। ইউটিউবে মিলিয়ন ভিউ নেই। এর কারণ কী? সহজ উত্তর একটাই বাংলার রিয়্যালিটি শোতে বাংলা মৌলিক গান গাওয়া হয়না, রেডিওতে বাংলা মৌলিক গান বাজানো হয়না, টিভির মিউজিক চ্যানেলগুলোতে শুধুই সিনেমার গান চলে। যার ফলশ্রুতিতে হারিয়ে যায় মৌলিক শিল্পীটির প্রতিভা৷
খুব বেশিদিন নয়, দশ বছর আগেও টিভি ও রেডিওর দৌলতে কত বাংলা ব্যান্ডের জন্ম হয়। কত কত শ্রোতা মুখিয়ে থাকে গানগুলো শোনার জন্য। পাড়ার মোড়ে, হোর্ডিং এ, পত্র-পত্রিকা ঢেকে থাকতো বাংলা ব্যান্ডের বিজ্ঞাপনে। বড় বড় প্রডিউসারও তৈরি থাকতো বাংলা ব্যান্ডের প্রসারের জন্য। শহরে শহরে, চ্যানেলে বাংলা ব্যান্ডের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান আরো কত কী। সেদিনের আলোমাখা দিনগুলো আজ হারিয়ে গেছে।
বাংলা গানের ইতিহাসে মহীনের ঘোড়াগুলি, পৃথিবী, ভূমি, চন্দ্রবিন্দু, ক্যাকটাস, লক্ষীছাড়া, ফসিলস ও পরশপাথর একটা মাইলস্টোন তৈরি করে। অন্যান্য ভাষাতেও তাদের গান অনুকরণ করা হতো। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বাংলা গান উপহার দেয় তারা বাঙালিদের। পৃথিবীটা নাকি ছোটো হতে হতে, আমি শুধু চেয়েছি তোমায়, নীল রঙ ছিল ভীষণ প্রিয়, ন হন্যতে, সেই যে হলুদ পাখি, বারান্দায় রোদ্দুর, একঝাঁক ইচ্ছেডানার মতো গুচ্ছ গুচ্ছ গান ভোল পাল্টে দিয়েছিল বাংলা সঙ্গীত জগতের৷ রীতিমতো গানগুলো বাংলার আকাশে-বাতাসে ঝড় তুলে দেয়।
বর্তমান সময়টা বাংলা মৌলিক গানের জন্য জটিল সময়। দুই নৌকাতে পা দিয়ে কাজ করতে হয় মৌলিক গানের শিল্পীদের। জীবনের সর্বস্ব সুখ বিসর্জন দিয়ে লড়ে যেতে হয় তাদের৷ রেডিও, টেলিভিশনে বাংলা মৌলিক গান কেন চলবে না? বাঙালি কী সেই আওয়াজ তুলবে না? অবশ্যই তুলবে। বাংলা শিল্পী পক্ষ সেই আওয়াজ জোরদার করতে প্রস্তুত। বাংলা শিল্পী পক্ষের ডাকে প্রতিবাদে সাড়া দিচ্ছেন বহু বাঙালি শিল্পী।
সম্প্রতি ক্যালকাটা ব্লুজের ভোক্যালিস্ট ইমন সেন মুখ খুললেন রেডিওতে বাংলা মৌলিক গান ব্রাত্য রাখার প্রতিবাদে। অনেকদিনের জমানো ক্ষোভ তিনি উগরে দিলেন ভিডিও বার্তার মাধ্যমে। তিনি বলেন "বাংলার এফএম রেডিও চ্যানেলগুলো আর চ্যানেলের প্রডিউসারগুলো যেভাবে আমাদের শিল্পীদের সাথে বেইমানি করেছে, এত বড়ো বেইমানি বাংলাতে এর আগে কখনো হয়নি৷ পুরানো বাংলা গান তবুও কিছু চলতো, নতুন বাংলা গান তো চলতোই না। এখন তো আর কোনো বাংলা গানই চলেনা। বাংলার রেডিও চ্যানেলগুলোকে ধীরে ধীরে হিন্দিতে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা চলছে। প্রডিউসারদের মতামত রেডিওতে হিন্দি চলবে, বাংলা চলবে না। সিনেমার গান চলবে, ব্যান্ডের কোনো গান এবং মৌলিক গান চলবে না৷ নতুন যারা বাংলা গান রিলিজ করছে তাদের কোনো মূল্য নেই। সেই নতুন গান ইউটিউবে কোনো চ্যানেলে আপলোড করলে কিছু সংখ্যক মানুষ কিছুদিন হয়তো শোনে। তারপর সেই গানটির মানুষ আর খোঁজ পায়না। একটা সময় ছিল যখন রেডিওতে বারবার করে ভূমি, ক্যাকটাস, মনোময়দের গান চালানো হতো। লোকে সেটা অনেক বেশি জানতে পারতো। রেডিও যখন থেকে ব্যবসার কথা চিন্তা করতে লাগলো তখন থেকে আমাদের ভুলে গেল। আজকে সময় এসেছে বাংলার মাটিতে বাংলার রেডিও, টিভি চ্যানেলে বাংলা গান চালানোর। সবাই চায় তার গান এফএমে বাজুক। এফএমে বারবার ঐ গান বাজলে মানুষের মাথায় তা গেঁথে যায়। বাংলা গানকে বঞ্চিত করে এতো হিন্দি গান কেন বাজানো হবে বাংলার মাটিতে?"
ইমন সেন প্রতিবাদ করে প্রতিটি বাঙালিকে আহ্বান জানিয়েছেন বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভাষার জন্য প্রতিটি বাঙালিকে এগিয়ে আসতে হবে৷ সঙ্গীত শিল্পী ইমন সেন বহুদিন যাবৎ গান করে আসছেন৷ মৌলিক গান নিয়ে তিনি একটানা গান করছেন। চারমাস আগে 'একতরফা' বলে একটি গান মুক্তি দিয়েছেন তিনি৷ যে গানটি গেয়ে তিনি শ্রোতাদের মন জয় করে নিয়েছেন৷ তিনি চান তার মতো প্রতিটি শিল্পীর গান রেডিওতে চালানো হোক৷ এতো পরিশ্রম করে তারা গান বানায়। সেই গান লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে না পৌঁছালে থাকবে না গানটির মূল্য। বাঙালি হিসেবে আমরা চাই বাংলা মৌলিক গানের পরিধি বিশাল থেকে বিশালতর হোক৷
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment