Header Ads

গল্প হলেও সত্যি, বাংলার প্রথম গদ্যের বই রচনা করে পর্তুগিজরা


বাংলার প্রথম গদ্যের বই লিখে পর্তুগিজরা। বিষয়টি অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি। কেবল গদ্যের বই-ই নয়, বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ ও অভিধানও তাদেরই রচনা। বাংলা গদ্যের উন্নয়নে বিশেষ করে পর্তুগিজ ও ধর্মান্তরিত ক্যাথলিক যাজকদের অবদানই বেশি। অষ্টাদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগালের রাজধানী শহর লিসবন থেকে বাংলা ও পর্তুগিজ ভাষায় অভিধান ও বাগধারায় ভাগ করে বাংলা ব্যাকরণ বই মুদ্রণ ও প্রকাশ করেন পর্তুগিজ মিশনারী ফাদার ম্যানুয়েল৷ যা বাংলা ভাষার ইতিহাসে প্রথম আধুনিক মুদ্রিত ব্যাকরণ বই হিসেবে বিবেচিত হয়৷ 


পর্তুগিজদের প্রথম বাংলায় আগমন ঘটে ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দে। কিন্তু শের শাহ তাদের বিতাড়িত করেন। শের শাহের মৃত্যুর পর মোগল সাম্রাজ্যের পুনরায় প্রতিষ্ঠার পর তারা আবারো প্রত্যাবর্তন করে। তারপর হুগলি বন্দরের প্রতিষ্ঠা হয়। যে বন্দর কালক্রমে বাংলার এক গুরুত্বপূর্ণ বন্দরে পরিণত হয়। তারা ধীরে ধীরে বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে কিছুটা মিলে যাওয়ার চেষ্টা করে৷ বাংলার মিষ্টি ও আচার শিল্প পর্তুগিজদের একক অবদান৷ নানা ধরণের রসালো ও শুকনো মিষ্টি এবং নানান রকমের আচার তৈরিতে পর্তুগিজরা ছিল অদ্বিতীয়। 

বাংলা গদ্যের বর্তমান মসৃণ রূপ এতো সহজে আসেনি৷ এর পিছনে একটা দীর্ঘ ইতিহাস লুকিয়ে আছে। ষোড়শ শতাব্দীর চল্লিশের দশকে পর্তুগিজরা বাণিজ্যিক স্বার্থে বাংলাতে উপনিবেশ স্থাপন করে। বাণিজ্যের পাশাপাশি তারা ক্যাথলিক খ্রিস্টীয় মতবাদ প্রচার করতে থাকে। তাদের ধর্মই যে সর্বশ্রেষ্ঠ এই ব্যাপারটা অন্য ধর্মের সাথে তুলনা করে বোঝাতো৷ এ কাজকে সহজসাধ্য করে তুলতে তাদের হাত ধরে কিছু প্রয়োজনীয় গদ্যগ্রন্থ রচিত হয়৷ আর এই গদ্যগ্রন্থ তারা প্রথম রচনা করে বাংলাতে। 

গদ্যটি তারা অবশ্য বাংলা অক্ষরে লেখেনি। রোমান হরফে ও পর্তুগিজ উচ্চারণে লিখেছিল। পর্তুগালের লিসবন শহরে থেকেই এই গদ্যটি ছাপা হয়। গ্রন্থ আকারে পুরো গদ্যটি লেখা হয়। দোম আন্তোনিয়ো দো রোজারিয়ো এই গ্রন্থটি লেখেন। যা বাংলা সাহিত্যকে অমর করে রেখেছে। এই গ্রন্থটির তিনি নাম রাখেন 'ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক-সংবাদ'। এ গ্রন্থের মাধ্যমে বাংলার গদ্যরীতিতে পথচলার সূচনা হয়। তৎকালীন মিশনারিদের কাছে এক জীবন্ত দলিল দস্তাবেজ হিসেবে কাজে লেগেছিল এই বই। ভাববার বিষয় হলো সূদুর লিসবন থেকে প্রথম বাংলা গদ্যের বই প্রকাশিত হয় পর্তুগিজদের হাত ধরে। বাংলা ভাষা যে কতটা সমৃদ্ধ ভাষা তা অনেক কাল আগেই ইউরোপীয়রা সঠিক ভাবে বুঝতে পেরেছিল৷ অথচ দূর্ভাগ্যের বিষয় হলো বাঙালি সেটা বুঝতে পারলো না। একজন ইউরোপীয় যখন বাংলা বই লিখতে পারেন, তখন আমরা কেন পারিনা বাংলা ভাষা গর্ব ও অহংকার দেখাতে? তাই প্রতিটি বাঙালিকে নিজের ভাষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। ইতিহাস বারবার প্রমাণ দেয় বাংলা ভাষা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ভাষা। অতএব বাংলা ভাষা নিয়ে গর্ববোধ করতে আমাদের দ্বিধা নেই৷ 


তথ্যসূত্র- দৈনিক ইত্তফাক, কালের কণ্ঠ 

No comments