Header Ads

বনবিবির দেশে বাঘবিধবাদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে উদ্যোগ একলব্য ফাউন্ডেশনের


সুন্দরবন অঞ্চলের গোসাবা ব্লকের আমলামেথী গ্রাম যে গ্রামটি বাঘবিধবার গ্রাম নামেই পরিচিত। এখানে প্রচুর বাঘবিধবা বসবাস করেন। বাঘের আক্রমণে এই এলাকায় বহু মহিলার স্বামী মারা গেছেন। গোলপাতা, মধু আহরণ হলো সুন্দরবনের মানুষদের প্রধান জীবিকা। এই জীবিকাকে কেন্দ্র করে সংসার চলে তাদের। গভীর জঙ্গলে কখনো মধু বা গোলপাতা সংগ্রহ কিংবা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের সম্মুখীন হয়ে জীবন হারিয়েছেন বহু পুরুষ। যার ফলে বাঘবিধবার সংখ্যা প্রচণ্ড বেশি এখানে। 


সুন্দরবনে প্রতি বছর প্রায় একশো জন মানুষ প্রাণ হারান বাঘের আক্রমণে। কোনোমতেই বাঘের আক্রমণ থামেনি উল্টে বেড়ে গিয়েছে। এখানকার মহিলাদের স্বামী হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে নিজেদের ছেলেমেয়েদের কষ্ট করে বড়ো করতে হয়। তাদেরও স্বামীদের মতো একই পেশায় বেছে নিতে হয়। জীবনে কোনো সুখ আসেনা এদের মধ্যে। তবুও সরকার থেকে কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়নি এদের জন্য। সরকার থেকে কেবল এলাকার কয়েকজন মৎস্যজীবিকে কোর এলাকায় মাছ ধরার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কোর এলাকাতে অনুমোদন ছাড়া মাছ ধরা নিষিদ্ধ। 

বাঘের পেটে বহু পুরুষদের যাওয়ার ঘটনা পুরো গ্রামকে আতঙ্কিত করে তোলে। সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষ জঙ্গলের ওপর নির্ভর করেই জীবনধারণ করে থাকেন। মৎস্যজীবির সংখ্যা অনেক বেশি থাকার জন্য অনুমোদন ব্যতীত মানুষেরা চোরা পথে কাঁকড়া ও মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের পেটে যান। সুন্দরবনের মানুজন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জঙ্গলের ওপর নির্ভরশীল হলেও অরণ্যের অধিকার আইনের সুবিধা তারা কোনোমতেই পান না।   

গত ২৬ শে জুলাই ওয়ার্ল্ড ম্যানগ্রোভ ডেতে একলব্য ফাউন্ডেশন ও আশার আলো হ্যান্ডিক্যাপ্ড সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের আমলামেথী গ্রামে দুদিন ব্যাপী বাঘবিধবাদের জন্য স্বনির্ভর হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ, এলাকার মানুষদের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির ও সুন্দরবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। একলব্য ফাউন্ডেশনের কর্ণধার ডাঃ অনমিত্র জানা একটি বৃক্ষরোপণ করে উদ্বোধন করেন পুরো অনুষ্ঠানের। এদিন প্রায় ২০০ টির মতো ম্যনগ্রোভ গাছের চারা রোপণ করা হয় সুন্দরবনের সৌন্দর্যায়নের লক্ষ্যে। 

বাঘবিধবাদের স্বনির্ভর করে তোলার উদ্দেশ্যে আশার আলো হ্যান্ডিক্যাপ্ড সোসাইটির সহযোগিতায় একলব্য ফাউন্ডেশনের তরফে হস্ত শিল্প প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়। ২৬ ও ২৭ শে জুলাই দুই দিনব্যাপী চলে এই প্রশিক্ষণ শিবির। ৪০০ জন এলাকাবাসী অংশ নেন এই প্রশিক্ষণ শিবিরে। কেবল প্রশিক্ষণ শিবিরই নয়, একলব্য ফাউন্ডেশনের তরফে এলাকাবাসীদের জন্য নিঃশুল্ক স্বাস্থ্য শিবিরেরও আয়োজন করা হয়। এই শিবির থেকে বিনামূল্যে ঔষধ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। এতে করে উপকৃত হয়েছেন মোট ৫০০ টি পরিবার। এছাড়াও ৮৪ জন বাঘবিধবা সহ ১২০ জন মানুষের হাতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এমনকি এলাকার দেড়শো জন গরীব-দুঃস্থ পরিবারের হাতে শিক্ষার বিভিন্ন উপকরণ তুলে দেওয়া হয়।                             
একলব্য ফাউন্ডেশনের কর্ণধার ডাঃ অনমিত্র জানা বলেন " যারা আমাদের হস্তশিল্পের শিবিরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাদের আমরা স্কলারশিপের ব্যবস্থা করবো। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় সামগ্রীও। আমরা আগামী দিনে এলাকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়েও কাজ করার ভাবনাচিন্তা করছি। " 

একলব্য ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগ বহন করে মানবতার এক অন্য দিক। 

প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক

No comments