Header Ads

বাংলা এফ এম চ্যানেলে বাংলা গান বাজানো আবশ্যিক করতে ডেপুটেশন বাঙালী ছাত্র-যুব সমাজের


বাংলা ভাষা রকমারি গানের আঁতুড়ঘর। বাউল হোক বা লোকগীতি, টপ্পা হোক বা ঝুমুর, ধামাইল হোক বা বাদীগীতি গানের যেন অন্ত নেই৷ আমরা যারা বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়ি তারাই জানি সেখানে কত ভালোভাবে বাংলা গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ বাংলার বাড়িতে বাড়িতে গান শেখার একটা চল আছে৷ বাঙালি ছেলেমেয়েরা গান শিখলে রবীন্দ্র সঙ্গীত বা নজরুল গীতি দিয়েই তার হাতেখড়ি হয়। বাংলা ভাষা বলতে ও শুনতে যেমন মিষ্টি বাংলা গানও তেমন মিষ্টি। আমার সোনার বাংলা, ধন্য-ধান্য পুষ্প ভরা, ভারত আমার ভারতবর্ষ, আমি বাংলাই গান গাই, বাংলার মাটি বাংলার জল, মুক্তির মন্দির সোপান তলের মতো গান এই ভাষাতেই লেখা হয়েছে। 


আজ থেকে তিরিশ বছর আগে রেডিওতে বাংলা গানের প্রসার ঘটানো হতো। এককালে রেডিওর মাধ্যমে বেশিরভাগ মানুষ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, গীতা দত্ত, সলিল চৌধুরী, মান্না দে, হৈমন্তী শুক্লা, নির্মলা মিশ্রের মতো কালজয়ী সঙ্গীতশিল্পীদের সাথে পরিচিতি লাভ করেছিল। 

নব্বইয়ের দশকে গৌতম চট্টোপাধ্যায়, নচিকেতা চক্রবর্তী, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, শিলাজিৎ মজুমদার, রূপঙ্কর বাগচি, সিধু, পটাদের মতো শিল্পীদের আবির্ভাব ঘটেছিল বাংলা গানের রমরমা বাজার ও রেডিওর প্রচারের মধ্য দিয়ে। যে-কোনো বাড়িতে রাখা থাকতো তাদের গানের ক্যাসেট। কলেজে কলেজে ব্যান্ডের প্রতিযোগিতা, পাড়ায় পাড়ায় বাংলা গানের রেডিও কনসার্ট হতো দশ বছর আগেও৷ সেইসব মায়াবী দিনগুলো আজ আর নেই। বাংলার রেডিও চ্যানেলগুলো বাংলা মৌলিক গান থেকেই একদিন বড়ো হয়েছিল। তারা যে শিল্পীদের জন্য ছোট থেকে বড় হলো সেই শিল্পীরা আজকে তাদের কাছে পদে পদে অবহেলিত। 

রেডিওতে বাংলা গানকে কোয়ারান্টাইনে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাংলা গানের পরিধি ক্রমশ ক্ষুদ্র হচ্ছে। বাংলা গানের নিজস্ব বাজারে হিন্দি আগ্রাসন থাবা বসাচ্ছে। বাংলার রাজধানী কলকাতার বুকে রেডিওতে বাংলা গানের অপমান মেনে নিতে রাজি নয় কোনো বাঙালি৷ কলকাতার এফ এম চ্যানেলে বাংলা গান বাজানো আবশ্যিক করতে রেডিওর অফিসে অফিসে ডেপুটেশন দিলো আমরা বাঙালী ছাত্র-যুব সমাজ। 

ডেপুটেশন জমা দেওয়ার ব্যাপারে বাঙালী ছাত্র-যুব সমাজের কেন্দ্রীয় সচিব তপোময় বিশ্বাস বললেন "আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি ২০১০ বা ২০১১ সাল থেকে রেডিও চ্যানেলে জোর করে, কিছুটা উদ্দেশ্য প্রাণোদিত ভাবে বাংলা গান কমিয়ে বা বাংলা গানকে প্রাইম টাইমে প্রাধান্য না দিয়ে হিন্দি বা অন্য ভাষাভাষীর গান বাজানো হচ্ছে। বাঙালি শ্রোতারা আমাদের অভিযোগ জানাচ্ছে যে তারা রেডিওতে একেবারেই বাংলা গান শুনতে পাচ্ছে না৷ রেডিও খুললেই শুধু হিন্দি গান আর হিন্দি গান। শিল্পীমহলে রূপঙ্কর বাগচি থেকে ভূমি ব্যান্ডের সৌমিত্র রায় ও ক্যালকাটা ব্লুজের ইমন সেনের মতো প্রচুর নামীদামী গায়ক যারা আমাদের আছেন তারা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তুলছে। তারাও জানাচ্ছেন রেডিওতে বাংলা গান চালানো হচ্ছে না, শুধুই হিন্দি চালানো হচ্ছে। আমরা যেটা বলছি যে বাংলার এফ এম চ্যানেল গুলোতে বাংলা গান বাজানো বন্ধ করার ফলে একদিকে যেমন বাংলা উন্নত সঙ্গীত, সাহিত্য সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক  ধারা থেকে বাঙালি শ্রোতারা বঞ্চিত হচ্ছেন। পাশাপাশি নব প্রজন্মের বাঙালি শিল্পীরাও বাংলার এফ এম প্ল্যাটফর্মে সুযোগ পাচ্ছে না, যা খুবই নিন্দনীয়। আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলা সঙ্গীতের মতন এত ধারার সঙ্গীত শুধু হিন্দি কেন, ভারতবর্ষের অন্য কোনো ভাষায় রচিত হয়নি৷ রাষ্ট্রসংঘ বাংলা ভাষাকে পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছে৷ অথচ বাংলায় বাংলাকে উপেক্ষা করে হিন্দির দাপট। যা খুবই অনভিপ্রেত। আমরা  বাঙালী ছাত্র-যুব সমাজ থেকে আমরা এর তীব্র বিরোধিতা জানাচ্ছি। লকডাউন চলাকালীন সময়ে আমরা ইমেলে বা অনলাইনে প্রতিবাদ ও আন্দোলন গড়ে  তোলার চেষ্টা করছি৷ সেই ইস্যুতেই আমাদের এই ডেপুটেশন ও গণ ডেপুটেশনের বার্তা৷" 

এই ডেপুটেশনে প্রাইম টাইমে একশো শতাংশ বাংলা বিভিন্ন ধারার গান, বাংলা চলচ্চিত্রের গান সহ নানারকম গান আবশ্যিক ভাবে বাজানোর কথা বলা হয়েছে৷ নব প্রজন্মের শিল্পীদেরও সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। শুধু এই নয়, পুনরায় 'কলকাতার গান কলকাতার প্রাণ' অনুষ্ঠানকে চালু করার কথা বলা হয়েছে। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments