"প্রচুর মানুষ নতুন লেখকদের বই পড়ছেন"- সাক্ষাৎকারে লেখক অভীক দত্ত
নতুন প্রজন্মের লেখকদের মধ্যে অন্যতম নাম অভীক (অর্জুন দত্ত)। যিনি নেটদুনিয়ার এক পরিচিত নাম। সম্প্রতি তাঁর লেখা পিডিএফ বই বিক্রি করে তিনি দশ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছেন। করোনা চিকিৎসা ও আমফানের ত্রাণ তহবিলে তিনি তুলে দেবেন এই পুরো টাকা। এককথায় বাংলা লেখালেখির জগতে এক আলোড়ন সৃষ্টি করলেন তিনি। লিটারেসি প্যারাডাইস তাঁর সাথে কথা বলে একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার তুলে এনেছে। জেনে নিন লিটারেসি প্যারাডাইসের করা প্রশ্নের ভিত্তিতে তিনি ঠিক কী জানালেন।
লিটারেসি প্যারাডাইস- বর্তমানে বাংলা বইয়ের অবস্থা ঠিক কেমন বলে আপনার মনে হয়?
লিটারেসি প্যারাডাইস- বর্তমানে বাংলা বইয়ের অবস্থা ঠিক কেমন বলে আপনার মনে হয়?
অভীক দত্ত- বাংলা বইয়ের অবস্থা এই কোভিড সিচুয়েশনে ভাল নয়। ডিস্ট্রিবিউশন প্রায় বন্ধ। খুব শিগগিরি যেন আমরা এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারি এই আশাটুকু করি।
লিটারেসি প্যারাডাইস- অল্পদিনে বাংলা পিডিএফ বই বিক্রি করে দশ লক্ষ টাকা রোজগার করলেন আপনি। যা বাংলা সাহিত্যে মাইলস্টোন বলা যেতে পারে৷ আপনি কী প্রথম থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে এই বইটি এতোটা জনপ্রিয় হবে?
অভীক দত্ত- একটি বই না। আমি এতদিন পর্যন্ত যা যা বই লিখেছি, তার সব বইই পিডিএফ হিসেবে বিক্রি করেছি ত্রাণ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। আমি মোটামুটি একটা ধারণা করেছিলাম যে এক থেকে দুই লাখের মতো টাকা উঠবে।
লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনি প্রধানত কোন কোন বিষয়ের ওপর লিখতে ভালোবাসেন?
অভীক দত্ত- আমার সম্প্রতি একটি উপন্যাস সমগ্র প্রকাশ পাবে। বিষয়গুলি হল, অনার কিলিং, লাভ জেহাদ, প্রেম এবং রূপালী জগত সম্পর্কে সাসপেন্স থ্রিলার। আমার লেখার বিষয় বিভিন্ন। বিষয় বৈচিত্রের জন্য আমার পাঠক আমার লেখা পছন্দ করেন।
লিটারেসি প্যারাডাইস- লোকে বলে নতুন লেখকদের বই নাকি কেউ পড়ছে না। বই বিক্রি নাকি কমে যাচ্ছে। যারা এ বিষয় নিয়ে কথা বলেন তাদের আপনি কী বলতে চান?
অভীক দত্ত- লোকে অনেক কিছুই বলে। লোকের কাজ বলা। প্রচুর মানুষ নতুন লেখকদের বই পড়ছেন। নেগেটিভ কথাবার্তা যারা বলে তারা কিছু না জেনে বলে।
লিটারেসি প্যারাডাইস- বিশেষ সূত্র থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে আপনার এই নতুন বইটি বিক্রি করে যে পরিমাণ টাকা উঠেছে তার পুরোটাই আপনি সামাজিক কাজে ব্যবহার করতে চলেছেন৷ একজন মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে আপনি কতটা গর্ববোধ করেন?
অভীক দত্ত- মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। ক্রাইসিসের সময় মানুষের পাশে একজন মানুষ দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক। আমি আলাদা কিছুই করি নি। একজন মানুষ হিসেবে কর্তব্যটুকু করেছি।
লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনি এখন পর্যন্ত যতগুলো গল্প বা উপন্যাস প্রকাশ করেছেন৷ সেই গল্প বা উপন্যাসে কোন কোন সময়ের কথা বেশি করে উঠে এসেছে?
অভীক দত্ত- আমি সমসাময়িক সময় নিয়েই বেশি লিখি। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স প্রাধান্য পায় আমার লেখায়।
লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনার কোন লেখাটা এখন পর্যন্ত আপনাকে অধিক তৃপ্তিদান করেছে? আপনার লেখা প্রিয় চরিত্র আপনার কাছে কোনটি?
অভীক দত্ত- ব্লু ফ্লাওয়ার, নষ্ট সময়ের উপাখ্যান, অন্তবিহীন। শুভম আমার সৃষ্ট সব থেকে জনপ্রিয় চরিত্র। শুভম কাহিনীর চাহিদা সব সময় তুঙ্গে থাকে।
লিটারেসি প্যারাডাইস- দুই বাংলার সাহিত্য সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
অভীক দত্ত- দুই বাংলাতেই বাংলা ভাষা চর্চা হচ্ছে। নতুন নতুন ছেলেমেয়েরা আসছে। আমি নৈরাশ্যবাদী নই কোনকালেই। ওপার বাংলার লেখকদের মধ্যে আমার হুমায়ূন আহমেদ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস প্রিয়। আর পশ্চিমবঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, প্রমথনাথ বিশী, পরশুরাম, বনফুল ভীষণ প্রিয়।
লিটারেসি প্যারাডাইস- একজন লেখকের কাছে আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয়?
অভীক দত্ত- সেটা লেখকই ঠিক করবেন। কেউ কেউ নিভৃতে লিখতে পছন্দ করেন। আবার কেউ কেউ আছেন আমার মত, যারা সবটাই তার পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করেন। শেষ অবধি লেখার মানই একজন লেখকের মূল্যায়ণ করবে। সোশ্যাল মিডিয়া না।
লিটারেসি প্যারাডাইস- সোশ্যাল মিডিয়া আপনাকে এগিয়ে যেতে কতটা সাহায্য করেছে। আর কী কী বই লিখছেন? আর কোন কোন বিষয়ে লেখার ইচ্ছে আছে?
অভীক দত্ত- আমি সব সোশ্যাল মিডিয়াতেই লিখি। সেই অরকুট আমল থেকে। ভবিষ্যতেও ডিজিটাল মিডিয়াতেই লিখব। ভবিষ্যতে ঐতিহাসিক কোনো বিষয় নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে।
লিটারেসি প্যারাডাইস- সোশ্যাল মিডিয়া আপনাকে এগিয়ে যেতে কতটা সাহায্য করেছে। আর কী কী বই লিখলেন?
অভীক দত্ত- আমার লেখা উপন্যাস-গল্প আমি সব সোশ্যাল মিডিয়াতেই লিখি। সেই অরকুট আমল থেকে। ভবিষ্যতেও ডিজিটাল মিডিয়াতেই লিখব।উপন্যাসের মধ্যে আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে, বিজন ঘরে, খেলা যখন ছিল, অন্তবিহীন, শেষের পরে, ডিভোর্স ইত্যাদি, ব্লু ফ্লাওয়ার, বিশ্বমিত্র উপাখ্যান, বৈবাহিক, ঝিঁঝিঁ, যেখানে দেখিবে ছাই, পথ হারাবো বলেই, যখন এসেছিলে, অসময়ের বৃত্তান্ত ইত্যাদি। গল্পের বইয়ের মধ্যে চন্ডালিকা, খেলাঘর, গল্প ১৫, গল্প ২৪, রূপকথার গল্প প্রভৃতি।
লিটারেসি প্যারাডাইস- অনেকে বলেন নিজস্ব প্রকাশনীতে বই প্রকাশ করলে বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
অভীক দত্ত- কথাটা খুব একটা ভুল নয়। নিজস্ব প্রকাশনীতে বই প্রকাশ করলে ডিস্ট্রিবিউশন কম হয়। সমস্যা আছে এক্ষেত্রে। এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
লিটারেসি প্যারাডাইস- একটি বই প্রকাশের জন্য লেখক ও প্রকাশকদের সমাজের প্রতি কতটা দায়িত্ববান হওয়া উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?
অভীক দত্ত- মানুষ সকলেই নিজেদের সুবিধামতো যে যতোটা পারেন ভালো কাজ করলেই মঙ্গল সমাজের পক্ষে। এটাই বলার।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment