Header Ads

দীপ প্রকাশনী ও বইচইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলো জাল স্বাক্ষরের


কখনো ভাইরাস, কখনো ঝড় প্রভৃতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন বইপাড়া। প্রথমে ভাইরাসের সংক্রমণে বন্ধ থাকে বই বাজার৷ তারপর ঝড়ের তটে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বইপাড়া। লাখ লাখ টাকার বই ভেসে যায় রাস্তার ওপর জমা জলে। ফলে আয় কমতে থাকে বহু প্রকাশনীর। বাজারে নতুন বই প্রকাশ করতে পিছুপা হয় অনেক প্রকাশনী সংস্থা। তবে কিছু প্রকাশনী খানকয়েক নামকরা বইও প্রকাশ করেছে এরই মাঝে। তাদের মধ্যে রয়েছে দীপ প্রকাশনীরও একটি বই। 



কয়েকদিন আগে নন্টে-ফন্টের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে নন্টে-ফন্টে লেখার পঞ্চাশ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে দীপ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় 'নন্টে-ফন্টে সোনায় সোহাগা' নামের একটি বই৷ উন্নতমানের প্রচ্ছদ, সাদাকালো রঙে ছাপা কমিক্স সহযোগে অনবদ্য হলো এই বই। 

বইটির মেকিং, প্রচার সবকিছু ঠিক থাকলেও বইটির ওপরে লেখকের স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ উঠলো দীপ প্রকাশনী ও বইচইয়ের বিরুদ্ধে। বইটি প্রি বুকিংয়ের সময় জানানো হয় বইচইয়ের তরফে জানানো হয় যারা অগ্রিম বুকিং করবেন তাদের নারায়ণ দেবনাথের স্বাক্ষরিত কপি দেওয়া হবে৷ বইচই ডট কমে এই বিজ্ঞাপনটি দেখে অনেক পাঠক লেখকের স্বাক্ষরিত বইলাভের আশায় কিনে ফেলেন বইটি৷ স্বাভাবিক ভাবেই বইটি হাতে পাওয়ার পর সকলেই নারায়ণ দেবনাথের স্বাক্ষরটি দেখতে বই খোলেন। এই স্বাক্ষরটি দেখে হতাশ হয়ে পড়েন সকলে৷ স্বাক্ষরটি কোনো অরিজিনাল স্বাক্ষর নয়, আসল স্বাক্ষরের অনুকরণ করে বসানো স্ট্যাম্পের ছাপ৷   

স্বাক্ষরটি জাল করার অভিযোগটা যে কেবল নিছকই অভিযোগ তাও কিন্তু নয়। পুরো বিষয়টি শুধু অভিযোগ বলেও উড়িয়ে দেওয়া ভুল হবে৷ কারণ ইতিমধ্যে সোশ্যাল সাইটে এ নিয়ে প্রকাশক, ডিস্ট্রিবিউটার ও পাঠকদের মধ্যে বিতর্ক বহুদূর গড়িয়েছে। দু'পক্ষের মধ্যে বাগ-বিতণ্ডা দেখা যাচ্ছে। কয়েকজন পাঠক বইপোকা নামক একটি ফেসবুক গ্রুপে স্বাক্ষর জাল করার ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করেও তুলে ধরেছেন৷ যেমন যে পৃষ্ঠাতে স্বাক্ষর করা হয়েছে তার অপর পৃষ্ঠাতে কোনো ছাপ নেই। সাধারণত ডট পেনে সই করলে পরের পৃষ্ঠাতে কালির ছাপ থাকে। কিন্তু এই বইতে তার কোনো চিহ্ন নজরে আসেনি। কেউ কেউ বলেছেন এতগুলো কপিতে সই করাটা ৯৫ বছরের বর্ষীয়ান শিল্পী নারায়ণ দেবনাথের পক্ষে খুব জটিল। তবে সেটাকে প্রকাশক ও বিপণী সংস্থা 'স্বাক্ষরিত' সংখ্যা বলে দাবি করেছিল৷ বহু পাঠক প্রকাশক ও বিপণী সংস্থার বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ করে বলেছেন প্রকাশকদের সমাজের প্রতি একটা বড়ো দায়বদ্ধতা আছে, তাদের নিজেদের ভুল স্বীকার করতে হবে৷ তারা বইটি পুনরায় বিক্রি করতে চাইলে ফ্যাসিমাইল স্বাক্ষরের ব্যাপারটা স্বীকার করতে হবে। 

দীপ প্রকাশনী ও বইচইকে প্রবল ভাবে পাঠকদের রোশের মুখে পড়তে হয়েছে।বিতর্কের মাঝেই বইচইয়ের কর্ণধার পাঠকদের সামনে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন৷ তিনি জানিয়েছেন "গতকাল থেকে বইটির স্বাক্ষর নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তার জন্য আমরা দুঃখিত। কোনো পাঠকের মনে যদি অসন্তোষ জমা থাকে তাহলে আমাদের অফিসে এসে তিনি বইটি রিটার্ন করতে পারেন। অর্ডার ও বইটির টাকা দুটোই ফেরত দেওয়া হবে।" 

বইচই প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেও বিতর্ক এতটুকুও কমেনি৷ কেউ প্রকাশকদের আক্রমণ করছেন, কেউ প্রকাশকদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন, কেউ বইপোকা গ্রুপকে আক্রমণ করছেন, কেউ পাঠককে, যেন কেউ কাউকে এতটুকুও জায়গা ছাড়তে রাজী নয়। তবে আসল দোষটা কার? খুব শীঘ্রই হয়তো জানা যাবে। আমাদের নিউজ পোর্টালের তরফে প্রতিবেদনের শেষে একটাই অনুরোধ করবো যে প্রকাশক-পাঠক ও গ্রুপ প্রকাশ্যে কাদা ছোঁড়াছুড়ি না করে ঘটনার আসল দোষীকে বের করে সমস্যা মিটিয়ে নিক। এমন বিতর্ক দিন দিন বাড়লে বাংলা বইয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। অতএব সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া হোক৷ 

প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক    


No comments