বাউল জগতে ছন্দপতন, চলে গেলেন বাউল তন্ময় মজুমদার
বলিউডের ঢক্কানিনাদের মধ্যেই নিঃশব্দে না ফেরার দেশে চলে গেলেন অসাধারন প্রতিভাধর লোকশিল্পী বাউল তন্ময় মজুমদার। বাঁকুড়ার অখ্যাত লোখেশোল গ্রামের এক অনটনক্লিষ্ট সঙ্গীতপ্রেমী পরিবারের ছোট ছেলে তন্ময় নিতান্ত শৈশবে তালিম শুরু করেন তাঁর বাবার কাছেই। তবলা, হারমোনিয়াম, খমক ও দোতারায় হাত জমে উঠলে দীর্ঘ বারো বছর শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিক্ষালাভ করেন এক পরিচিত শিক্ষকের কাছে। মাত্র ছয় বা সাত বছর বয়স থেকেই তন্ময় তাঁর বাবার সঙ্গে মঞ্চে পরিবেশন শুরু করেন। এরপর বিশ্ববিখ্যাত সাধনদাস বৈরাগ্য ও ভজনদাস বৈরাগ্যর "মনের মানুষ" ও হাটগোবিন্দপুরের আশ্রমে থেকে তালিম নিয়েছেন লোকসঙ্গীত এবং দোতারা বাদনের।
তন্ময়ের অমর্ত্য দোতারা বাদনের অদ্বিতীয়তার চাবিকাঠি ছিল তাঁর সুদীর্ঘ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিক্ষা। বিশেষত দরবারী কানাড়া ছিল তাঁর প্রাণের কাছের রাগ। বহু মহাজনী পদে এই দরবারী কানাড়ার অনবদ্য প্রয়োগ তাঁর বাদনকে দিয়েছে অবিস্মরণীয় স্বকীয়তা। জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও ভিয়েনায় তাঁর দোতারা বাদন ও কণ্ঠসঙ্গীত স্মরণীয় হয়ে থাকবে বহুকাল। ভারতের বহু রাজ্যেও অনুষ্ঠান করেছেন তন্ময়। অথচ এলিটিজম কোনও কালেই বাসা বাঁধেনি তাঁর মননে।
গ্রামবাংলার মাঠপ্রান্তরে অনুষ্ঠিত নিতান্ত অনাড়ম্বর মাটিজ সাধুসঙ্গেও সর্বদা দেখা মিলতো এই ক্ষণজন্মা শিল্পীর। "বাংলা গানের জগৎ" সহ বেশ কিছু অতি জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেলের চিরবঞ্চিত মূলধন তন্ময় মজুমদার আজ তাঁর বৃদ্ধ সংগীতজ্ঞ পিতা, দুই শিশু, মা, স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী দাদাকে ফেলে রেখে আত্মহননের পথ বেছে নিলেন। আঞ্চলিক ভাষায় গুটিকতক সিনেমা করা বলিউডি "তারকা"র আত্মহত্যায় যখন রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়ের সমতুল্য অশ্রুবন্যায় ভেসে যায় সামাজিক মাধ্যম, তখন এই বাংলার প্রকৃত প্রতিভাবান লোকশিল্পী নীরবে "তারা" হয়ে গেলেন চিরতরে।
তন্ময়ের মৃত্যুতে গভীর শোক জ্ঞাপন করেছেন সাধনদাস বৈরাগ্য, মাকি কাজুমি, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লোকশিল্পী তথা শিক্ষক শ্রী বিভাস রায়, ফকির সাদেক আলি সহ দুই বাংলার সহস্র গুনমুগ্ধ। তন্ময় তাঁর অননুকরণীয় সঙ্গীত প্রতিভার জন্য সুধীজনের মনের মনিকোঠায় অমরত্ব লাভ করবেন। সাধুর বৈকুন্ঠলাভ হোক।
প্রতিবেদন- প্রবাল চক্রবর্তী
Post a Comment