Header Ads

জাদুসম্রাট পি.সি সরকার যার কাছে জাদু শেখেন, তিনি কে?


ম্যাজিকের সম্রাট প্রতুলচন্দ্র সরকার ওরফে পি.সি সরকার। যিনি ভারত, জাপানসহ প্রায় ৭০ টি দেশে জাদু প্রদর্শন করে সম্মান অর্জন করেন। মায়াজাল ও জাদুবিদ্যায় বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ যাদুকরের তালিকায় নাম রয়েছে তাঁর। কিন্তু আপনারা কী জানেন এই ম্যাজিকগুলির শিক্ষা তিনি কার কাছ থেকে পেয়েছিলেন? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকে জেনে নিন পি.সি সরকারের গুরুকে। বিশ্ববিখ্যাত যাদুকর গণপতি চক্রবর্তীর কাছ থেকে দীক্ষা নেন পি.সি সরকার৷ একজন সুদক্ষ পরমর্শদাতা হিসেবে গণপতি চক্রবর্তীকে পেয়েছিলেন পি.সি সরকার। 


অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন 'দুর্বার মুনি' বলে গণ্য করা হতো তাঁকে। জাদুবিদ্যার নিজস্ব বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে তাক লাগিয়ে দিতেন গোটা বিশ্বকে। প্রিয়নাথ বসু প্রতিষ্ঠিত বিলাসবহুল সার্কাস দল গ্রেট বেঙ্গল সার্কাসের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন। সার্কাসের মধ্যে তিনি আশ্চর্য সব ম্যাজিক দেখাতেন৷ তিনি ইলিউশন বক্স', 'ইলিউশন ট্রি' ও 'তাস'এর বিস্ময়কর জাদু দেখাতেন। জাদুবিদ্যার বশে তিনি প্রফসর বোসের কোলের ছেলে হয়ে উঠেছিলেন। 

তিনি অদ্ভুত সব খেলা দেখাতেন। যেমন টাকার নৃত্য বলে একটি বিশেষ ম্যাজিক দেখাতেন তিনি। একটি টাকাকে কাঁচের ডিকেন্টারের ভেতর রেখে মুখ বন্ধ করে সেখানে দর্শক অনুমতি করবে, সেইখানে টাকার নৃত্য করানো যাবে৷ ম্যাজিশিয়ান যেমন ভাবে নাচতে বলবে টাকাটিও সেই ভাবে নৃত্য করবে। এছাড়াও আরো অনেক রকমের ম্যাজিক জানতেন তিনি। তাস পামিং করার কৌশল, তাস ফোর্সিং, তাস পাসিং, উড্ডীয়মান তাস, পিকচার ফ্রেম, ভ্রমনশীল টাকা, থট্ রিডিং, ডিমিনিসিং কার্ড, আশ্চর্য্যজনক লেডি ভ্যানিস, কার্ড স্টার, জাম্পিং কার্ড, টাকার বৃষ্টি, দৌড়দার টাকা, টাকা-ধরা লাঠি, অদ্ভুত তাসের আবির্ভাব, টুপি ও তাসের বাজী প্রভৃতি হরেক রমকের ম্যাজিক তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রদর্শনীতে দেখাতেন। 'যাদুবিদ্যা' নামক একটি বইতে তিনি প্রতিটি ম্যাজিকের কৌশল লিখে রেখেছিলেন৷ ম্যাজিক শেখার জন্য উপযুক্ত বই হলো এই 'জাদুবিদ্যা'। 

গণপতি চক্রবর্তী কড়া মেজাজে রুক্ষভাবে কথা বলে খেলা দেখাতেন। যার কারণে সেকেলের বেশিরভাগ লোক তাঁকে মজা করে 'দুর্বাসা মুনি' বলে সম্বোধন করতো। পি.সি সরকারও প্রথম দিকে চমকে গিয়েছিলেন তাঁর জাদু সম্পর্কিত পারদর্শিতায়। পি.সি সরকার সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় স্কুলে গণপতি চক্রবর্তীর ম্যাজিক শো দেখেছিলেন। তিনি গণপতি চক্রবর্তীর আকর্ষণীয় জাদু দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। সেই থেকে তিনি ঠিক করেন গণপতি চক্রবর্তীর কাছে ম্যাজিক শিখবেন। খুব তাড়াতাড়ি সেই সুযোগও চলে আসে পি.সি সরকারের কাছে। গণপতি চক্রবর্তীর সাথে কথা বলে তিনি ম্যাজিক শেখা শুরু করেন। পরবর্তীকালে এই গণপতি চক্রবর্তী হয়ে উঠলেন পি.সি সরকারের গুরু। এমন গুরু সচরাচর মেলেনা। বিশ্ববিখ্যাত মানুষদের কাছে যে-কোনো কাজ শেখার গুরুত্বই আলাদা। তবে তাদের সুযোগ্য শিষ্য হওয়াও সহজসাধ্য ব্যাপার ছিল না। কিন্তু পি.সি সরকার পেরেছিলেন গণপতি চক্রবর্তীর সুযোগ্য শিষ্য হতে। 

গণপতি চক্রবর্তী এমন কিছু শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাজিক দেখাতেন যে পরাধীন ভারববর্ষে ব্রিটিশদের ঘুম উড়ে যাওয়ার উপক্রম হতো। অত্যধিক নিয়মানুবর্তিতার সাথে তিনি ম্যাজিক প্রদর্শন করতেন। আধুনিক জাদুবিদ্যার জনক হিসেবে গণ্য করা হয় গণপতি চক্রবর্তীকে। তিনি একজন সফল চিত্রকরও বটে৷ গ্রেট বেঙ্গল সার্কাসে প্রথমে তিনি ছবি আঁকার কাজ হিসেবে নিযুক্ত হন৷ যদিও ম্যাজিক প্রথম থেকেই তিনি জানতেন তবে তাঁর বহিঃপ্রকাশ ঘটাতেন না। কিন্তু কথায় আছে প্রতিভা কখনো চাপা থাকে না৷ প্রফেসর প্রিয়নাথ বসু ধরে ফেলেছিলেন তাঁর প্রতিভাকে। গণপতি চক্রবর্তীর সুপ্ত প্রতিভাকে ছড়িয়ে দিতে দায়িত্ব নেন প্রিয়নাথ বসু। তাঁকে সার্কাসে ম্যাজিক দেখানোর দায়িত্ব দিলেন। এরপর থেকেই তিনি হয়ে উঠলেন আকর্ষণীয় জাদুকর। ম্যাজিকের ইতিহাসে এই বাঙালির নাম আজীবন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।


তথ্যসূত্র- সিঙ্গাপুর আর্কাইভ, বাংলা লাইভ   

No comments