Header Ads

সাপ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্ব সর্প দিবসে সংকল্পবদ্ধ হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ


আজ থেকে কয়েক লক্ষ বছর আগে আনুমানিক ডাইনোসর যুগের শেষ পর্যায়ে পৃথিবীতে উৎপত্তি হয়েছিল সাপের। এই সাপকে লোকে অযথা ভয় পান। এর মূল কারণ হলো সাপের শরীর বিষে ভরা, সাপে কামড় দিলে মানুষের মৃত্যু হয়। তাই যুগ যুগ ধরে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক, আধ্যাত্মিকতা,কুসংস্কার ও নানান লোকবিশ্বাসের ঘনঘটা পরিলক্ষিত হয় আসছে৷ কিন্তু সাপও যে পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ একথা আমরা অনেকেই জানিনা। 


সাপের বিষ থেকে অ্যান্টিভেনাম, কেমোথেরাপি ও হার্টের ওষুধ তৈরি হয়। সারা পৃথিবীর মধ্যে ভারতে সাপের বিষ থেকে সবচেয়ে বেশি ওষুধ তৈরি হয়৷ আর  বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় সাপের ভূমিকা অপরিসীম। সেই ভূমিকার কথা মাথায় রেখে প্রতিবছর ১৬ ই জুলাই দিনটিকে বিশ্ব সর্প দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এদিন সাপ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পরিবেশন সংগঠন বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে থাকে।

বর্ষাকালে গ্রামবাংলাতে সাপের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়৷ গ্রাম-গঞ্জে চন্দ্রবোড়ার কামড়ে এই সময় বহু লোকের মৃত্যু হয়। চাষের জমির ধারে ও ঝোপের মধ্যে বিচরণ এই সাপের। এই সাপের আতঙ্কের জেরে বহু মানুষ অনেক বিষহীন সাপকেও ঘায়েল করে দেয়। অতিরিক্ত পরিমাণ বিষহীন সাপ হ্রাস পেলে বাড়তে থাকে বিষধর সাপেদের আনাগোনা। তাই লোকালয়ে সাপের আতঙ্ক থেকে বাঁচতে কোনো পরিবেশ সংগঠন ও বনদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করতে হবে সকলকে। যাতে করে সাপেদের নিরাপদ স্থানে ফেরানো যায়। 

বিগত কয়েক বছর ধরে হাওড়া জেলা জুড়ে বিষহীন সাপের সংখ্যা কমে গেছে উল্টে বিষধর সাপের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সাপে কাটার ঘটনাও একই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ বিশ্ব সর্প দিবসে সাপ নিয়ে সচেতনতা গড়তে সংকল্পবদ্ধ হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ। সম্প্রতি সাপে কেটে এক মহিলার মৃত্যু ঘটার পর জগৎবল্লভপুর থানার মানসিংহপুরের বাঘা শ্মশানের কাছে এলাকাবাসীকে সাপের আতঙ্ক কাটাতে ও সাপ যাতে পিটিয়ে না মারা হয় তার জন্য সচেতনতার পাঠ দেওয়া হয় হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ ও তার সাথী সংগঠন জগৎবল্লভপুর 'অনুভব' এর পক্ষ থেকে৷ 

চলতি বছরে হাওড়ার গ্রামীণ এলাকা থেকে প্রায় ৬০০ সাপ উদ্ধার করে বন দফতরের হাতে তুলে দিয়েছে হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ। এলাকার মানুষ এখন সাপ দেখলেই খবর দিতে শিখেছেন এই সংগঠনের হেল্পলাইনে৷ এই সংগঠনের সক্রিয় সদস্যরা জীবন বাজি রেখে সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে এ কাজ চালিয়ে আসছে। 

অনেক সময় সাপ ধরতে গেলে বিপদের সম্ভাবনা থাকে। তাই একটি সাপ ধরতে গেলে আগে সাপটির বিষয়ে সর্প বিশেষজ্ঞদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তাদের বিশেষ সাহায্য নিয়ে সাপ ধরার নানান কৌশল কর্মশালার মাধ্যমে শিখতে হবে বা অন্যকেও শেখাতে হবে। সাপ ধরার সঠিক কৌশল না জানলে সাপের কামড়ে মৃত্যুও হতে পারে। কিন্তু এই বিষয়গুলো সঠিক ভাবে আয়ত্ত করে নিয়েছে এই সংগঠন। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মশালার ব্যবস্থা করছে। বিশ্ব সর্প দিবসে সুদৃঢ় সংকল্প হাতে উদ্যোগ নেয় এই সংগঠন। 

পরিবেশ মঞ্চের সম্পাদক শুভ্রদীপ ঘোষ জানান - "হাওড়া জেলায় সারা বছর ধরেই আমরা নানা অনুষ্ঠানে বা নানা অজুহাতে সুযোগ পেলেই সাপ নিয়ে সতর্ক ও সচেতন করার কাজ করে আসছি। সেই সঙ্গে যখনই জেলার যে প্রান্তে খবর পেয়েছি সাপ উদ্ধারে ছুটে গেছি। সংগঠনের ছেলেমেয়েরা সাপ উদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। এবার আরো দক্ষ ভাবে কাজগুলো করতে চাই। সরকার যদি বন দফতরের মারফত আমাদের আরো এই কাজে উৎসাহ দেয় ও সহযোগিতা করে তাহলে আমরা একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে সাপ নিয়ে অযথা আতঙ্ক, কুসংস্কার ও ভুল ধারণা নিরসন করতে পারবো।"

প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক

No comments