ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী চুনীলাল সিংহ রায়ের জীবনাবসান
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এই দেশের বর্তমান অবস্থা অনেকটাই ব্যথিত করেছিল তাঁকে। তিনি মনে করতেন এ দেশটার আরো অনেক বেশি উন্নত হওয়া দরকার। তিনি বলেছিলেন টাকার কাছে অনেক ছেলেমেয়ে আজ ব্যর্থ হয়ে পড়ছে। যাদের টাকা আছে তারা বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করে চাকরি পাচ্ছে কিন্তু যাদের টাকা নেই তারা কোনোকিছু করতে পারছে না। যা অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক ব্যাপার। তিনি এ দেশের সমসাময়িক রাজনীতি সম্পর্কে বলেছেন যে তাঁর এখনকার রাজনীতি একদম ভালো লাগে না। তিনি হলেন বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী চুনীলাল সিংহ রায়। গত ৭ ই জুন ৯৩ বছর বয়সে জীবনদীপ নিভে গেল তাঁর। বার্ধক্যজনিত সমস্যার কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি হুগলির হরিপালে নিজস্ব বাসভবনে।
স্বাধীনতা সংগ্রামী চুনীলাল সিংহ রায়ের পৈতৃক নিবাস ছিল হুগলির নয়ানগর গ্রামে। পরবর্তীকালে তাঁর পরিবার ঘর বাঁধে হুগলির হরিপালে। কৈশোর বয়সে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন তিনি। যুক্ত হন ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সাথে৷ তিনি আন্দোলনকারীদের গোপনে বুলেটিন বিলি করতেন৷ এ কাজে তাঁকে সাহায্য করতেন তাঁর দুই দাদা পান্নালাল ও জহরলাল। তাঁকে অল্প বয়সেই স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে গিয়ে কারাবরণ করতে হয়েছিল৷ পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেনের সাথে ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক৷ প্রফুল্লচন্দ্র সেনের সাথে তিনি অনেক দুঃসাহসিক কাজেও যুক্ত ছিলেন।
স্বাধীনতার পর তিনি জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন সামাজিক কাজে। রাজনীতি ও আধ্যাত্মিকতা মিলে মিশে যায় তাঁর জীবনধারার সাথে। তিনি চণ্ডীগড় রামকৃষ্ণ মিশনে সক্রিয় ভাবে বহুবার অংশ নিয়েছিলেন। তিনি অকাতরে দান করে গেছেন সাধারণ মানুষকে। ১৯৭২ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর তরফে স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ তাম্রপাত্র দিয়ে সম্মানিত করা হয় তাঁকে। গত বছর আগস্ট মাসে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার অর্জন করেন তিনি৷ সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো বৃদ্ধ বয়সেও এতটুকু স্মৃতিভ্রম হয়নি তাঁর৷ জীবনের শেষ প্রহরেও তাঁর স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে টনটনে জ্ঞান ছিল। আর গতকাল মহাকালের নিয়মে মায়ার পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিতে হলো তাঁকে। রেখে গেলেন স্বাধীনতার অজস্র স্মৃতি হুগলির হরিপালে।
প্রতিবেদন - লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক
Post a Comment