গুটি গুটি পায়ে এক বছর অতিক্রম করলো 'ছবিওয়ালা'
একবছর পেরিয়ে এলো 'ছবিওয়ালা', তাদের ভাষায়, "একটি স্বশিক্ষিত ও অশিক্ষিত শিল্পীদল"। ২০১৯ এর ২৮ শে জুন একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে 'ছবিওয়ালা'। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হলে শিল্পী হওয়া যায় না, এই বদ্ধমূল মানসিকতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এগিয়ে আসেন দক্ষিণ কলকাতার দুই তরুণ শিল্পী সৌরভ মিত্র এবং বিপ্লব ধর। মোট সতেরো জন স্বশিক্ষিত শিল্পীকে নিয়ে শুরু হয় ছবিওয়ালার পথচলা। শিল্পীদের মাধ্যম এবং বিষয় বৈচিত্র্য চোখে পড়ার মতো। বাঁকুড়ার শুভ্রজ্যোতির মুন্সীয়ানা রংপেন্সিলে, নদীয়ার সৌমিত্র কাজ করেন ট্রাডিশনাল তেলরঙে। বর্ধমানের তৌসিফ ডিজিটাল মাধ্যমের খ্যাতনামা শিল্পী। আবার কলকাতার সৌরভ, বিপ্লবদের দক্ষতা অ্যাক্রেলিকে। শিল্পী চিন্ময়ের আঁকেন বিমূর্ত অবয়ব, আবার পারিজাতের ছবি সোচ্চার হয় সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। নিখুঁত জলরঙের কাজে তাক লাগিয়ে দেন মেদিনীপুরের শুভঙ্কর, হাওড়ার অনুপ।
গতবছর জুনে কলকাতার গ্যালারি গোল্ডে আয়োজিত তাদের প্রথম প্রদর্শনীই এনে দেয় অভাবনীয় সাফল্য। অসংখ্য মানুষ ভিড় জমান গ্যালারিতে। তিনদিনব্যাপী এই প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী রৌদ্র মিত্র, পম্পা প্রধান, অমিত মণ্ডল, শ্রীতমা রায়, আলোকচিত্রশিল্পী দীপেশ মিত্র, স্বদেশ মিশ্র প্রমুখ। প্রথম প্রদর্শনীর পর থেকেই জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে ছবিওয়ালার। দর্শকদের ভিড় এবং প্রশংসা অব্যাহত থাকে পরবর্তী প্রদর্শনীগুলিতেও।
কিন্তু এখানেই থেমে থাকতে চাননি ছবিওয়ালারা। শিল্প এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে উত্তরোত্তর বাড়তে থাকা দূরত্বকে কমানোর উদ্দেশ্যে শুরু করেন এক অভিনব প্রদর্শনী। ঝাঁ চকচকে গ্যালারির বদলে শিল্পীরা নেমে এলেন ফুটপাথে। কলকাতার মোহরকুঞ্জের রেলিঙে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো ছবি। অসংখ্য পথচারী দর্শকের প্রশংসা কুড়োলেন তারা। দর্শকদের সাথে কথা বলে জেনে নিলেন তাদের পছন্দ অপছন্দ ইত্যাদি। একইভাবে বীরভূমের সিউড়িতে এবং আসানসোলের ছবিমেলায় আয়োজিত হলো তাদের অভিনব স্ট্রিট এক্সিবিশন। যথারীতি স্থানীয় দর্শকদের মন জয় করে ফেললেন সহজেই।
কিন্তু পরবর্তী পরিকল্পনাগুলিতে বাধ সাধলো দীর্ঘ লকডাউন। তবে যারা গ্যালারির স্টিরিওটাইপ প্রথা ভেঙে রাস্তায় নামতে পারেন, তাদের আটকানো মুশকিল। করোনার চেইন ভেঙে শিল্পপ্রেমীদের একটি চেইন তৈরী করতে চাইলেন এরা। সোশ্যাল ডিসটেন্সকে বজায় রেখে সোশ্যাল মিডিয়াতেই অনুষ্ঠিত হলো ছবিওয়ালার একমাসব্যাপী ভার্চুয়াল এক্সিবিশন "কোয়ারেন্টাইন ক্রিয়েটিভিটি"। তবে একটু অন্যভাবে। শুধু দলের সদস্যরাই নন, অংশগ্রহণ করলেন দর্শকরাও। প্রতিদিন দিনের শুরুতে একটি বিষয় নির্বাচন করে দেওয়া হতো, সারাদিন ধরে মানুষ সেই বিষয়ের উপর ছবি এঁকে জমা দিতেন, এবং রাত্রে নির্দিষ্ট একটি সময়ে সেদিনের সকলের ছবি একসাথে প্রদর্শিত হতো। করা হতো। একমাসে জমা পড়েছে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি ছবি। অংশ নিয়েছেন প্রায় দুশো জন মানুষ, যার মধ্যে শতাধিক মানুষ প্রতিদিনই এঁকেছেন, একে অপরের আঁকার সাথে পরিচিত হয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন। আঁকার চর্চায় অভ্যস্ত আঁকিয়েদের পাশাপাশি যোগ দিয়েছেন এমন বহু মানুষ, যারা দৈনন্দিন ব্যস্ততায় ভুলতে বসেছিলেন তাদের প্রিয় এই শখকে। এঁকেছেন রঘুনাথ সাহু, রৌদ্র মিত্র, সুমিত রায়ের মতো বহু খ্যাতনামা শিল্পীরা। পিছিয়ে থাকেনি খুদে কচিকাঁচারাও ।
সংস্থার অন্যতম কর্ণধার সৌরভ মিত্রের কথায়, "গ্যালারি এক্সিবিশন হবে মাঝে মাঝে। তবে আমরা স্ট্রিট এক্সিবিশনগুলো নিয়েও ভীষণ আগ্রহী। যারা গ্যালারিতে আসতে পারেন না, তাদের কাছে গ্যালারিকে নিয়ে যাবো এভাবেই। বাংলার সবকটি জেলার মফস্বল এবং প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে আরও এরকম প্রদর্শনী করার ইচ্ছে রয়েছে। এছাড়াও কিছু ওয়ার্কশপ এবং অন্যান্য পরিকল্পনার কথা ভাবা হচ্ছে। মাত্র একবছরের মধ্যেই এত মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে ছবিওয়ালা, এত মানুষের ভালোবাসা পাবো, এটা সত্যিই আশাতীত ব্যাপার। এভাবেই সবাইকে পাশে পেলে সমস্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে পারবো বলেই আশা রাখছি।"
প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক
Post a Comment