কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সাঁওতালি ভাষায় পি.এইচ.ডি. করেন ড. ব্যোমকেশ চক্রবর্তী
মেদিনীপুর জেলার
অন্যতম শিক্ষাবিদ, কবি ও ভাষা গবেষক ছিলেন ব্যোমকেশ চক্রবর্তী। সাঁওতালি ভাষা ও
বাংলা ভাষার সম্পর্ক নিয়ে তাঁর গবেষণা তাঁকে খ্যাতিমান করে তোলে। তিনি তৎকালীন মেদিনীপুর জেলার (বর্তমান পশ্চিম
মেদিনীপুর) খড়ার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে।
বাঙালি শুধু বাংলা
নিয়ে কাজ করে এমন নয় বরং বিভিন্ন ভাষাকে সমৃদ্ধ করার কাজও তাকে বার বার আকর্ষণ
করে। সাঁওতালি ভাষা হোক বা ত্রিপুরার কাকবরক সমস্ত ভাষার উন্নয়নেই বাঙালির ভূমিকা
চিরকাল। এরকমই একজন ব্যক্তির উদাহরণ হল ড. ব্যোমকেশ চক্রবর্তী। ড. সুনীতি কুমার
চট্টোপাধ্যায়, ড. সুকুমার সেনের সাথে ড. ব্যোমকেশ চক্রবর্তীর ঘনিষ্ট যোগাযোগ ছিল।
তিনি কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুইবার স্নাতকোত্তর হন। একবার বাংলায় আর একবার ইংরেজিতে। তারপর তিনি
সাঁওতালি ভাষায় ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি হলেন
প্রথম ব্যক্তি যিনি সাঁওতালি ভাষায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ
করেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আদিবাসীদের সংস্কৃতি নিয়ে তিনি আকৃষ্ট হন তাই তিনি এ
নিয়ে গবেষণা করেন। সাঁওতালি
ভাষার ধ্বনিবিজ্ঞান, ধ্বনিতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব, রূপমূলতত্ত্ব,
শব্দার্থতত্ত্ব, সাঁওতালি
সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করেন। বাংলা ভাষায় সাঁওতালি ভাষার এবং সাঁওতালি ভাষার উপর
বাংলা ভাষার কতটা প্রভাব ছিল এগুলোই ছিল ওনার প্রধান গবেষণার বিষয়। তিনি এই গবেষণার মাধ্যমে বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কিত
বিষয় নিয়ে আলোচনার নতুন নতুন দিক খুলে দেন এবং গবেষণার নতুন ক্ষেত্র তৈরিতে
সাহায্য করেন। বাংলা ভাষার বিবর্তনের ধারা বেশ কঠিন ভাবে হয়েছে। এখনও বিবর্তনের সব
ধাপ পরিষ্কার ভাবে জানা সম্ভব হয়নি তাই এই সমস্ত গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাষা
গবেষণায় ওনার কাজগুলি যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। এক কথায় তিনি ছিলেন মেদিনীপুর
জেলা তথা সমগ্র বাংলার গর্ব।
প্রথম জীবনে তিনি একটি
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। তারপর তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের কাপগাড়িতে
অবস্থিত সেবা ভারতী মহাবিদ্যালয় এবং মুর্শিদাবাদের কান্দিতে অবস্থিত রাজা বীরেন্দ্র
চন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ হন। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ওনার কাজ গুলো
এখনও বেঁচে আছে আমাদের মধ্যে।
Post a Comment