'কুমোরটুলির পাশে' একঝাঁক তরুণ-তরুণীর অভিনব উদ্যোগ
মৃৎশিল্পীদের মূর্তি গড়ার অন্যতম পীঠস্থান হলো কুমোরটুলি। উত্তর কলকাতায় অবস্থিত এই স্থানে সারাবছর চরম ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যায়। এই অঞ্চলটি 'পটুয়াপাড়া' নামেও অধিক পরিচিত। দেবদেবীর মূর্তি গড়া থেকে মৃৎশিল্পের নমুনা তৈরি সচক্ষে দেখার উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান হলো কুমোরটুলি। বছরের ছয় ঋতু বারো মাস জুড়ে এখানে মূর্তি বানানো হলেও দুর্গাপূজা শুরু হওয়ার কয়েকমাস আগে হাড়খাঁটুনি দিয়ে মূর্তি বানানো হয়। সারা বিশ্বব্যাপী কুমোরটুলির খ্যাতি ছড়িয়ে রয়েছে। আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, ইতালি, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া, সুইডেন ও আফ্রিকাতে বসবাসকারী প্রবাসী বাঙালিরা কুমোরটুলি থেকে দুর্গামূর্তি সংগ্রহ করে থাকেন।
কুমোরটুলিকে কেন্দ্র করে বহু গরীব মানুষের সংসার চলে৷ হাজার হাজার মানুষ মৃৎশিল্পকে নিজেদের পেশা বানানোর জন্য এখানে কাজও শিখতে আসেন৷ প্রতি বছর বিশ্বের ৯৩ টি রাষ্ট্রে কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা প্রেরণ করা হয়। যে সংখ্যাটা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিমা বানিয়ে একবুক আশা-আকাঙ্খা নিয়ে বাঁচে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা। করোনার আবহে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের পেটে টান পড়েছে৷ করোনার আবহের মাঝেই আমফানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড কুমোরটুলি। প্রবল বৃষ্টিতে শহরের রাস্তায় জমা জলে ভেসে গেছে বহু প্রতিমা৷ এক বিরাট লোকসানের স্বীকার হতে হলো কুমোরটুলিকে।
আমফানের প্রভাবে বিপর্যস্ত কুমোরটুলির পাশে দাঁড়াতে এক বৃহৎ উদ্যোগে সামিল একঝাঁক তরুণ-তরুণী। যে উদ্যোগের নাম 'কুমোরটুলির পাশে'। হোয়াটস অ্যাপ লাইব্রেরি ও আর্টিস্ট ফোরামের যৌথ প্রয়াসে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের মনে আশার আলোর সঞ্চার করতে এগিয়ে আসতে দেখা গেলো তাদের। অল্প ব্যয়ে 'কুমোরটুলির পাশে' উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন মানুষের কার্টুন, পোট্রের্ট ও ক্যারিকেচার এঁকে দিচ্ছেন৷ এর ফলে সংগৃহীত অর্থ পৌঁছে দেওয়া হবে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের। এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত রয়েছেন মণিদীপা শীল, ঋত্বিকা চক্রবর্তী, উজান গুহ, মৌলি সাহা, শুভদীপ দে, রক্তিমা দে এবং অভিনন্দা-সহ বেশ কয়েকজন শিল্পী।
হোয়াটস লাইব্রেরির পক্ষ থেকে আমফান ঝড়ের প্রচণ্ড তাণ্ডবের ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্রাউড ফান্ডিং এর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বইপ্রেমী বহু মানুষ আন্তরিক ভাবে এগিয়ে এসেছেন। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন একশো টাকার বেশি ত্রাণ তহবিলে দান করলে দাতা যদি চান, তবে তাঁর পোট্রেট বা তাঁর ক্যারিটেচার এঁকে তাঁকে অভিবাদন জানানো হবে। এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত আর্টিস্ট ফোরামের শিল্পীরা রাতদিন এক করে বিপুল পরিমাণ পোট্রেট আঁকার কাজ করে চলেছেন। সেই আঁকাগুলো সময়মতো পৌঁছে দেওয়া হবে ত্রাণদাতাদের কাছে।
এ উদ্যোগের প্রসঙ্গে শিল্পী মণিদীপা শীল লিটারেসি প্যারাডাইসকে জানান "কলেজ স্ট্রিট আর কুমোরটুলি দুটো জায়গা থেকে আজ আমি দুটো মিটিং সেরে এসেছি। বইপাড়া ও কুমোরটুলির অবস্থা দেখে ভীষণ খারাপ লাগলো। তবে বইপাড়ার জন্য বেশ কিছু ফান্ড আসছে। ক্ষতিপূরণ পুরোপুরি সম্ভব নয়,কিন্তু একটু একটু করে ঠিক হবে। এত বইপ্রেমী মানুষ পাশে দাঁড়াচ্ছেন, ভালো তো হতেই হবে। আমরা হোয়াটস অ্যাপ লাইব্রেরির তরফ থেকে বইপাড়ার জন্য তিনজায়গায় করে অনেক টাকাই তুলে দিয়েছি। বাকি মিত্র অ্যান্ড ঘোষ থেকে যে কমিউনিটি কিচেন চলছে ওখানের জন্যে যাবে।
দ্বিতীয়টি হলো কুমোরটুলির। ওখানের সমস্ত মানুষ আশাবাদী যে পুজো হবেই। ওনারা আস্তে আস্তে কাজে ঢুকতে চাইছেন। আস্তে আস্তে আবার প্রাণ ফিরছে। আমরা কিছু আর্টিস্ট যে এঁকে যে টাকা তোলার কাজ শুরু করি তাতেও হোয়াটসঅ্যাপ লাইব্রেরী এগিয়ে আসে।ওখানের কমিউনিটি কিচেনের জন্য আমরা রেশন পাঠাবো। এটার সমস্ত আপডেট সোশ্যাল মিডিয়াতে দেওয়া হবে।
খুব তাড়াতাড়ি টাকা নেওয়া বন্ধ হবে। আপনারা এখনো যারা পাঠাতে চান পাঠাতে পারেন। আমরা কাল রাত ১২টা থেকে আর্টিস্টদেরকে অব্যাহতি দিয়েছি। যারা কাল রাত ১২ টা অবধি আঁকানোর কথা বলেছেন তাদেরটা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আপনারা এমনি চাইলেও টাকা পাঠাতে পারেন।"
যারা কুমোরটুলির পাশে দাঁড়াতে মুক্তহস্তে দান করতে চান, তাদের জন্য টাকা পাঠানোর ডিটেইলস নীচে দেওয়া হলো
Gpay
9476248451
Arkaprabha Chakrabartty
Phonepe
9846232708
Monideepa Sil
Paytm
9083095190
Debajyoti Mukherjee
Account no:
37071574059
Monideepa Sil
IFSC
SBIN0007961
প্রতিবেদন- সুমিত দে


Post a Comment