আমফান কবলিত সুন্দরবনের ৩২৫ টি পরিবারের হাতে ত্রাণ প্রদান করলো বাংলা পক্ষ
অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা সুন্দরবন। যার সবুজের মায়াতে মুগ্ধ হতে হয় বারবার৷ যার চারদিকে অথৈ জল আর জলের ধারে শান্তির নীড়। পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ হিসেবে রয়েছে তার নাম ডাক। আর এর মাঝেও এখানকার মানুষের দিনরাত বেশ কষ্টের। জীবনটা তাদের অভিযানের মতো। জলে কুমির ডাঙায় বাঘের সাথে লড়াই করে বাঁচতে হয় এদের। কেবল বাঘ বা কুমিরই নয় আজকাল প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগেরও সম্মুখীন হতে হয়। এই তো সেদিন সাইক্লোন আমফানের আঘাতে ধ্বংসের মুখে আজ সুন্দরবন। ভেসে গেছে বহু মানুষের শেষ সম্বল। জলমগ্ন গ্রামের পর গ্রাম। কোথাও ভেঙ্গে গেছে নদীর বাঁধ, কোথাও ভেঙ্গে পড়েছে বড় বড় গাছ। এমন অবস্থার মাঝেও নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে সুন্দরবনের মানুষ।
বাঁধ ভেঙ্গে সমুদ্রের নোনা জল ঢুকে গেছে জমির পর জমিতে। নোনা জলের প্রকোপে ভেড়ির সমস্ত মাছ মারা গেছে। ফলে মৎস্যচাষীদের মাথায় হাত। মৎস্য চাষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনে। এই ক্ষয়ক্ষতি থেকে মৎস্য চাষের স্বাভাবিক অবস্থায় বেরিয়ে আসতে ঠিক কতদিন লাগবে, কেউ জানেন না। সুন্দরবনের মানুষের চরম দূর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়াল হুগলি বাংলা পক্ষ ও সুমঙ্গল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। গত ৭ ই জুন হুগলি বাংলা পক্ষ ও সুমঙ্গল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে আমফান আক্রান্ত সুন্দরবনের শীতলীয়া গ্রামের প্রায় ৩২৫ টি পরিবারের হাতে সামর্থ্য মতো ত্রাণ তুলে দেওয়া হলো।
তারা গ্রামে পৌছে পুরো গ্রাম পরিদর্শন করে। এ গ্রামের এক ভয়াবহ চিত্র ক্যামেরাতে বন্দী করে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করেছে তারা। যে ছবিগুলোতে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে বাঁধ ভেঙ্গে গ্রামে লবণাক্ত জল ঢুকে পড়েছে। পুরো ভেড়ির জল নষ্ট হয়ে গেছে। বহু বিঘা জমি জলের তলায় চলে গেছে। সেখানকার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি দেখে তাদের অনুমান যে ভেড়ি নির্মাণ ও মৎস্য চাষবাস উপযুক্ত করতে এক থেকে দুই বছর সময় লাগতে পারে।
সুন্দরবনের শীতলীয়া গ্রামের মানুষদের ত্রাণের জন্য দেশ বিদেশের অনেক বাঙালি হুগলি বাংলা পক্ষ ও সুমঙ্গল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির পাশে দাঁড়িয়েছেন। শীতলীয়া গ্রামের মানুষদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে আলু, পেঁয়াজ, নুন, ছাতুর প্যাকেট, সোয়াবিনের প্যাকেট, চিঁড়ে, বাতাসা, সুজির প্যাকেট, সাবান, ORS, কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র (যেমন কাটাছেঁড়ার মলম, ফাংগাল ইনফেকশন প্রতিরোধকারী মলম প্রভৃতি), মোমবাতি ও দেশলাই আর এক হাজারেরও বেশি নতুন জামা-কাপড়।
বাঙালির দুঃসময়ে এভাবে বাঙালিকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমফানের পরবর্তী সময়ে দাঁড়িয়ে মনে রাখতে হবে আমফানকে রাষ্ট্রীয় বিপর্যয় হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। কোনো সরকার সঠিক কর্মসূচী নেয়নি সুন্দরবনকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোর। একমাত্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন, জেলাভিত্তিক বিভিন্ন পেশার সাধারণ মানুষ ও শিল্পসমাজের মানুষই কিন্তু সুন্দরবনকে সাহায্য করে চলেছে। সোশ্যাল মিডিয়া খুললে এটাই চোখে পড়ছে৷ সুন্দরবনের পাশে যারা বাঙালির জন্য কাজ করছেন তাদের শতকোটি কুর্নিশ। হুগলি বাংলা পক্ষ ও সুমঙ্গল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির মহৎ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষেরা।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment