Header Ads

সিরাজ কলকাতা পুনরুদ্ধার করে নাম রাখলেন আলিনগর


স্বাধীনতার ইতিহাসে যে যুদ্ধের মাধ্যমে ব্রিটিশদের আগমন ঘটেছিল তা হলো পলাশীর যুদ্ধ।  সিরাজউদ্দৌল্লার সাথে ব্রিটিশদের এই যুদ্ধ কারোরই অজানা নয়। সিরাজউদ্দৌলার সেনাপতি মীরজাফরের চক্রান্তে হার মানতে হয়েছিল তাঁকে। মীরজাফর চক্রান্ত না করলে পলাশীর যুদ্ধে জয়ী হতেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। মীরজাফর না থাকলে বাংলার চিত্রটা অন্যরকম হতো। বাংলার প্রতিটি যুগে যুগে মীরজাফরের মতো বিশ্বাসঘাতকেরা বাংলার চরমতম ক্ষতি করেছেন। ব্রিটিশ  আমলে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ধরিয়ে দিতেন মীরজাফরের মতো ষড়যন্ত্রকারীরা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও এমন ষড়যন্ত্রকারীর দেখা পাওয়া গেছে, যাদের ওপারে রাজাকার বলা হয়। বর্তমান যুগেও মীরজাফর বা রাজাকারের সংখ্যা কিন্তু বাংলাতে কম নেই ৷ 


নবাব সিরাজউদ্দৌলা পলাশী যুদ্ধে পরাজিত হলেও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তিনি তাঁর ক্ষমতা বিশেষ ভাবে প্রদর্শন করেছিলেন ৷ তিনি ছিলেন বাংলার শেষ নবাব৷ তিনি এতোটাই শক্তিশালী নবাব ছিলেন যে ব্রিটিশরা পর্যন্ত তাঁকে ভয় পেতেন। ইতিহাসের দিকে পিছন ফিরে তাকালে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে পলাশীর যুদ্ধ এক রকম অনিবার্য ছিল৷ একদিকে দেশপ্রেমিক, তেজী, স্বাধীনচেতা এক নবাব, অন্যদিকে চালাক ব্রিটিশদের দেশীয় দোসরদের মাধ্যমে কৌশলে স্বার্থ উদ্ধারের অপচেষ্টা। ব্রিটিশরাও বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন যে ক্ষমতা দিয়ে বাংলা দখল করা যাবেনা। কূটকৌশলকেই কাজে লাগাতে হবে। ব্রিটিশরা ক্ষমতার বদলে কূটকৌশলকে কাজে লাগিয়েছিল বাংলা দখলের কাজে ৷ 

প্রাচীন বাংলা ছিল অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর দিক থেকে সবার ওপরে। ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম পীঠস্থান ছিল বাংলা। কৃষিকাজ থেকে শুরু করে বিদেশে ব্যবসা সবেতেই বাংলা ছিল সর্বেসর্বা। সারা পৃথিবীর মানুষ এখানে ব্যবসা করতে আসতেন৷ বহু ঔপনিবেশিক শক্তি প্রাচীন বাংলাতে এসেছে ব্যবসায়ীক স্বার্থে। ধনসম্পদ থেকে শুরু করে খাদ্যজাত উপাদান, আসবাবপত্র কী ছিলনা বাংলাতে। এককালে ব্রিটেনও পিছিয়ে পড়েছিল বাংলার আর্থসামাজিক উন্নতির কাছে। এই বাংলাকে দখল করার চিন্তা তো ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের থাকাটাই স্বাভাবিক। ব্রিটিশদের কূ নজর পড়েছিল বাংলার ওপর৷ প্রথম পর্যায়ে ব্রিটিশদের পক্ষে বাংলা দখল কঠিন হলেও বাংলা দখলের কাজ আরো বেশি সহজ করে দেন মীরজাফর। ইতিহাসের পাতায় ব্রিটিশদের চেয়েও ভয়ংকর খলনায়ক হিসেবে লেখা আছে মীরজাফরের নাম। 

এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করবো সিরাজউদ্দৌলার বীরত্বের কাহিনী নিয়ে। ১৭৫৬ সালে মাত্র তেইশ বছর বয়সেই বাংলার মসনদে নবাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল সিরাজউদ্দৌলার৷ তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিনের মধ্যেই নবাব ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রচন্ড বিরোধ শুরু হয়৷ সিরাজ ব্রিটিশদের অবৈধ কার্যক্রমের তীব্র প্রতিবাদ জানান৷ তিনি তিনটি প্রধান অভিযোগ তুলে ধরেন। তিনি বলেন তাঁর অনুমতি ছাড়া ফোর্ট উইলিয়ামে প্রাচীর নির্মাণ ও সংস্কার, ব্যক্তিগত অবৈধ ব্যবসা, কোম্পানির  কর্মচারীদের দ্বারা দস্তকের নির্লজ্জ অপব্যবহার এবং নবাবের অবাধ্য প্রজাদের আশ্রয় প্রদান। 

ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সঠিক অভিযোগ এনে নবাব শান্তিপূর্ণ ভাবে বিরোধ মীমাংসা করতে ব্রিটিশদের ডেকে পাঠান ও তাঁর অনেক প্রতিনিধিকে কলকাতা প্রেরণ করেন। নবাব কোম্পানির কাছে কৃষ্ণদাসকে তাঁর হাতে সমর্পণের দাবি করেন। কলকাতার সমস্ত প্রাচীর ভেঙে ফেলতে ও কলকাতার চারিদিকের পরিখা ভরাট করতে তিনি নির্দেশ দেন৷ কলকাতায় তিনি চিঠি হাতে দূত পাঠালে ইংরেজরা অশালীন আচরণ করে তাঁর দূতের সাথে। ব্যাপকভাবে অপমানিত হয়ে তাঁর দূত ফিরে এলে তিনি চটে যান ব্রিটিশদের ওপর। সঙ্গে সঙ্গে কাশিমবাজার কুঠি অবরোধের সিদ্ধান্ত নেন৷ এমতাবস্থায় সিরাজউদ্দৌল্লা বুঝতে সক্ষম হন যে ব্রিটিশরা গৃহবিবাদের সুযোগ নিয়ে তাঁকে প্রতিহত করার চেষ্টা চালাবেন। তাই তিনি তাঁর বড়মাসি ঘসেটি বেগমের চক্রান্ত চূর্ণ করতে মতিঝিল দখল করে ঘসেটি বেগমকে মুর্শিদাবাদ পাঠিয়ে দেন৷ মতিঝিল দখল করার পর ২৭ শে মে তিনি সৈন্যবাহিনী নিয়ে কাশিমবাজার দুর্গ অবরোধ করেন৷ তিনি ওয়াটসনকে তাঁর নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করতে বাধ্য করালেন৷ ওয়াটসনকে বাধ্য হয়ে এক অঙ্গীকারপত্র লিখতে হয়েছিল। 

সরাসরি আক্রমণে লিপ্ত না হয়ে সিরাজ কিছু এ দেশীয় কৌশল প্রয়োগ করলেন৷ তিনি নারায়ণ দাস নামের এক দূতকে ড্রেকের কাছে পাঠালেন। ড্রেককে দুটো শর্ত দেওয়া হলো৷ এক দুর্গ সংস্কার বাতিল করতে হবে। দুই রাজবল্লভের পলাতক পুত্র কৃষ্ণবল্লভকে নবাবের হাতে সমর্পণ করতে হবে। ড্রেক আর যুদ্ধ ছাড়া অন্য কোনো উপায় খুঁজে পেলেন না। 

অবশেষে সিরাজউদৌল্লা ১৮ ই জুন প্রায় তিরিশ হাজার সৈন্য নিয়ে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণ করেন। সিরাজের বাহিনীর কাছে দাঁড়াতে পারছিলেন না ব্রিটিশরা। শেষ পর্যন্ত ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে ব্রিটিশরা পরাস্ত হন। স্বশিক্ষিত ড্রেক ১৯ শে জুন সকালে তাঁর দলবল নিয়ে গোপনে  কলকাতার উপকণ্ঠ ছেড়ে হুগলি নদীর বুকে তরী বেয়ে কলকাতা ত্যাগ করে ফুলতা পলায়ন করলেন। ২০ শে জুন সিরাজ কলকাতা পুনরুদ্ধার করে কলকাতার নাম বদলে রাখলেন আলিনগর৷ 


তথ্যসূত্র- রাইজিং বিডি, টিডিএন বাংলা, বাংলাপিডিয়া

No comments