Header Ads

'মুক্তির মন্দির সোপান তলে' গানটি আজও চিরনতুন


"মুক্তির মন্দির সোপান তলে, কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে"। বিখ্যাত এই বাংলা দেশাত্মবোধক গান  টি আপামর বাঙালির প্রিয় একটি গান। যে গানের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে স্বদেশপ্রেম। আমরা যাদের রক্তে আজ স্বাধীন। সেইসব স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে এই গানে৷ প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে বাংলার স্কুলে-পাড়ায়-ক্লাবে এই গান মাইকে বাজানো হয়। এই গানে লুকিয়ে আছে দেশপ্রেমের আবেগ। এমন গান শ্রবণ করলে সত্যিই প্রাণ জুড়িয়ে যায়। কিন্তু আপনারা কী জানেন এই গানটির রচয়িতা কে? আজকের প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করবো এই গানটি সম্পর্কে কিছু কথা। 


ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই মোটেও সহজ ছিল না। ব্রিটিশদের চোখে চোখ রেখে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়ার সাহস বিপ্লবীরাই দেখিয়েছিলেন। সেদিনের বিপ্লবীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতার মুখ দেখেছিলাম। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস খুললে দেখা যায় স্বাধীনতায় সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে  বাঙালিদের। বাংলার বীর বাঙালি বিপ্লবী সন্তান বাঘাযতীন, মাস্টারদা, প্রফুল্ল চাকী, ক্ষুদিরাম বসু, প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য, রামকৃষ্ণ বিশ্বাস, মাতঙ্গিনী হাজরা, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, তারকেশ্বর দস্তিদার, বটুকেশ্বর দত্তের মতো হাজার হাজার বীর বাঙালির জন্যই আমরা পেয়েছি গর্বের স্বাধীনতা। এনাদের বীরত্বকে গানের ভুবনে তুলে এনেছেন প্রখ্যাত গীতিকার মোহিনী চৌধুরী। যিনি না থাকলে আমরা 'মুক্তির মন্দির সোপান তলে' গানটি পেতাম না। এই গান তাঁরই হাতের পরশে লেখা হয়েছে। এ গানের রচয়িতা হলেন তিনিই ৷

'মুক্তির মন্দির সোপানতলে' গানটি লেখার জন্য তিনি পেয়েছিলেন অধিক খ্যাতি ও সুনাম। এই গানটির সুরকার ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র দে। এ গানের সুরে জেগে ওঠে বিপ্লব। স্বাধীনতা দিবসের পাশাপাশি প্রভাতফেরীর গান হিসেবে যে-কোনো জাতীয়তাবাদী অনুষ্ঠানেও এই গান বাজানো হয়। আজকে বাংলাতে যখন ভোটপ্রচার হয়, তার জন্য বিভিন্ন পার্টি তাদের আলাদা আলাদা গান তৈরি করে বাজার গরম করার জন্য। তারপরও দেখা যায় ভোটপ্রচারের পূর্বে রাজনৈতিক মঞ্চে বাজছে মুক্তির মন্দির সোপানে তলের মতো গান। দেশাত্মবোধক গানের গুরুত্ব এখানেই। 

মোহিনী চৌধুরীর লেখা গানের বিশেষত্ব হলো সে যুগের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠিত শিল্পীই তাঁর লেখা গান গেয়েছেন। তিনি যতগুলো গান লিখেছেন  তার মধ্যে 'মুক্তির মন্দির সোপান তলে' গানটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায়। যে সময়টাকে বাংলা গানের স্বর্ণযুগ বলা হয়, সেই স্বর্ণযুগের আবির্ভাব ঘটেছিল মোহিনী চৌধুরীর হাত ধরেই। তাঁর গান আকাশছোঁয়া সাফল্য পেয়েছিল ঠিকই কিন্তু আপামর বাঙালির কাছে তিনি বিস্তৃত থেকে গেলেন৷ সমাজে আমরা দেখেছি মূলত এই দেশে গীতিকারদের অতোটা সম্মান দেওয়া হয়না।  এই পোড়াদেশে সারাজীবন গান লিখে গীতিকার হয়েও তিনি সঠিক মূল্য পাননা৷ আমাদের প্রতিটি বাঙালির উচিৎ প্রতিটি বাঙালি গীতিকারদের মনে রাখা। কেবল মুক্তির মন্দির সোপান তলে গাইলেই হবেনা জানতে এ গানের সৃষ্টিকর্তারও নাম। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments