Header Ads

বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী গল্প 'স্ত্রীর পত্র' অডিও বুক আকারে প্রকাশ পেল কোয়েশ্চেন মার্ক ফিল্মসের ব্যানারে


বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সৃষ্টি ছোটোগল্পের সংকলন "গল্পগুচ্ছ"। সব বয়সের মানুষের জন্য একদম উপযুক্ত গ্রন্থ হলো এই বই। যার প্রতিটি গল্পে রয়েছে আলাদা স্বাদ। 'গল্পগুচ্ছে'র বেশিরভাগ গল্প থেকে বহুবার টেলিফিল্ম, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সিরিজ নির্মিত হয়েছে। কোনো গল্পে গ্রাম্যজীবনের গল্প, কোন গল্পে পিওনের জীবনকথা, কোনো গল্পে ফেরিওয়ালার জীবন কথা এবং আরো অসংখ্য বিষয় নিয়ে গল্প উঠে এসেছে 'গল্পগুচ্ছে'র পাতায় পাতায়। বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় ছোটো গল্প সংকলনের কথা বলতে গেলে সবার প্রথমে 'গল্পগুচ্ছে'র কথা মনে আসে। পোস্টমাস্টার, খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন, নষ্টনীড়, কাবুলিওয়ালা, শাস্তি, প্রায়শ্চিত্ত, করুণা, ভিখারিণী, স্ত্রীর পত্রের মতো অসংখ্য গল্প রয়েছে এই বইতে। ১২৯৮ থেকে ১৩১০ বঙ্গাব্দের সময়ে রচিত হয়েছিল গল্পগুচ্ছ। 


যতবার এই বইটি পড়া হয়, ততবারই নতুন লাগে। অদ্ভুত সব চরিত্রের মিশেলে গড়ে উঠেছে গল্পের বিষয়বস্তু৷ নজরকাড়া কথোপকথনের সমন্বয়ে জীবন্ত হয়ে উঠেছে প্রতিটি গল্প। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বলা হয় বাংলা সার্থক ছোটোগল্পের জনক। ছোটোগল্পের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন "ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা, ছোটো ছোটো দুঃখকথা নিতান্তই সহজ সরল- সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি, তারি দু-চারিটি অশ্রুজল।" 

গতকাল ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৯ তম জন্মবার্ষিকী। এমনই একটি সুন্দর রৌদ্রজ্জ্বল দিনে কোয়েশ্চেন মার্ক ফিল্মসের ব্যানারে মুক্তি পেল 'গল্পগুচ্ছে'র অন্যতম গল্প 'স্ত্রীর পত্র'। 'গল্পগুচ্ছ' নিয়ে তারা নিয়ে আসতে চলেছে একটি অডিওবুক সিরিজ। গতকাল কোয়েশ্চেন মার্ক ফিল্মসের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পেয়েছে 'স্ত্রীর পত্র'। সমগ্র গল্পটির পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছেন অধিকারী অনুভব। গল্পের সূত্রধর মৈত্র সৌমিক। অভিনন্দন মণ্ডল, দীপায়ন সামন্ত ও অধিকারী অনুভবের প্রযোজনায় তৈরি হয়েছে এই অডিও স্টোরিটি৷ গল্পে ব্যবহৃত শব্দগ্রহণ আবহসঙ্গীত ও স্পেশাল এফেক্টস দিয়েছেন অয়ন। সম্পূর্ণ গল্পটি সম্পাদনা করেছেন অর্ণ নিয়োগী এবং এডিওগ্রাফি। গল্পের ভিডিওতে ব্যবহৃত অ্যানিমেশন করেছেন শুভ্রদীপ রাজ মুখার্জি। টাইটেল ক্যালিগ্রাফি ও ইলুস্ট্রেশন তৈরি করেছেন অর্ঘ্য গুহ। গল্প পাঠে ও মৃনালের ভূমিকায় কণ্ঠ দান করেছেন অভীক দত্ত।    

'স্ত্রীর পত্র' হলো একটি কালজয়ী গল্প৷ যে গল্পটির বয়স বর্তমানে একশো ছয় বছর। মৃনাল পুরী থেকে তার স্বামীকে চিঠি লিখছেন। যা শুধু চিঠিই ছিলনা এক শক্তিশালী নারীর মুক্তির বাণী। যে চিঠিকে বলা যেতে পারে  তার আত্মজীবনী। চিঠিটি তার স্বামীর উদ্দেশ্যে লিখলেও নাম জানা যায়নি তার স্বামীর। বলা যেতে পারে এ চিঠি সে উৎসর্গ করেছিল সমগ্র পুরুষ জাতির প্রতি। 

'স্ত্রীর পত্র' গল্পে আমরা দেখতে পাই মৃনালের ভাই প্রচন্ড জ্বরের আঘাতে মারা যায়। তার ভাইয়ের পাশাপাশি সেও ভুগছিল প্রচন্ড জ্বরে৷ তবে ভাগ্যবশত সে বেঁচে যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গল্পে মৃনালের রূপ ধরে বলে গেছেন পুরো গল্প৷ পাড়ার মেয়েরা তাকে দেখে বলতে থাকে 'মৃনাল মেয়ে কিনা, তাই ও বাঁচল, বেটাছেলে হলে ও কী আর রক্ষা পেত।' 

এক চাকচিক্য পরিবারে তার বিয়ে হয়। সে হয়ে ওঠে সে বাড়ির মেজ বৌ। এক অজ পাড়া গাঁয়ে তার বিয়ে হয়। যে গ্রামে শিক্ষা-দীক্ষার কোনো বালাই ছিলনা। আর মৃনাল ছিল অত্যন্ত বুদ্ধিমতি ও একজন কবি৷ কিন্তু অজ পাড়া-গাঁয়ের লোকেরা কী এসব বোঝে? এমন অজ গাঁয়ে বেঁচে থাকাটা একজন বুদ্ধিমতির কাছে সেকেলে কঠিন ছিল। তার শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছাতে গেলে বাড়ির সামনে আবর্জনা ঠেলে ঢুকতে হতো। অদৃষ্টের এমনই পরিহাস যে মৃনালের বাচ্চা মেয়েটা জন্মানোর সাথে সাথেই মারা গেল। এ ঘটনার সাপেক্ষে মৃনাল চিঠিতে লিখেছিল 'মা হবার দুঃখটুকু পেলাম কিন্তু মা হবার মুক্তিটুকু পেলাম না।' বাকীটা আর নাইবা লিখলাম। 'স্ত্রীর পত্র' গল্পটি হলো যন্ত্রণাকাতর এক অবলা বুদ্ধিমতি মেয়ের মুক্তির গল্প। 

যারা গল্প শুনতে ভালোবাসেন কিংবা গল্প শোনাতে ভালোবাসেন তাহলে কোয়েশ্চেন মার্ক ফিল্মস প্রযোজিত 'গল্পগুচ্ছে'র প্রথম পর্ব শুনতেই হবে। যে পর্বে রেকর্ডিং করা হয়েছে 'স্ত্রীর পত্র' গল্পটি। আকর্ষণীয় আবহ সঙ্গীত ও সাবলীল অভিনয়ের সংমিশ্রণে একবার শুনে নিতেই পারেন এই গল্প। রবি ঠাকুরের সৃষ্টি বলে কথা একবার হলেও তো দেখা চাই-ই।

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments