বিজ্ঞান শিক্ষক, লেখক ও প্রাবন্ধিক ইন্দ্রনীল মজুমদারের হাত ধরে নির্মিত হলো রবীন্দ্রনাথের বিশ্বপরিচয় নিয়ে প্রথম ওয়েবসাইট
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ বয়সে রচনা করেছিলেন 'বিশ্বপরিচয়'। একটি অবশ্য কর্তব্যবোধের তাগিদে তিনি বিশ্বপরিচয় রচনা করেন৷ বিশ্বপরিচয় লেখার ব্যাপারে তিনি কিন্তু অনেকটাই কুণ্ঠিত ছিলেন। যার কারণে তিনি বিজ্ঞানের অধ্যাপক প্রমথনাথ সেনগুপ্তের ওপর বইখানি লেখার ভার দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ যতটা পেরেছেন পরিভাষা এড়িয়ে সহজ ভাষায় লিখেছেন এই বই। তিনি বিজ্ঞানের বেশ কিছু তথ্য সাহিত্যের আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন। বর্তমানে বিজ্ঞানের অনেক অগ্রগতি হয়েছে কিন্তু এই বইটি আজও সকল বিজ্ঞানমনস্ক পাঠককে বিস্মিত ও রোমাঞ্চিত করে।
রবীন্দ্রনাথ এই বইতে বিজ্ঞানের কিছু সংজ্ঞা সহজে বর্ণনা করেছেন। যেমন ইংরেজিতে যাকে গ্রাভিটেশন বলে তাকে মহাকর্ষ না বলে ভারাবর্তন নাম দিলে গোল চুকে যায়। জটিল বিষয়কে তিনি এতোটাই সহজ করে বিশ্বপরিচয়ের মাধ্যমে বলেছেন৷ কিংবা পৃথিবী থেকে যে বিরানব্বইটি মৌলিক পদার্থের খবর পাওয়া গেছে সূর্যে তার সবগুলিই থাকা উচিত? কেননা, পৃথিবী সূর্যেরই দেহজাত। প্রথম পরীক্ষায় পাওয়া গিয়েছিল ছত্রিশটি মাত্র জিনিস। বাকীগুলির কী হল সেই প্রশ্নের মীমাংসা করেছেন বাঙ্গালী বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা। তাঁর পথ বেয়ে প্রায় সবগুলিরই খবর মিলেছে।
বিশ্বপরিচয়ে বিশ্বের পরিচিতি ঘটানো হয়েছে পাঁচটি পর্যায়ে। পরমাণুলোক, নক্ষত্রলোক, সৌরজগৎ, গ্রহলোক ও ভূলোক। আর রয়েছে শেষে উপসংহার। বাংলা বিজ্ঞান সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান গ্রন্থ হিসেবে পরিচিত হলো বিশ্বপরিচয়। এই বিশ্বপরিচয়কে নিয়ে এক অনন্য ভাবনার প্রতিফলন ঘটালেন কলকাতার বিজ্ঞান শিক্ষক, বিজ্ঞান লেখক ও প্রাবন্ধিক ইন্দ্রনীল মজুমদার। বিশ্বপরিচয়ের ওপর ভিত্তি করে তিনি জন্ম দিলেন একটি ওয়েবসাইটের। রবীন্দ্র-জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্বকবির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে এবং সাধারণ মানুষ যাতে বিশ্বপরিচয় পড়ে এই বইয়ের বিপুল বিজ্ঞানের রস লাভ করে সমৃদ্ধ হয় তারই প্রচেষ্টা হলো বিশ্বপরিচয় ওয়েবসাইট। তিনি যেদিন প্রথম এই বইটি পড়েন সেদিন থেকেই চেষ্টা করেছেন এই বইটি বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে। এবার সেই প্রচেষ্টা অনেকটাই সফল হতে চলেছে। তিনি বিশ্বপরিচয়কে মানুষের কাছে অনলাইনে পড়ার সুযোগ করে দিলেন। একদম সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র চিন্তাধারায় তিনি নতুনভাবে ওয়েবসাইটের মোড়কে নির্মাণ করেছেন এই বিশ্বপরিচয়। চলতি বছরের গত ১০ ই এপ্রিল তিনি বিশ্বপরিচয় নিয়ে একটি ফেসবুক পেজও খুলেছেন ও ১২ ই এপ্রিল ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন।
রবীন্দ্র রচনাবলী নিয়ে হয়তো এর আগে অনেক ওয়েবসাইটই হয়েছে কিন্তু বিশ্বপরিচয়কে নিয়ে এরকম ওয়েবসাইট নির্মিত হলো এই প্রথমবার। বিশ্বপরিচয়ের এই প্রকল্পের কথা জেনে শ্রদ্ধেয় নাট্যকার ও বিজ্ঞানঃ জানা ও অজানার কর্ণধার এবং পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের দীর্ঘদিনের বিজ্ঞানকর্মী শ্রী কাজল গুহ মহাশয় অত্যন্ত খুশি হয়েছেন। যিনি বিশ্বপরিচয় বইটি স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিনে পয়সায় বিতরণ করেছিলেন। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডঃ দীপক ঘোষ যিনি বিনে পয়সায় বিশ্বপরিচয় স্কুল পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছিলেন তিনিও বাহবা জানিয়েছেন,বিশিষ্ট বিজ্ঞান লেখক ও শিক্ষাবিদ ড.পার্থসারথি চক্রবর্তী সহ আরও অনেকে বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তি সহ অনেকেই এমন মহৎ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ইন্দ্রনীল মজুমদার জানিয়েছেন 'রবীন্দ্র শ্রদ্ধার্ঘ্যের এই সামান্য নিবেদনটি সকলের বিশেষ করে বাঙালি পাঠকসমাজের কাছে পৌঁছলে শ্রম সার্থক হবে।' https://biswaparichayonline.blogspot.com/
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment