Header Ads

তিন ব্যক্তির আলাদা আলাদা ভাবনার জগৎ, অবশেষে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেল দেবেশ চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ইয়ে


তিনটি ভিন্ন চরিত্র। যে তিন চরিত্রের চিন্তাভাবনা সম্পূর্ণ আলাদা। একজন মানুষ এমন একটি দেশ আবিষ্কার করতে চান।যে দেশের অস্তিত্ব  সম্পর্কে পৃথিবীর কোনো মানুষের ধারণা থাকবে না। আরেক জন ব্যক্তি যিনি এমন একটি ভাষা আবিষ্কার করতে চান। যে ভাষা হবে তার নিজস্ব ভাষা। তার স্বপ্নের ভাষা। অন্য আরেক জন ব্যক্তি এমন একটি প্রশ্ন বানিয়েছেন যার উত্তর কোনো যন্ত্রও দিতে পারবে না। এই তিন ব্যক্তির গবেষণা রাষ্ট্রশক্তির কাছে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।এমনই একটি গল্প বললেন পরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। গত শুক্রবার বাংলার প্রথম ছবি হিসেবে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রিলিজ করেছে দেবেশ চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি 'ইয়ে'। 



অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার, অর্পিতা ঘোষ ও নিত্য গঙ্গোপাধ্যায়ের নজরকাড়া অভিনয় রয়েছে এ ছবিতে। ২০০৬ সালে দেবেশ চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত ও দেবশঙ্কর হালদার অভিনীত 'ইয়ে' নামের একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। যে নাটকটিকে তিনি চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত করেছেন। চলচ্চিত্রের যে নিজস্ব ভাষা থাকে সেই ভাষাকে নিজের মতো করে ব্যবহার করে এই ছবিটি বানিয়েছেন পরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। এ ছবির মাধ্যমে এক অনন্য ভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তিনি৷ এর আগে তিনি নির্মাণ করেছিলেন বাংলা ছবি 'নাটকের মতো'। যে ছবির নির্মাণশৈলী ও গল্প দর্শকদের মনে বিশেষভাবে দাগ কেটেছিল৷ তাঁর ছবিতে একরাশ নতুনত্বের ছোঁয়া থাকে। অভিনয় থেকে শুরু করে চিত্রনাট্য কিংবা সাজসজ্জা থেকে চরিত্র নির্ধারণ প্রতিটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিশ্লেষণ করে তিনি বানানোর চেষ্টা করেন। তাঁর চলচ্চিত্র নির্মাণের ধরণটা একটু আলাদা সবার থেকে। 

আমাদের এই বিচিত্র মানব জগৎ। সমাজে আমরা দেখেছি এমন কিছু মানুষ আছেন যাদের চিন্তা ভাবনা সবার থেকে পৃথক। কোনো কোনো মানুষের মধ্যে আমরা দেখেছি এমন কিছু ভাবনা থাকে যা সহজে মানুষেরা বুঝতে পারেন না। এই ছবিতে যে তিন ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে তাদের স্বাভাবিক ভাবে উন্মাদ মনে হতে পারে৷ আসলে এনারা কেউই উন্মাদ নন। এই তিন ব্যক্তির মধ্যে যথেষ্ট ভাবনাচিন্তা করার ক্ষমতা রয়েছে। আমাদের সমাজ প্রত্যহ জটিল হয়ে পড়ছে। এই সমাজে ঐ তিন ব্যক্তির টিকে থাকা প্রচণ্ড কঠিন। এমন মানুষদের নিয়ে সঠিকভাবে ভেবেছেন পরিচালক৷ যা এককথায় প্রশংসনীয়। 

করোনার মতো এপিডেমিক রোগের সংক্রমণে যখন আতঙ্কিত গোটা দুনিয়া তখন শিল্পসমাজও জর্জরিত এর প্রভাবে৷ করোনা পরবর্তী সময় কতটা কঠিন হবে সব পেশার মানুষদের জন্য সেদিকে তাকিয়ে সারা বিশ্ব। এই মুহূর্তে যারা ছবি বানান তাদের দ্বিতীয় কোনো উপায় বেছে নিতে হবে সিনেমাহল ছাড়া। তাই সবার প্রথমে ওটিটি প্ল্যাটফর্মকেই বেছে নিয়েছেন পরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। 

'ইয়ে' ছবির প্রসঙ্গে পরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায় লিটারেসি প্যারাডাইসকে বলেন "২০০৬ সালে আমি এই নামেই একটা নাটক করেছিলাম। পিটার বিক্সেলের গল্প কিন্ডারগার্টেনস স্টোরিজ থেকে নাট্যরূপ দিয়েছিল আমার বন্ধু কৌশিক রায়চৌধুরী। অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার এটাতে একক অভিনয় করেছিল। তখন থেকেই ভাবনা ছিল এটাকে ফিল্মে কীভাবে কনভার্ট করবো। ফলে দীর্ঘদিন ধরে স্ক্রিপ্ট লেখা চলছিল। ২০১৬ সালের শেষের দিকে স্ক্রিপ্ট ফরমেশনটা কমপ্লিট হয়। ২০১৭ সালে শ্যুটিং করি। ২০১৮ সালে ফিল্মটা ফাইনাল হয়। ছবিটা যেহেতু একটু অন্যরকম ছবি। তিনটি মানুষ তিনটে আলাদা পক্ষের। একজন মানুষ যিনি দেশ আবিষ্কার করতে চান। একজন মানুষ এমন একটা ভাষা আবিষ্কার করতে চান যেটা তার নিজস্ব ভাষা হবে৷ আর একজন মানুষ এমন একটি প্রশ্ন জানেন যার উত্তর কোনো যন্ত্রও দিতে পারবে না। এই যে তিনজন মানুষকে নিয়ে অন্যরকম ভাবনার ছবিটা বানালাম। ২০১৮ সালে বার্লিন ফিল্ম মার্কেটে ছবিটা দেখানো হয়েছিল। আমরা চেয়েছিলাম এই বছরের মে মাসেই ছবিটা হলে রিলিজ করবো। কিন্তু ফেব্রুয়ারী থেকেই পুরো বিষয়টি পাল্টে যেতে আরম্ভ করলো। তখন ছবিটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি দেওয়ার কথা চিন্তা করতে লাগলাম। এর দুটো কারণ রয়েছে প্রথমত আমি হিসেব করে দেখলাম যখন হল খুলবে, সব নর্মাল হবে, তখন ছবির ভিড়ও বাড়তে  থাকবে। এই অবস্থাটা স্বাভাবিক হতে এখনো বছর দুই লাগবে৷ আর এটা আমার একটু অন্যরকম ছবি। দ্বিতীয়ত এ ছবিতে সেভাবে কোনো একক প্রডিউসার নেই৷ বন্ধুবান্ধবদের দেওয়া টাকাতে তৈরি হয়েছে এ ছবিটা। সেক্ষেত্রে আমি তখন লড়াইতে পারবো না। গত শুক্রবার আমার ছবি মাই সিনেমা হল নামের একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে। একদম বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এই প্ল্যাটফর্মটা বানিয়েছে। অনেকটা সিনেমা হলের মতোই। যাইহোক অবশেষে ছবিটা রিলিজ করতে পেরেছি।"  


প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments