Header Ads

অসম দারিদ্র্যের কাছে যখন হেরে যায় মানুষ। 'ইস্ক্রা'র লকডাউন পরবর্তী প্রযোজনা হলো 'সন্ধ্যা নামার আগে'


করোনার থাবা ও লকডাউনের কবলে জনজীবন বিপর্যস্ত। বেঁচে থাকার কঠিন লড়াইতে ব্যস্ত প্রতিটি মানুষ। কেউ কেউ কর্মহীন। কারও অনাহারে দিন কাটছে। কারও বাড়িতে সদস্য বিদায়ের পালা চলছে। কেউ কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। কারও স্বামী বা কারও বাবা হাসপাতালে চিকিৎসা করে রোগীদের সেবা করছে। চারিদিকে শুধুই মানুষের ক্রন্দন চিৎকার। মানুষের খাদ্য, মানুষের স্বাস্থ্য, মানুষের পরিষেবা-বেঁচে থাকাই এখন প্রশ্নের মুখে৷ জটিল চিন্তার মুখোশ ধারণ করেছে মানুষের মুখে। অনাহারে দিনযাপন করছে দেশের চল্লিশ শতাংশ মানুষ। 

লকডাউনের আঘাতে কাজ হারিয়েছেন বহুজন৷ লকডাউন উঠলেও তাদের কোনো নিস্তার নেই। তাদের হয়তো কোনোদিন সুদিনও আসবে না। কর্মহারা হতে চলেছেন পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি শ্রমজীবী মানুষ। স্থায়ী চাকরী হতে চলেছে আকাশকুসুম স্বপ্ন। অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে পড়বে। উৎপাদন সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির পারদ চড়বে তুঙ্গে। দেখা যাবে অর্থের অভাবে কিংবা হাজারো কারণে চিকিৎসাহীনতায় মারা পড়ছে অসংখ্য মানুষ। হয়তো মৃত্যুহার হয়ে উঠবে ঐতিহাসিকভাবে সর্বোচ্চ ৷ 

এমনই যুদ্ধকালীন ভয়বহতার বাস্তব সত্য উঠে আসতে চলেছে 'সন্ধ্যা নামার আগে' নাটকে। যে নাটক হতে চলেছে 'ইস্ক্রা'র লকডাউন পরবর্তী প্রযোজনা। এ নাটকের রচনা ও নির্দেশনায় সৌগত দত্ত। এ নাটকে অভিনয় করতে দেখা যাবে চৈতালি সাহা, ঋষভ বিশ্বাস, দায়াদ মুখার্জি, শ্বেতা রায়, সৌগত দত্ত, মৌমিতা সাহা ও আরো অনেককে। 

নাটকের গল্পে দেখা যাবে এক প্রান্তিক গ্রামে কাজ হারিয়ে, জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষার কাছে বঞ্চিত হয়ে দিন কাটাচ্ছেন হারু নামে এক শ্রমিক। যিনি পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার কোনো পথ খুঁজে পাননি বলে আত্মহত্যা করেন৷ এরপর মৃত্যুর প্রবল আশঙ্কা বুকে নিয়ে বেঁচে থাকে তার স্বামীহীনা স্ত্রী আর ছোট্ট মেয়েটি। আমরা জানি মায়েরা কখনো হার মানেন না। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও নিজের সন্তানকে আঁচল বাড়িয়ে রক্ষা করে। একজন মা যতই অনাহারে থাকুক তার সন্তানকে কখনোই অনাহারে থাকতে দেননা। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড়ো সৈনিক হলেন মা। এখানে সেই স্বামীহীনা মা তার সন্তানকে অনাহারে থেকেও বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনোমতেই শেষ রক্ষা হলোনা তার সন্তানের। পুলিশ-মিলিটারির অত্যাচার, হেনস্থা, অশালীনতার সাথে প্রচণ্ড লড়াই করেও অসম দারিদ্র্যের হাত থেকে রেহাই পেল না তার সন্তান। ছোট্ট মেয়েটার ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে কপালে জুটলো না চিকিৎসা। ছোট্ট মেয়েটা জ্বরে কাতরাচ্ছে দেখেও আজকের অন্ধ সমাজ অন্ধ হয়ে রইলো। সমাজের হালধারী পিশাচ মানুষদের অন্যায়ের আড়ালে প্রাণ যায় ছোট্ট মেয়েটির। এরপর মরা মেয়ের লাশ বুকে অসহায় মা পুলিশ ও রাষ্ট্রীয় দুষ্কৃতিদের সামনে শহরে হাঁটতে থাকেন৷ শহরজুড়ে দেখা মেলে একটি বৃহৎ লাল মিছিলের। যে মিছিলে মিলিয়ে যায় সেই অসহায় স্বামীহীনা ও সন্তানহীনা মা। 

যুগের পর যুগ থিয়েটার বরাবরই সময়ের কথা বলে এসেছে। আজও এ তৃতীয় বিশ্বের বুকে দাঁড়িয়ে থিয়েটার কথা বলে চলেছে সময়ের। শুধু সময়ই নয়, থিয়েটার কথা বলে অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম ও মানুষের অধিকারের কথা। 'ইস্ক্রা'র মতে, "আজ যখন মানুষের হাতে দুবেলার ভাতটুকুও নেই, তখন এই সংগ্রামের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন। কোনো হল বা প্রসেনিয়াম নয়। রাস্তায় নামিয়ে আনা দরকার শিল্পকে। জনগণের শিল্পকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়াটাই আমাদের উদ্দেশ্য, যে শিল্পের সার্থকতা কোনো আর্থিক লাভ বা যশ-খ্যাতিতে নয়, মুক্তির লড়াইয়ে মানুষকে সাহস দেওয়া। তাদের লড়াইয়ে একাত্ম হওয়ার মধ্যেই নিহিত। 'ইস্ক্রা' তার একবছরের যাত্রায় এই লড়াইটাই চালিয়ে গিয়েছে এবং আগামীতেও লড়াইয়ের ময়দানেই থাকবে।" 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments