Header Ads

কেন্দ্রের অবহেলায় বেঙ্গল কেমিক্যালসে বন্ধ অ্যান্টিভেনম তৈরি, মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে অসংখ্য রোগী


প্রতি বছর এ রাজ্যের বহু মানুষ সাপের কামড়ে মারা যান। বিশেষ করে কেউটে, কালাচ ও চন্দ্রবোড়ার কামড়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে। ঘটনাচক্রে দেখা যাচ্ছে এই মুহূর্তে অন্যান্য সাপেদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিভেনম কাজ করলেও, চন্দ্রবোড়ার ক্ষেত্রে অনেক সময়েই কাজ হচ্ছে না! যার ফলস্বরূপ কিডনি ফেল করে চোখের সামনে বহু রোগী মারা যাচ্ছেন। এমনই ভয়াবহ অবস্থার কথা জানালেন বাংলার স্টেট লেভেল রিসোর্স পার্সন ফর স্নেক বাইট ট্রেনিং এবং কেন্দ্র সরকারের সাপ কামড়ের বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য ডঃ দয়ালবন্ধু মজুমদার।    


সর্প-বিজ্ঞানীরা ২০১৭ সাল থেকে লক্ষ্য করেন চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ে রোগী মৃত্যুর ঘটনা। আগে পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেঙ্গল কেমিক্যালে বানানো হতো অ্যান্টভেনম সিরাম। কিন্তু ২০০৮ সালে হঠাৎ করেই তার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে অ্যান্টিভেনম সিরাম আমদানি করা হয় তামিলনাড়ু থেকে৷ কিন্তু তামিলনাড়ু থেকে প্রাপ্ত অ্যান্টিভেনম কাজ করেছে না। এ রাজ্যের রোগীদের শরীরে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করার পরও চন্দ্রবোড়া সাপে কাটা রোগীরা মারা যাচ্ছে। ফলত চিন্তার ছাপ পড়েছে চিকিৎসকদের মনে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশানের বিশেষজ্ঞ ডেভিড ওয়ারেল সহ সব বিশেষজ্ঞরই মত, স্থানীয় ভাবে অ্যান্টিভেনম সিরাম তৈরি করলেই তবে তা ঐ অঞ্চলের সাপে কাটা রোগীর শরীরে ঠিকঠাক কাজ করে।      

আমাদের দেশে যে পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায়, সেগুলি হল ঘোড়ার সিরাম। ঘোড়ার শরীরে অল্পমাত্রায় সাপের বিষ ইঞ্জেক্ট করা হয়। কিছুদিনের মধ্যে ঘোড়ার শরীরে বিষের বিরোধিতা করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সেই সিরামকেই কাজে লাগানো হয় সাপেকাটা রোগীদের ক্ষেত্রে। কলকাতার মানিকতলা আস্তাবলে ত্রিশটি ঘোড়া ছিল। যে ঘোড়াগুলো কাজে লাগতো অ্যান্টিভেনম সিরামের কাজে। অথচ ২০১৭ সালে কলকাতার মাণিকতলা থেকে ত্রিশটি ঘোড়া তুলে দেওয়া হয় একটি গুজরাটি এনজিও-র হাতে। ঘোড়াগুলির তৎকালীন মালিক আপ্রাণ চেষ্টা করেও ঘোড়া বিক্রি আটকাতে পারেননি।                         

শহুরে বাবুরা জানেন না যে কোন ঘোড়া কোথায় যাচ্ছে। তারা হাতে-কলমে শিক্ষিত হয়েও জানেন যা অ্যান্টিভেনম তৈরিতে ঘোড়া লাগে। গ্রামের মানুষেরা ধানের ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে সাপের কামড়ে মারা যাচ্ছেন। প্রতিবছর এ রাজ্যে সাপের কামড়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। শহুরে মানুষদের অন্তরালে ঘোড়াগুলো বিক্রি করার খবরও তারা জানলেন না। আর কেন্দ্র সরকার সিদ্ধান্ত নিলো বেঙ্গল কেমিক্যালস বেসরকারিকরণের। 

কেন্দ্রীয় বঞ্চনাতে ধ্বংসের পথে বেঙ্গল কেমিক্যালস। গত কয়েকদিন যাবৎ এই বেঙ্গল কেমিক্যালস উঠে এসেছে খবরের শিরোনামে। বিভিন্ন সংবাদপত্রে বেঙ্গল কেমিক্যালস নিয়ে ইদানীং লেখালেখি হচ্ছে। এমনকি টিভিতেও বিভিন্ন খবরের চ্যানেলে বেঙ্গল কেমিক্যালস নিয়ে খবর ভেসে উঠছে। আবারো নতুন করে বাংলার মানুষ বেঙ্গল কেমিক্যালসের নাম জানতে পারছে। করোনা মোকাবিলাতে একমাত্র হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন তৈরিতে বেঙ্গল কেমিক্যালসের সর্বাধিক ক্ষমতা থাকায় রাজ্য সরকারের বরাত পেয়েছে বেঙ্গল কেমিক্যালস। বেসরকারিকরণের পথে এখন বাঁধাপ্রাপ্ত বেঙ্গল কেমিক্যালস। গোটা পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের সামনে আশার আলো দেখাচ্ছে বেঙ্গল কেমিক্যালস। 

মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির চিঠি 
                   
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন তৈরিতে বেঙ্গল কেমিক্যালসের সাড়া জাগানোর ফলশ্রুতিতে ভরসা পাওয়ার অপেক্ষায় সর্প বিশারদ ও রোগীরা। তাঁদের দাবি মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আবার অ্যান্টিভেনম তৈরি করুক বেঙ্গল কেমিক্যালস। রক্ষা পাবে হাজার হাজার সাপেকাটা রোগীর জীবন। এই বিষয়ে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রীকে আবেদন জানিয়েছেন যাতে এ রাজ্যে নতুন করে অ্যান্টিভেনম তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ডঃ দয়ালবন্ধু মজুমদারের মতে বাংলায় একমাত্র বেঙ্গল কেমিক্যালসের সাপের বিষ সংগ্রহের লাইসেন্স আছে। অ্যান্টিভেনম তৈরির ল্যাব চালু করা সময় সাপেক্ষ, কিন্তু এখনই বেঙ্গল কেমিক্যালস সাপের বিষ সংগ্রহ করে নানা ল্যাবে পাঠাতে পারে।                           
   
প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments