Header Ads

বেঙ্গল কেমিক্যালস এণ্ড ফার্মাসিউটিক্যালস ওয়ার্কস লিমিটেড ইতিবৃত্ত || দ্বিতীয় পর্ব


গত ১২ই এপ্রিল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত 'বেঙ্গল কেমিক্যালস এণ্ড ফার্মাসিউটিক্যালস ওয়ার্কস  লিমিটেড' ১২০ তম প্রতিষ্ঠাবর্ষে পদার্পণ করল। আমরা এখন এই সংস্থার প্রারম্ভিককালে বা বলা ভালো আচার্যদেবের আমলে কিরকম অবস্থা ছিল এবং রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদনের জন্যে কি কি অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা সেখানে ছিল সে সম্পর্কে জানব। তার আগে দেশে রাসায়নিক শিল্পের ভিত্তি বা ইতিহাস সম্পর্কে আচার্যদেবের প্রবন্ধ থেকে কিছু কথা জানব। 


আচার্যদেব তাঁর রচিত 'বেঙ্গল কেমিক্যাল' প্রবন্ধটিতে শুরুতেই জানিয়েছেন যে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন করা শুধু বঙ্গে নয় সারা ভারতেই বেশি দিনের কথা নয়। অর্থাৎ, রাসায়নিক কলকারখানার ইতিহাস প্রায় আধুনিক বলা যায়। আচার্যদেবের লেখাটির পঞ্চাশ বছর আগে দেশের মানুষদের দ্বারা পরিচালিত রাসায়নিক ব্যবসার কোনো অস্তিত্ব ছিল না। অবশ্য কেউ কেউ বিলেত থেকে ঔষুধ আমদানি করে প্রচুর টাকা রোজগার করত। কেননা, বিলেতি ঔষধের গুণগতমান ভালো এবং দামও অধিক। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় এই  দেশে প্রধান রাসায়নিক ব্যবসা ছিল বিভিন্ন রকমের গাছ-গাছড়া থেকে সুতো কাপড় রং তৈরি করা। যদিও এই রং-এর কাজ গ্রাম্য উপায়ে তৈরি করা হত। তবুও এর মান এতই ভালো ছিল যে এর স্থান দেশ-বিদেশের রং-এর বাজারে একেবারে উপরের দিকে ছিল। 

রং তৈরি করার কাজে রং ব্যবসায়ীদের প্রখর বুদ্ধি ও দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যেত। সেই সময় নীল ও মুঞ্জিষ্ঠা ছিল রং ব্যবসার প্রধান উপকরণ। আসলে তখন নীলকর সাহেবদের অধীনে নীলের চাষ করার আমল ছিল। আচার্যদেব জানান যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান পড়ানোর ব্যবস্থা চালু হবার কিছু পরে বঙ্গদেশের যুবকদের মধ্যে পাশ্চাত্য দেশের মতো বিজ্ঞানকে ব্যবসা ও ঘরের কাজে প্রয়োগ করার প্রবল ইচ্ছা জাগতে লাগল। এই ইচ্ছাটাই ক্রমেই প্রবলতর হতে লাগল। কিন্তু প্রবলতর ইচ্ছা জাগলে কি হবে, পরাধীন দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়াল তাঁদের কাছে। তখন দেশে খুবই অর্থনৈতিক দুরবস্থা ছিল। সে কথা তাঁরা বুঝেছিলেন। একটা বিষয় তাঁরা বুঝতে পারলেন যে, দেশে কাঁচা মালের ঘাটতি বা বাজারে চলন নেই। অথচ, এই কাঁচা মাল ফলিত বিজ্ঞানের প্রয়োগ ঘটিয়ে যদি কাজে লাগানো যায় তবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই বদলে যাবে। কিন্তু সেই সময় ফলিত বিজ্ঞান পড়ানোর ব্যবস্থা এই দেশে তেমন ছিল না।

 আচার্যদেব তাঁর প্রবন্ধে জানান যে, দেশে ফলিত বিজ্ঞান পড়াবার ব্যবস্থা ও পরীক্ষাগার (প্রবন্ধ লেখার সময় থেকে) মাত্র ত্রিশ বা চল্লিশ বছর আগে চালু হয়েছে। তার আগে ফলিত বিজ্ঞানের কোনো ব্যবস্থা এই দেশে ছিল না। ওই সময় থেকেই বিদেশে পড়াশোনা করার জন্যে স্কলারশিপ দিয়ে ছাত্র পাঠানোর ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। আচার্যদেব জানান যে, চল্লিশ বছর ধরে নানারকম রাসায়নিক দ্রব্যের উৎপাদন এবং ব্যবসার চেষ্টা হয়েছে যাদের মধ্যে অনেকগুলি বিফলে গিয়েছে। এমনও কেউ কেউ ছিল যারা প্রচুর অর্থলাভ করে ব্যবসা উঠিয়ে দিয়ে জমিদারের মতো ঘরবাড়ি বানিয়ে বসে ছিল। 

জানা যায়, এই বঙ্গদেশে ডি.ওয়ালডি নামক একটি কোম্পানি প্রথম রাসায়নিক ব্যবসা গড়ে তোলে। তাদের কারখানা প্রথমে কাশীপুরে থাকলেও পরে তা হুগলি জেলার কোন্নগরে স্থানান্তরিত হয়। এই কারখানা মূলত Caoutchicine নামক এক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য তৈরি করত। এই Caoutchicine রবার থেকে পাওয়া যায় এবং মেথিলেটেড স্পিরিট তৈরি করতে কাজে লাগে। এছাড়াও, এই কোম্পানি বিভিন্ন রকমের খনিজ আকর(acids),ইথার এবং নানান রাসায়নিক যৌগ তৈরি করত।

No comments