Header Ads

মুর্শিদাবাদের জঙ্গীপুরের একদল বাঙালি যুবক গড়ে তুললো মানবিকতার অনন্য নজির


"আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড়ো হয়ে কাজে বড়ো হবে"। কবি তাঁর কবিতার মাধ্যমে বাংলার যুবসমাজকে জেগে ওঠার কথা বলেন৷ এ কথার সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে করোনার যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে। বাংলার ঘরে ঘরে জন্ম নেওয়া গর্বিত বঙ্গসন্তানেরা দীনদুঃখী মানুষের বিপদে যেভাবে এগিয়ে আসছে তাতে দীনদুঃখী মানুষেরা ধন্য হয়ে উঠছে বাঙালি যুবসমাজের প্রতি। বাঙালির তরে বাঙালিই তো এগিয়ে আসবে। বাঙালির বিপদে তো বাঙালিই বাঙালির পাশে থাকবে। 


এবার বাংলার মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের বাসিন্দারা গড়ে তুললেন মানবতার অনন্য নজির। সাধারণ খেঁটে খাওয়া মানুষের হাতে তুলে দিল খাদ্যসামগ্রী। নিজেদের উদ্যোগে যতটুকু পারা যায়, ঠিক ততটুকু দিয়েই প্রথমে তারা এগিয়ে আসেন একটি মানবিক উদ্যোগ নিতে। কিন্তু তারপর সোশ্যাল মিডিয়াতে সাধারণ খেঁটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিভিন্ন মানুষকে আহ্বান জানানো হয়। তাদের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন বহু মানুষ। তাঁরা কেউ চাল, ডাল, আলু বা অর্থ অনুদান করেন। সেই সব সামগ্রী একত্রিত করে তারা পৌঁছে দিচ্ছে বহু মানুষের ঘরে ঘরে। 

মরণঘাতী রোগ করোনার হাত থেকে জীবন বাঁচাতে সরকারি নির্দেশে জারি রাখা হয়েছে লকডাউন। কাজেই সকলে এখন গৃহবন্দী। প্রথমে লকডাউন ১৫ ই এপ্রিল পর্যন্ত করা হলেও লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। স্বভাবতই নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের চোখে-মুখে এখন দুশ্চিন্তার ছাপ। কীভাবে খাবার জুটবে? কীভাবে অর্থের সংস্থান হবে? লকডাউন কবে কাটবে? এরকম নানান চিন্তাতে কষ্টে দিন কাটছে তাদের। কোনো মানুষ যদি আজ তাদের কথা না ভাবে তাহলে খাদ্য সংকটের প্রভাবে তারা মারা যাবে। এসব মানুষের কথা চিন্তা করে জঙ্গিপুরের একদল যুবক সইবুল, ইমতিয়াজ, রিংকু শেখ, মহম্মদ করিম, সোহেল ও মিলন রোগের ভয়কে পায়ের ভৃত্য করে এগিয়ে এসেছেন। নিজস্ব উদ্যোগে তারা চাল, ডাল, আলু, মুড়ি ও বিস্কুট কিনে সেগুলো রঘুনাথগঞ্জের বাণীপুরের কর্মহীন ও অসহায় পরিস্থিতির শিকার মানুষদের হাতে তুলে দেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের এই উদ্যোগের কথা ভাইরাল হতে না হতেই অসংখ্য নিষ্ঠাবান মানুষ হৃদয় দিয়ে একাজ চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহ জোগায়। কোনো দীনদুঃখী পরিবারের সন্ধান পেলেই তারা বাড়িতে যত্ন সহকারে খাদ্য প্যাকেজিং করে বাড়িতে বাড়িতে গাড়ির মাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছেন৷ 

এমন মহান কর্মকাণ্ডের প্রসঙ্গে বাণীপুরের বাসিন্দা শেখ জালাল বলেন "আমি কাঠুরিয়ার কাজ করতাম, বয়সের কারণে আর কাজ করতে পারিনা৷ বিড়ি বেঁধে সংসার চলে। কিন্তু বিড়িও বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে সংসার চালানো বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। আমি এখনও পর্যন্ত কোনো সরকারি অনুদান পাইনি। কাউকে লজ্জার বশে বলতেও পারিনি৷ তবে, এই একদল ছেলেরা আমার বাড়িতে এসে আমাকে সাহায্য করেছে। আমি তাদের আশীর্বাদ করছি। ওরা যেন সর্বদা ভালো থাকে।" 

বিহারের ছাপড়া নামের এক জায়গার বাসিন্দা বেশ কিছু বছর ধরে রঘুনাথগঞ্জের মিঠিপুরে বেডিংয়ের ব্যবসা করছেন। লকডাউনের ফলে বন্ধ তার ব্যবসা। তার হাতে একটা টাকাও অবশিষ্ট নেই৷ খাবার কেনার পয়সাও ফুরিয়ে গেছে৷ তার খবর পেয়েই ঐ একদল যুবক হাজির হয় ওখানে৷ কেবল মিঠিপুরই নয় রায়চক বোলতলা, নুরপুর, তালাইয়ের মতো জায়গায় ঘুরে বেড়িয়ে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। জাতি-ধর্ম ভুলে একসূত্রে আবদ্ধ হয়ে তারা কাজ করে চলেছে। তাদের অবদান সেই অঞ্চলের অসহায় মানুষেরা আজীবন স্মরণ করবে। 


ঐ দলের এক যুবক সইবুল শেখ জানান- "লকডাউনে দিন আনি দিন খাই মানুষেরা তো সমস্যায় পড়বেন। তাই কাছের কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে নেমে পড়ি। মূলত সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনুদান বা খাদ্যসামগ্রীর আবেদন রাখি৷ মানুষ বিশেষ ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। নাহলে এ কাজ চালানো সম্ভব হতোনা। তবে অসহায় পরিবারের খবর পেলেই আমরা খাবার বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছি। যতদিন লকডাউন চলবে ততদিন এভাবে কাজ চালিয়ে যাবো। 

দলের আরেক সদস্য ইমতিয়াজ শেখ। যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। তিনি জানান যে "এমন পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে থাকা উচিৎ। সেই মানবিকতার খাতিরেই একাজ চালিয়ে যাওয়া। পরিস্থিতির বদল না হলে আমাদের আরো কিছু ভাবতে হবে।" 

পৃথিবীতে মানবিকতা এখনও টিকে আছে শুধু এরকমই কিছু যুবকদের মহান কাজের জন্যই। যুগের পর যুগ এভাবেই বেঁচে থাক মানবিকতা। মানুষের পাশে বারবার মানুষই এগিয়ে আসুক। বাংলার ঘরে যেন এমনই সন্তান বারংবার জন্ম নেয়। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments