বাংলার ঐতিহ্যবাহী দোলের বিবিধ রূপ বৈচিত্র
বাংলার দোলকে শুধু মাত্র রং এর খেলা নামক সরলীকরণ করলে কিন্তু বলতে হবে বাংলার দোলকে জানাই হয়নি আমাদের। এই দোলের রূপ ও গভীরতা অনেক বিস্তৃত যা এক বাক্যে বর্ণনা করা অসম্ভব। পুরুলিয়া, নদীয়া, বীরভূম, মানভূম, রাঢ়বঙ্গ প্রত্যেক জায়গাতেই এর রূপ ভিন্ন।
শান্তিনিকেতনের দোল উৎসব |
বীরভূমের শান্তিনিকেতনের দোলঃ
বীরভূমের শান্তিনিকেতনের দোলে থাকে রবীন্দ্রসঙ্গীত, রবীন্দ্রনৃত্য এবং অন্যান্য রাবিন্দ্রীক ছোঁয়া। বিভিন্ন রাজবাড়িতেও এই রাবিন্দ্রীক ছোঁয়াতে বসন্ত উৎসব পালিত হয়। শোভাবাজার রাজবাড়ি বা এরকম প্রাচীন জমিদার বাড়িগুলিতেও এরকম বসন্ত উৎসব হয়।
পুরুলিয়ার বসন্ত উৎসবঃ
পুরুলিয়া ও মানভূমে আবার লালমাটি, রাঙা পলাশ, ঝুমুর গান ও ছৌ-নাচের আনন্দে মেতে ওঠেন বাঙালি ও আদিবাসী একসাথে। পলাশ ফুল দিয়ে রঙ তৈরি করে এ অঞ্চলে দোল হচ্ছে হাজার বছর ধরে। নানা ঝুমুর গানেই এই উৎসবের ছোঁয়া থেকেই বোঝা যায় যে মানভূমের এই দোল বহুকাল ধরে এই অংশের মানুষকে উদ্বেল করে তোলে। শুধু পলাশ ফুলই নয় শাল জঙ্গলের অপরূপ রূপ এসব নিয়ে হৃদয়ের আনন্দে বসন্ত উৎসবে মেতে ওঠেন এখানের মানুষ।এখানে নদীর ধারে সব মানুষ একত্র হয়ে পলাশ ফুলের রং তৈরি করে ঝুমুর গান ও আদিবাসী নৃত্য সহযোগে দোল বাংলার এক অন্যতম ঐতিহ্য।
পশ্চিম মেদিনীপুরের বগড়ির দোলঃ
পশ্চিম মেদিনীপুরের বগড়ির দোল আবার ৩০০ বছর ধরে রেখেছে সম্প্রীতির এক অন্য নজির। মুসলমান অধ্যুসিত গ্রাম দোলবাগান যেখানে মুসলমান ভাইয়েরা হিন্দুদের সাথে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করেন। এই দোল কমিটিতে হিন্দুদের চেয়েও বেশি আগ্রহে মুসলমান ভাইরা দোল উদযাপণ করেন। সম্প্রীতিই বাংলার প্রধান বৈশিষ্ট্য এবং এখানে এলে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। এখানে গড়বেতার বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ গোরুর গাড়িতে আসতেন যদিও এখন আর সেটা দেখা যায়না। তারপর মন্দিরের চিনির তৈরি কদমা ও ছোটোদের খেলার জিনিস ও চাষীরা চাষ করার কোদাল, কুড়ুল, গৃহস্থের জিনিস, মাদুর এসব কিনে ফিরতেন। এই দোল তৎকালীন সময়ে এই এলাকার সবচেয়ে বড় মেলা হওয়ায় মানুষ দোলবাগানের দোলের (যা বগড়ির দোল নামেও পরিচিত) জন্য সারা বছর তাকিয়ে থাকতেন।
নদীয়ার নবদ্বীপের দোলঃ
আবার নদীয়া, নবদ্বীপে দোলের এক অন্য রূপ দেখা যায়। শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মতিথি উপলক্ষে এখানে মেতে ওঠেন বৈষ্ণব ও হিন্দু একসাথে। এখানে চৈতন্যদেব ও অনেক রকমের ভক্তিগীতির সহযোগে দোলযাত্রা পালিত হয়। সারা দেশ জুড়ে ফাল্গুনী পূর্ণিমার দিনে রাধাকৃষ্ণের দোল পালন করা হলেও নবদ্বীপে সেদিন কেবল গৌরপূর্ণিমা, চৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথি।
নদীয়ার নবদ্বীপের দোল |
Post a Comment