Header Ads

আপনি কী অবাক হলেন? কলকাতার মার্কিন দূতাবাস বাংলাতে বসন্ত উৎসব ও দোলযাত্রার শুভেচ্ছা জানিয়েছে


গত ৯ ই মার্চ ছিল বসন্ত উৎসব ও দোলযাত্রা। বাংলার শান্তিনিকেতন, নবদ্বীপ, পুরুলিয়া, দোলবাগান ও ঝাড়গ্রাম সহ বিভিন্ন জায়গায়  ঘটা করে পালিত হয়েছে দোলযাত্রা। বসন্ত উৎসব ও দোলযাত্রা হলো বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, ঈশান বাংলা ও বাংলাদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ মেতে ওঠেন বসন্ত উৎসবে। 



অনেক বাঙালি বসন্ত উৎসব বা দোলযাত্রার সাথে হোলিরও শুভেচ্ছা পাঠান। কিন্তু বসন্ত উৎসবের সাথে হোলির কোনো সম্পর্ক নেই৷ বসন্ত উৎসবের সাথে হোলির মিল বলতে শুধু একটাই দুটোতেই রঙ খেলা হয়। আর হোলির সাথে বসন্ত উৎসবের তফাৎ হলো উত্তর ভারতে হোলিকা দহনের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে হোলি উৎসবের সূচনা হয়। আর বসন্ত উৎসবে  কৃষ্ণ-রাধার রঙ খেলা কিংবা প্রেমলীলাকে কেন্দ্র করে বাংলার বিভিন্ন মন্দিরে কৃষ্ণ-রাধার পুজো হয়। বিভিন্ন  জায়গায় সাংস্কৃতিক নৃত্যানুষ্ঠান, সংগীত পরিবেশন ও সুস্থভাবে আবির খেলার মাধ্যমে বসন্ত উৎসব উদযাপিত হয়। 

বাঙালিরা দোলযাত্রা, বসন্ত উৎসবের পাশাপাশি হোলি উৎসবও পালন করে। এতে করে এক জাতির সাথে অন্য জাতির সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান হয়। কিন্তু বাঙালির মধ্যে এখন দেওয়ার পরিবর্তে নেওয়ার প্রবণতাটা বেড়ে গেছে। একটু চোখ মেললেই দেখা যায় কোথাও না কোথাও বাঙালিরা বসন্ত উৎসব কিংবা দোলযাত্রার ব্যাপারটা ভুলতে বসেছে। হোলির চাপে বাঙালি যেন ভুলে গেছে বসন্ত উৎসব ও দোলযাত্রার কথা। এমনকি ইন্টারনেটেও বিভিন্ন সাইটে হোলির সাথে দোলযাত্রাকে গুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক  বাঙালিকে মনে রাখতে হবে অন্য জাতির মানুষ যতটুকু আমাদের সংস্কৃতি গ্রহণ করে আমরাও ঠিক ততটুকুই গ্রহণ করবো। তার বেশিও নয়, কমও নয়। 

আজকে অনেক বাঙালি বাংলা বলতে না পারা, বাংলা লিখতে না পারা নিয়ে গর্ববোধ  করে। যেটা কখনোই গর্বের নয়৷ আপনার একটা ভুলের জন্য হিন্দিভাষীরা আপনাকে হিন্দি বলতে বাধ্য করে কলকাতার বুকে। তারা কখনো অন্য ভাষাতে বা আপনার মাতৃভাষাতে কথা বলতে আসেনা। হিন্দি হলো হিন্দিভাষীদের মাতৃভাষা। তারা ঐ ভাষাতেই স্বছন্দবোধ করে। আর আপনি মিথ্যে জাতীয় ভাষার দোহাই নিয়ে বাংলা ছুঁড়ে হিন্দি ভাষার দিকে ঝুঁকছেন। এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন ভাষার সাথে উৎসবের কী সম্পর্ক? আছে, ভাষার সাথে উৎসবের অনেক সম্পর্ক রয়েছে। দু-একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিস্কার হবে আপনার কাছে। যেমন বাংলাতে দীপাবলি উৎসব আর হিন্দি ভাষাতে দিওয়ালি।  বাংলাতে দুর্গোৎসব আর হিন্দিতে দুশেরা। আপনার যদি নিজস্ব ভাষা নিয়ে আত্মসম্মান থাকে তাহলে আপনি দীপাবলি কিংবা দুর্গোৎসবই বলবেন। আর আপনার আত্মসম্মান বলে কিছু না থাকলে আপনি দুশেরা বা দিওয়ালি বলে থাকবেন৷ এটাই উৎসবের সাথে ভাষার সম্পর্ক। 

গত ৯ ই মার্চ কলকাতার মার্কিন দূতাবাসের একটি টুইট লক্ষ্য করলে দোলযাত্রার সাথে হোলির যে সম্পর্ক নেই ব্যাপারটা আরো পরিস্কার হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি আলাদা দেশ। সেখানে আলাদা ভাষা রয়েছে তবুও তারা পৃথিবীর সকল দেশের ভাষাকে সম্মান দিয়ে থাকে। মার্কিন মুলুকে ভোটের প্রচার অসংখ্য ভাষাতে হয়। তারা সকল দেশের বিভিন্ন জাতির সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল। ৯ ই মার্চের টুইট ছিল তিনটি ভাষাতে। বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায়। তাতে বাংলাতে বসন্ত উৎসব ও দোলযাত্রার শুভেচ্ছার কথা লেখা ছিল। ইংরেজিতে হোলি ও দোলযাত্রার উল্লেখ ছিল৷ হিন্দিতে কেবল হোলির কথা বলা ছিল। ২০১২ সালের ৮ ই মার্চ কলকাতার মার্কিন দূতাবাস কেবল বাংলাতে বসন্ত উৎসব ও দোলযাত্রার শুভেচ্ছা জানিয়েছিল টুইটার হ্যান্ডেলে। 
প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments