Header Ads

এই অসুস্থ পৃথিবীর এখন একটাই পোশাক---মুখোশ


শঙ্খ ঘোষের অনুকরণে বলতে ইচ্ছে করছে--"মুখ ঢেকে যায় মুখোশের আড়ালে"। এবং রাস্তায় বেরোলেই চোখে পড়ছে মানুষের মত কিছু জীব।তাদের হাত পা,মুখমণ্ডল মানুষের মতোই। কিন্তু সে মুখে কোনো অভিব্যক্তি নেই, না জিঘাংসা,না ঘৃণা,না প্রেম।ক্ষমতার আস্ফালন নেই,নেই ঐশ্বর্যের অহংকার। তারা বন্ধুত্বের আলিঙ্গনে জড়িয়ে থাকছে না,ভালোবেসে চুম্বন এঁকে দিচ্ছে না প্রেমিকার উষ্ণ অধরে।চোখে চোখ রেখে কথা বলার স্পর্ধা হারিয়েছে ওরা।এবং ভাবতে অবাক লাগছে সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে বিভিন্ন যুগে সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন অনেকেই। 


সাম্যের গান গেয়েছেন, স্বপ্ন দেখছেন ইউটোপিয়ান পৃথিবীর। পাশ্চাত্যের শেলী, কীটস, এলিয়ট থেকে বাংলার রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ থেকে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বিভেদহীন, শ্রেণীহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কার্ল মার্ক্স, লেনিন যে সমাজবাদের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা যেন আজ সফল হচ্ছে। এই অসুস্থ পৃথিবীর এখন একটাই পোশাক---মুখোশ। সেই মুখোশের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে সব দম্ভ, অহংকার। ধনী, দরিদ্রের পরিচয় মুছে আজ সবাই এক লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। ফরাসি বিপ্লব যে পরিবর্তন আনতে পারেনি,ইংল্যান্ডের নবজাগরণ যে পরিবর্তন আনতে পারেনি, রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ, গান্ধীজির আদর্শ, আইরিশ রেভলিউসন, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, নেতাজী, ভগত সিংয়ের আত্মবলিদান যে পরিবর্তন আনতে পারেনি,তা বোধহয় আজকের মুখোশের আড়ালে থাকা পৃথিবীতে এসে গেছে।

খুব আনন্দ হচ্ছে আমার।আনন্দের একটা কারণ যেমন এই 'বিবিধের মাঝে মিলন', তেমনি আরো একটা কারণে আনন্দ হচ্ছে।বিদেশে পাড়ি দেওয়া সন্তানের প্রতীক্ষায় যে সকল পিতামাতার চোখের জল শুকিয়ে গেছিল,সব আশা ভরসা ত্যাগ করে যারা মৃত্যুর দিন গুনছিলেন তাদের মুখে আবার হাসি ফুটেছে।অর্থ আর স্বাচ্ছন্দ্যের লোভে যারা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খোঁজটুকু পর্যন্ত নিত না,সেইসব শিকড় ছেঁড়া পরিযায়ী পাখির দল আবার ঘরে ফিরছে। জানি যে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের এই সুখ বেশিদিন কপালে সইবে না। তবু এই অযাচিত সুখের কটা দিন শেষ সম্বল হয়ে থেকে যাবে আমৃত্যু। তাঁদের চোখের জল আর দীর্ঘশ্বাস যদি আবার কোনোদিন সংক্রামিট করে মানব সভ্যতার হৃৎপিণ্ডকে, সেদিন হয়তো আবার বাসায় ফিরবে এইসব অকৃতজ্ঞ সন্তানের দল।

আর এতদিন বিপদে পড়লে যারা ধর্মের দরজায় কড়া নেড়েছেন,তাদের আশা করি একটু শিক্ষা হয়েছে।দেখলেন তো রাম আপনাকে বাঁচাতে আসেনি,আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করতে পারেনি,নাহ ভগবান যীশুও অবতীর্ণ হননি ত্রাতার ভূমিকায়। অথচ এই ধর্মের কারবারীদের প্রলোভনে ভুলে আপনি হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন বারবার। ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত আপনার হাত।এই সেদিন দিল্লিতে,তার আগে কখনো উত্তর প্রদেশে, কখনো বাংলায়, কখনো বিহারে ধর্মের নামে আগুন জ্বালিয়েছেন বারবার।  

মানবতা,সৌভ্রাতৃত্বের গান ভুলে বারেবারে মেতে উঠেছেন ধর্মের নামে রক্তের হোলিখেলায়। আজ নিশ্চয় বুঝতে পারছেন কোনো ভগবান আপনাকে রক্ষা করতে পারেনি,পেরেছে মানুষ,পেরেছে বিজ্ঞান। তাই মাটির ভগবান নয় আস্থা রাখুন রক্তে মাংসে গড়া ভগবানের প্রতি। জানি আপনারা শোধরাবেন না।কদিন পর মন্দির,মসজিদ,গির্জার দরজা খুললে সবার প্রথম আপনিই ছুটবেন ফুল,চাদর,মোমবাতি নিয়ে,কেননা আপনি বিশ্বাস করে বিপদের দিনে দুয়ার এঁটে থাকা এই ভগবান নাকি আপনাকে রক্ষা করেছে।



No comments