আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রয়োজনীয়তা কী আদৌ রয়েছে যেখানে নারীরা অসহায়?
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন "সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান/সঙ্কটের কল্পনাতে হয়ো না ম্রিয়মান/মুক্ত করো ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়”। কবিগুরুর গানের সাথে বলতে চাই উদাত্ত কন্ঠে নারীর জাগরণ দরকার।আমরা নারী। তারপর আমরা ভারতীয়। আমাদের অবস্থান এক। আজও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মধ্যে বাস করতে হয় আমাদের। আমরা আমাদের পদচিহ্ন রেখেছি এভারেস্ট থেকে সমুদ্রের অতলে। গবেষণারত নারী থেকে যুদ্ধবিমান চালনারত।কিন্তু তারপরও!!! কোথাও গিয়ে আমরা পরাধীন। বৈদিক যুগে নারীর অবস্থান ছিল বেশ ভাল।তাদের স্বাধীনতা ছিল, বেদ পড়তো। গার্গী, অপালা, মৈত্রেয়ী, বিশ্বেশবরা, লোপামুদ্রা আরো অনেক দার্শনিক ছিলেন। বেদ পরবর্তী যুগে মেয়েদের অবস্থা ছিল খুব শোচনীয়। মুঘল কিংবা ব্রিটিশদের সময়ে মেয়েরা ছিল পর্দানসীন। তবে ঝাঁসির রানী লক্ষীবাঈ থেকে প্রীতিলতা, কল্পনা দত্তের নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। বাঙালি মেয়েরা সাহসী তবে তাদের সাহসকে চাবুক মেরে সোজা করতে চায় পুরুষসমাজ। আমার মতে সমাজে মেয়েদের উন্নতি হলে বা শিক্ষিত হলে তবেই সমাজের প্রকৃত উন্নতি সম্ভব। পাশ্চাত্যে আঠারোশো শতাব্দী থেকেই নারী স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু হয় সমানাধিকারের দাবিতে। আমেরিকা,ইংল্যান্ড,ফ্রান্স এরা প্রথম সারির দেশ ছিল। আমাদের দেশে অনেক পরে এই সমানাধিকারের দাবিতে মেয়েরা সোচ্চার হয়।বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, কামিনী রায়,অবলা বসু, সরলাদেবী চৌধুরানি এরা প্রথম সারির ছিলেন এবং মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য সচেষ্ট হন। কিন্তু সমাজ এত সহজে সব কিছু মেনে নেয়নি। পরবর্তীকালে যশোধরা বাগচী, নিবেদিতা মেনন,অরুন্ধতী রায় আরো অনেকে এগিয়ে এসেছেন দিন বদলের আশায়।দিন বদলেছে কিন্তু ধর্ষণ, পণপ্রথা, কুসংস্কার, অল্প বয়সে বিবাহ, সতীত্ব এইগুলো এখনো রয়েছে। ভবিষ্যতেও থাকবে।
সমাজে মেয়ে মানে একটা বোঝা এবং সেই বোঝাকে ঘাড় থেকে নামাতে পারলে বাবা মা খুব খুশী। আমরা নারী। সমাজ বদলেছে। মেয়েদের অবস্থান আপাতদৃষ্টিতে বদলেছে। কিন্তু স্বাধীনতার পরিসরটা কতটা বদলেছে? স্বাধীনতা শব্দটার ব্যাপ্তি অনেক। রাত দুটোর সময় বেড়াতে আমরা স্বাধীন? একটা মেয়ে বিয়ের পর পুরো স্বাধীন নিজের ব্যক্তি পরিসরে? ব্যক্তিপরিসর মেয়েদের থাকতে নেই সমাজের মতে। আমি আমার মতো লিখব তাতেও আমার স্বাধীনতা নেই। কলম কথা বলবে সেখানেও অন্যের বুলি আমাকে আওড়াতে হবে। মেয়েদের ও যে একদম নিজস্ব ভাবনা চিন্তা মতামত থাকতে পারে বা তার মতটাকেও অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত এটা এই সমাজ মনে করে না।
৮ ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সেদিন অনেক সেমিনার, বক্তৃতা, নাটক, সিনেমা হবে, কিন্তু বাস্তবিক পরিবর্তন কিছুই হবে কি? উদয়াস্ত পরিশ্রম করবে নারী, ধর্ষিতা নারী মুখ লুকিয়ে থাকবে, পণের অত্যাচারে কোনো নারী মারা যাবে, কত নারী কে জোর করে দেহ ব্যবসা করতে বাধ্য করা হবে। প্রতি বছর নারী দিবস আসে আর যায়,পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় না সাধারণ নারীর জীবনে।
বাস্তব জীবনে আমরা এটাই স্বাভাবিক মনে করি কিন্তু এটা কি স্বাভাবিক?????
ReplyDelete