Header Ads

বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন - আমরাই জিতবো। টলিউডের অভিনেতা, পরিচালক, সঞ্চালকদের সবার সুরে বেঁচে থাকার আশ্বাস। জেনে নিন কেমন কাটছে তাদের দিন


করোনা ভাইরাসের কবলে জর্জরিত গোটা রাজ্য থেকে দেশ। দেশ থেকে গোটা পৃথিবী। এই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জোটবদ্ধ মানবজাতি। লকডাউন পরিস্থিতিতে গৃহবন্দী হয়ে দিন কাটছে সকল মানুষের। গ্রাম থেকে মহানগর সব জায়গাতে একই চিত্র। রাস্তাতে মানুষের ভিড় নেই। মহানগরে একা দাঁড়িয়ে হাওড়া ব্রিজ। নন্দন চত্বর ফাঁকা। সিনেমাহল খালি। বন্ধ শ্যুটিং। স্টুডিও পাড়া আনমনে কেমন যেন অচেনা অপেক্ষায়। এরই মাঝে কীভাবে দিন কাটছে টলি সেলেবদের? লিটারেসি প্যারাডাইস টলিউডের বেশ কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী, পরিচালক, সঞ্চালকদের কাছ থেকে তুলে এনেছে লকডাউন পরিস্থিতিতে তাদের দিনযাপনের কথা।জেনে নিন কেমন কাটছে তাদের দিন।



রুদ্রনীল ঘোষ ( অভিনেতা ):- প্রথম কথা হচ্ছে প্রথম দিনটা প্রচন্ড রকম টাফ ছিল। লকডাউন ব্যাপারটার সঙ্গে তো আমরা কেউই অভ্যস্ত ছিলাম না। এই যে একুশ দিন টানতে হবে এ ব্যাপারটা নিয়ে সবাই খুব টেনশনে দিন কাটাচ্ছিল। তার আগে একদিনের জন্য বলা হয়েছিল। একটা দিন সকলেই মানিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু যখন জানা গেল একুশটা দিন টানতে হবে যেটার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেওয়াটাই বেশ টাফ হয়ে গিয়েছিল। ফলত প্রথমে যেটা মাথায় এসেছিল সেটা হলো যে এই লকডাউন কখন খুলবে বা কখন উঠবে তার ঠিক নেই।


নিত্য প্রয়োজনীয় যে জিনিসগুলো লাগে, সেগুলো জোগাড় কীভাবে করতে হবে। তারপর কাজবাজের যে চিন্তা সেগুলো মাথায় এলো৷ তো সেগুলো মোটামুটি ফোনে সেরে নেওয়া হলো এবং সামনে যে কটা দোকান বা বাজার রয়েছে সেখানে লোক পাঠিয়ে জিনিসপত্র অ্যাসেম্বেল করে নেওয়া হলো। তারপর এখন সময় কাটানোর উপকরণ প্রথমে বলবো যে এই আধুনিক যুগে সময় কাটানোর সুবিধা বলতে ফোনে ভিডিও কলে প্রিয়জনদের সাথে কথা সেরে নেওয়া। সোশ্যাল ডিসটেন্সিং বজায় রাখা। আর প্রিয় কোনো জিনিস এখন বানানো যাবেনা। প্রিয় জিনিস বানাতে গেলে যেটা হয় তার মতো রসদ দরকার। এবার আমার ক্ষেত্রে আমি শুধু এটুকু বলতে পারি যে আমি সাদামাটা বাঙালি খাবার নিজে খেতে ভালোবাসি এবং একটু একটু  রান্না করতেও পারি৷ এক সেটাও চেষ্টা করছি যাতে সময়টা কেটে যায়। অবসর সময়ে এমনি আমার ছবি আঁকা ও লেখালেখি করা হ্যাবিট। তো আমি সেটাই করছি আর এটা অবশ্য আমার কাজের মধ্যেই পড়ে। আর এন্টারটেইনমেন্ট বলতে সময়ের অভাবে যে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজগুলো দেখা হয়ে ওঠেনি সেগুলো এখন দেখছি৷ 

যারা অকারণে ভয় পাচ্ছেন তাদের প্রতি আমি একটাই কথা বলবো যে-কোনো অসুখ নিয়ে যদি আমরা উদাসীনতা দেখায় তাহলে সেটাই ঐ অসুখের কারণ। পেনিক করবার কোনোকিছুই নেই। এই ভাইরাসটা শুধু ননভেগান থেকেই ছোটো নাম বলে আমরা জানতে পেরেছি। পেনিক করবার কিছুই নেই। যে-কোনো অসুখকে বাড়তে দিলেই প্রাণহানি ঘটতে পারে। যেটা সাধারণ একটা অসুখ। আমরা এর আগে ভাইরাল ফিভার ফেস করেছি। আমরা আগে ডেঙ্গি ফেস করেছি। চিকনগুনিয়া ফেস করেছি। ভারতবর্ষের অন্যান্য অসুখেও আমাদের বাড়িতে, আমাদের পাড়ায়, আমাদের রাজ্যে, আমাদের দেশে প্রচুর মানুষ মারাও যান। যে সংখ্যায় এখন হওয়ার চান্স তার থেকে অনেক বেশি মানুষ মারা যান। হয়তো এটা একটা সংক্রামিত জ্বর। এটা বেড়ে গেলে ফুসফুসকে আহত করতে পারে। ফুসফুসে সর্দি-জ্বর দমে গেলে আমরা নিঃশ্বাস না নিতে পেরে মারা যাবো। কিন্তু সেই সংখ্যাটা দু'এক শতাংশের মতো। আর ভিটামিন-সি'র প্রচুর খাবার খান যেহেতু ওষুধ বেরোয়নি, যাতে আপনার বডি নিজের থেকে ওষুধ তৈরি করে করে। সারাদিনই তৈরি করছে।  ঠান্ডা-সর্দি-কাশি থেকে বিরত থাকতে আমাদের সোজা যে ওষুধগুলো রয়েছে ভিটামিন-সি'তে। কমলালেবু, কাগজীলেবু, মোসাম্বিলেবু, যে-কোনো লেবু, আমলকি, পেঁপে, পেয়ারা, সব্জি এগুলো খান। এগুলো খেলেই রোগ-জীবাণুর সাথে ফাইট করার সুযোগ আসে। কাজেই এমন কিছু করবেন না যাতে ঠান্ডা লাগতে পারে। কারণ সর্দি-ঠান্ডা বেড়ে গেলেই এই ভাইরাস অ্যাটাক করবার চান্স বেশি৷ তবে যে-কোনো হাঁচি বা কাশি হয়েছে মানেই নয় যে আপনার করোনা হয়েছে৷ মনে রাখবেন ছোটোবেলা থেকে আপনার যা কিছু অসুখ হয়েছে সবই কিন্তু ভাইরাসেরই সংক্রমণ। তাই আপনার হাঁচি-কাশি হয়। আপনার বডি অনেকবার ভাইরাসকে নাড়া দিয়েছে। আবার আপনি তাড়িয়েও দিয়েছেন। আবার মেরেও দিয়েছেন। এর জন্য একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। নাহলে টার্নও করতে পারে। কারণ এই ভাইরাসের এখনও ওষুধ কিন্তু আবিষ্কার হয়নি। কাজেই ব্যাপারটা ক্যাজুয়ালি নেবেন না। আনন্দে  থাকুন, মজাই থাকুন। একটু সাবধানতা মেনটেইন করুন। যেমন আমরা বাড়িতে ঢুকলে খারাপ কথা বলিনা যেগুলো আমরা পাড়ার আড্ডার সময় বলি। ঠিক তেমনই আমরা যতই বাড়িতে থাকিনা কেন আমরা শহরে জীবনযাপন করবো না৷  আর মাস্ক শুধু তারাই ব্যবহার করুন যারা সংক্রমিত হয়েছেন বা তাদের যারা সেবা করছেন৷ এটা ডাক্তাররা বারবার বলে ক্লান্ত। দ্বিতীয় হচ্ছে যে করোনা রক্ষার জন্য যে মাস্ক তার অনেক দাম৷ সেটা বাজারে খুবই কম৷ মেডিক্যালের লোকজন বা বিরাট উঁচু লোকজন ছাড়া এটা ব্যবহার করতে পারেনা। যে মাস্কগুলো পরে আপনারা ঘুরছেন নর্মালি, বিশ্বাস করুন ওতে মশা-মাছি আটকানো যায় কিন্তু করোনা আটকানো যায়না। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। বারবার হাত ধুয়ে নিন৷ বেসিকেলি এই ভাইরাসটা ছোঁয়াছুঁয়ি থেকেই ইনফেকশন  হয় বলেই এখনও জানা গেছে। কে ভাইরাস সংক্রমিত, কে ভাইরাস সংক্রমিত নয় কেউ তো জানেনা। আমরা তাকে চিনতেও পারিনা। সারা পৃথিবী এই রোগের সম্পর্কে রোজ নতুন নতুন তথ্য দিচ্ছে। নিজেকে সাবধানে রেখে দিন৷ ভিটামিন-সি খান। বেশি লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করবেন না যদি একান্ত দরকার পড়ে তাহলে পরিবারের লোকজন ছাড়া বাকীদের সাথে দূরত্ব বজায় রাখুন। লোকজনকে নর্মাল লিড করুন বাড়ির মধ্যে থেকে৷

মানসী সিনহা ( অভিনেত্রী ) :- আপনাদের সবার জন্য বলছি এই করোনা কবলিত দেশে এখন সবাই প্লিজ বাড়িতে থাকুন৷ বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। বাড়ির মানুষদের নিয়ে থাকুন৷ বাড়িতে যতটুকু যা খাবারদাবার আছে তার মধ্যে যেটুকু পারেন গুছিয়ে নিয়ে বাড়িতে থাকুন৷ নিজেকে সময় দিন। নিজের পরিবারকে সময় দিন। বই পড়ুন, গান শুনুন। কিছু করার না থাকলে বাড়ির লোকের সাথে  ঝগড়া করুন। সময়ের অভাবে তো ওটাও করা হয়না৷ কাজেই সেটাও করুন৷ কিন্তু সকলে ভালো থাকুন৷ কিছুতেই বাড়ির বাইরে পা দেবেন না হাতজোড় করে অনুরোধ করছি৷ নিজেকে ভালো রাখুন, আপনার আশপাশের মানুষদেরও ভালো রাখুন৷ আমাদের দেশকে তো সবাই মিলে ভালো রাখতে হবে তাইনা৷ প্লিজ বাড়ির বাইরে পা দেবেন না কেমন৷ সকলে ভালো ও সুস্থ থাকুন।


শান্তনু মজুমদার ( সঞ্চালক ) :- একচুয়েলি করোনা এখন যতোটা না ভাইরাসের নাম তার থেকেও হয়ে গেছে আতঙ্কের নাম৷ ঐ যে ছোটোবেলায় না ঘুমোলে মা বলতো না যে ঘুমিয়ে পড়ো নাহলে ছেলে ধরা আসবে। বড়ো হয়ে এখন যে ব্যাপারটা হয়ে গেছে সেটা হলো বাইরে বেরোবেন না৷ বাইরে বেরোলেই করোনা চলে আসবে৷ আর করোনায় ধরলে বিপদের কিন্তু শেষ নেই৷ এখন বিষয়টা সেরকম৷ করোনা এখন একটা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে আট থেকে আশি সবাই এই বিষয়টাকে ভয় পাচ্ছে এবং তার ফলে সবাই ঘরে থাকছে। আর এই ঘরে থাকার দলে আমি-তুমি বা আমি-আপনারা প্রত্যেকেই আছি। বাড়িতে একটা জিনিস  বুঝতে পারছি যে যত ধারালো ছুরিই তুমি ব্যবহার করোনা কেন তোমার সময় কিন্তু কাটছে না৷ মানে সময়কে যে কীভাবে কাটানো যেতে পারে এটা আমরা কেউ বুঝতে পারছি না। কখনো ফেসবুকে থাকছি, নেট সার্চিং করছি, ইন্টারনেটের মধ্যে মুখ গুঁজে রয়েছি সকাল থেকে সন্ধ্যা। শুধু ইন্টারনেটেই বাস করছি কিন্তু সময় কাটতে চাইছে না৷ এখন এটাই বড়ো প্রবলেম যে সময় কীভাবে কাটবে। এটা শুধু আমার প্রবলেম নয় অনেকেই এই প্রবলেমে পড়ছেন৷ তবে বাড়িতে বসে আমার অফিসের কাজই চলছে মানে ওয়ার্ক ফর্ম হোমের মাধ্যমে অফিসের কাজ করছি৷ ইউটিউব চ্যানেলের জন্য কিছু নতুন কনটেন্ট ক্রিয়েট করছি৷ স্পেশালি বলে রাখা ভালো সেই কন্টেন্টের জন্য কী কী প্রশ্ন হতে পারে,কোন সেলিব্রিটি কন্টেন্টটির জন্য উপযুক্ত তাদের একটা লিস্ট তৈরি করার চেষ্টা চলছে। শ্যুটিং ফ্লোরে সেটাকে কীভাবে শ্যুটিং করবো তারই একটা রিহার্সাল নিজের মতো করে বাড়িতে বসে দিচ্ছি৷ আর ওয়ার্ক ফর্ম হোম হওয়ায় এখন অনেকেরই ওয়ার্কিং আওয়ার্স বেড়ে গেছে কারণ অফিসে একটা টাইম থাকতো যে এই টাইম থেকে ঐ টাইমটুকুর মধ্যে কাজটা করতে হবে৷ তারপর আবার বাড়ি ফিরে আসা কিন্তু এখন বাসা এবং কাজ দুটোই একই জায়গাতে হওয়াই যেটা হচ্ছে যে কখনো রান্নায় এক্সপেরিমেন্ট করছি, আবার কখনো কাজের মাসি না আসার জন্য কাজের মাসির ভূমিকাটাও বাড়িতে পালন করতে হচ্ছে। তার সাথে নিয়ম করে গোটা পরিবারের সাথে চায়ের সাথে আড্ডাতে সবাই কিন্তু অংশগ্রহণ করছি। পরিবারের সাথে সকলে মিলে দেদার খাওয়াদাওয়া চলছে৷ আপাতত পরিবারের সাথে এই কটা দিন তো কেটেছে। জানিনা বাকী দিনগুলো কী হবে। কীভাবে কাটাবো তার জন্য নো প্ল্যানিং৷ তবে কীভাবে কাটাবো এটা ভাবতে ভাবতেই হয়তো দিন কেটে হচ্ছে। আর একটা রিকুয়েস্ট করবো সকলকে করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য প্রত্যেককেই বাড়িতে থাকতে হবে, বাইরে বেরোলে চলবে না। তবে ডাক্তাররা বলছে একটা মানুষ থেকে আরেকটা মানুষের কিছুটা ডিস্টেন্স মেনটেন করতে হবে৷ একটা মানুষ অপর আরেকটি মানুষের সাথে দূর থেকে কথা বলতে হবে৷ আপনারা বাহ্যিক দূরত্ব বজায় রাখুন আন্তরিকতার সাথে। তবে কোনোমতেই যেন সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব বজায় না থাকে৷ কয়েকটা দিনের জন্য বাহ্যিক দূরত্ব তৈরি হোক আর এই যে এতো লোকে স্যানিটাইজার ব্যবহার করছি৷ এই অভ্যাসটি যাতে সারাজীবন থাকে তাতে আমাদেরই সারাজীবনের জন্য ভালো৷ একদিকে করোনা যেমন আমাদের অনেক সময় নষ্ট করছে, অনেক লোকসান করছে তেমনই অন্যদিকে কিছু জিনিস অভ্যাসে পরিণত করছে। আপনারা খুব ভালো থাকবেন। সারা বছরভর সুস্থ থাকুন। সুস্থ রাখুন নিজেকে। আর প্লিজ ঘরে থাকুন।


ঋত্বিকা সেন ( অভিনেত্রী ) :- করোনা নিয়ে এখন পুরো ওয়ার্ল্ড সাফার করছে বেসিক্যালি। এই পরিস্থিতিতে  আমাদের একদিকে তো একটা আলাদা পেট্রিওটিজম ম্যাটার করছে। দেশের প্রতি কোথাও একটা প্যাশন কিংবা ইউনিটি কাজ করছে। সর্বোতভাবে আমরা সকলেই একে অপরের প্রতি কো-অপারেট করছি। আমরা কী অ্যাচিভ করতে পারবো? নাহলে একটা ভীষণই খারাপ পরিস্থিতি দাঁড়াবে। আমাদের সকলেরই সেই ডিসিশনগুলো মেনে চলতে হবে যেগুলো আমাদের ভারতের সরকারগুলো দিয়েছে। আমার মনে হয় এগুলো খুব ভালো ডিসিশন৷ এই ডিসিশনগুলো আমরা সবাই মেনেও চলছি। সবার জন্য এটা বেশ টাফ কিন্তু আমরা এটা যত তাড়াতাড়ি মানতে পারবো তত তাড়াতাড়ি আমরা ভাইরাস ফ্রি হয়ে যাবো। আমরা করোনামুক্ত হতে পারবো। আবারো ফিরে এসে সেফলি কাজ করতে পারবো। তো এখন যথেষ্ট কষ্টে দিন কাটছে। শুধু আমার নয়, আমার মনে হয় প্রত্যেকেরই। এটাই তো আমাদের একতা, ছোট-বড় সবাই সবাইকে সাহায্য করছে। আমরা কেউ কারও সাথে দেখা করছি না। ফোন কলে সবার সাথে কথা বলছি৷ ইনফ্যাক্ট আমার বাবা-মায়ের সাথে আমার অনেকদিন দেখা হয়নি। আমি আমার বাড়ির ভেতরে রয়েছি। আমার বাবা-মাও বাড়ির ভেতরে রয়েছেন। প্রতি সপ্তাহেই এক দুদিন ছাড়া ছাড়াই আমি বাবা-মার বাড়ি যাই। নিজের কাজ না থাকলে বাবা-মার সাথে দেখা করি। আর এখন রাস্তাতে যেহেতু বেরোতে পারছি না তো ফোন কল ছাড়া দেখা বা কথা হচ্ছে না। আমাদের তো ভীষণ টাফ অবস্থা কারণ তোমরা নিশ্চয় দেখেছো আমরা যারা আর্টিস্ট রয়েছি তারা বিভিন্ন রকম ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করছি৷ আমিও কয়েকটা ভিডিও আপলোড করেছিলাম যে আমরা কিচেনের কাজ থেকে আরম্ভ করে সবকিছুই করছি৷ যেগুলোর সাথে মোটামুটি আমরা অভ্যস্ত নয়৷ কারণ আমার বাড়ির আশেপাশে যারা থাকেন তারাও বাড়ির বাইরে বেরোতে পারছেন না। সকলেই বাড়িতে বন্দী৷ আমরা যেহেতু সারাক্ষণ শ্যুটিং ফ্লোরে থাকি স্বাভাবিক ভাবেই কিচেনের সময় থাকেনা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে হিউম্যানিটির প্রশ্ন আর আমাদের দেশ ভারতবর্ষেরও। ফলে সেখানে পেট্রিওটিজিম কাজ করে৷ শুধু নিজের জন্য নয়, নিজে বাঁচার জন্য নয়। অনেক ছোটো বাচ্চারা আমাদের পাড়াতে রয়েছেন, অনেক বৃদ্ধ মানে আমাদের সিনিয়র সিটিজেনরাও রয়েছেন তাদের জন্য অ্যাটলিস্ট আজকে ভাবা উচিত। আমি বেশি করে তাদের জন্যই বাড়ি থেকে বেরোচ্ছি না। বাইরে থাকলেই ভাইরাসটা খুব তাড়াতাড়ি স্প্রেড করে৷ ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশান থেকে আমি যেটা পড়লাম যে ভাইরাসটা খুব তাড়াতাড়ি স্প্রেড করে৷ দ্রুতগতিতে স্প্রেড করে বলে বলা হচ্ছে। আমার সেই হিসেবে মনে হয়েছে যে শুধু নিজের জন্যেও নয় অন্যের জন্যেও এগুলো করা উচিৎ। সবাই এতো ভালো ভাবে নিয়মগুলো মানছে, এখন সবার মধ্যে এতো একতা যা দেখে মনে হচ্ছে আমরা নিশ্চয় সাকসেস হবো। আমি ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি যাতে আমরা সাকসেস হয়ে যায়৷ কোভিড নাইন্টিন করোনা ভাইরাস যাতে একদমই চলে যায়৷ আমার মনে হয় এটা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। আমার বাবা সিনিয়র সিটিজেন। ইনফ্যাক্ট উনিও বলছিলেন যে উনি ওনার এতো বছর বয়সেও কলকাতার এমন অবস্থা দেখেন নি৷ অনেক কিছুই শুনেছেন মুম্বাইয়ের বোম ব্লাস্ট থেকে শুরু করে এখানে ভাইরাস ছড়িয়েছে৷ ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছিল, কলেরা হয়েছিল কিন্তু এরকম কলকাতার অবস্থা কখনো দেখেন নি। সত্যি রাস্তাঘাট খুব ফাঁকা। আমি জানালা দিয়ে যেটুকু উঁকি মেরে মেরে দেখছি কোনো লোক দেখা যাচ্ছে না৷ কেউ বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে না। সত্যিই খুব ভালো লাগছে। সবাই যেটা মানছে আমি এটুকুই বলবো যে কোর অফ মাই হার্ট সবাইকে থ্যাঙ্কস জানাতে চাই সবাই নিয়মকানুন মেনে চলছেন৷


সুব্রত শর্মা ( পরিচালক ) :- সত্যি কথা বলতে করোনা ভাইরাস সারা পৃথিবীর কাছে ভীষণই খারাপ একটা বিষয়৷ সরকার যেরকম ভাবে নির্দেশিকাগুলো দিচ্ছে সেটাকে ফলো করার চেষ্টা করছি৷ নির্দেশিকগুলো অলরেডি সবাই জেনে গেছে, তাই ওটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই নেই৷ সবার ক্ষেত্রে আমার একটাই অনুরোধ কেউ দয়া করে বাড়ি থেকে বেরোবেন না খুব প্রয়োজন ছাড়া৷ যেমন আমি বাজারটা প্রয়োজনে পড়ে একবার করছি৷ দোকানে যা কেনার দরকার পড়ছে সেগুলো আমি বেশি করে কিনে ফেলছি৷ বাইরে থেকে বেরিয়ে আসার পর সেই জামাকাপড়গুলো ধুয়ে ফেলছি৷ আর পাশাপাশি নিজেকে এগুলো মেনটেইন করা৷ কারও মধ্যে রোগটা যাতে না ছড়ায় তার জন্য সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে৷ আমি পার্সোনালি যেভাবে সময় কাটাচ্ছি সেটা হলো প্রচুর গল্পের বই পড়ছি, প্রচুর সিনেমা দেখছি, প্রচুর গল্প নিজে লিখছি সেটা শর্টফিল্মের জন্য হোক বা ফিচার ফিল্মের জন্য। প্রচুর বন্ধুদের সাথে গল্প করার সুযোগ পেয়েছি যেহেতু এখন সুযোগ আছে। এখন শ্যুটিং বন্ধ আছে। পুরানো সময়গুলোকে ফিরে পাচ্ছি যে সময়টা বন্ধুদেরকে দিতাম৷ মোটামুটি এভাবেই কেটে যাচ্ছে। যদিও খুব একটা ভালো লাগছে না কাটাতে৷ এতোদিন ধরে বসে থাকাটা খুব কষ্টের।


পিয়াঙ্কা সরকার ( অভিনেত্রী ) :- এই লকডাউনে অনেকদিন বাদে অনেকটা সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছি। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। বন্ধুদের সঙ্গে ভিডিও কলে যোগাযোগ  রাখছি। অনেকের সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে খবরগুলো পাচ্ছি সেগুলো ফলো করছি৷ শহরের কি অবস্থা সেটা নিয়ে আপডেটেড থাকার চেষ্টা করছি। এছাড়া ওয়েব সিরিজ, সিনেমা দেখছি। মাঝে মধ্যে ছবি আঁকছি। ঘর গুছিয়ে রাখছি। আমি সবাইকে অনুরোধ করব এই লকডাউনটা মেনে চলার চেষ্টা করুন। আর সবাই প্লিজ সুস্থ থাকুন।


মৌবনি সরকার ( অভিনেত্রী ) :- আমার মনে  হয়, সারা পৃথিবীতে এই মুহূর্তে  একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রবলেম দেখা যাচ্ছে। এই প্রবলেমটা এতো বড়ো হতে পারে যে আমরা হিমসিম খেয়ে ইটালির মতো অবস্থায় পড়তে পারি। আমেরিকার মতো একটি পাওয়ারফুল কান্ট্রি যেখানে ডাক্তারি পরিষেবা ও হাসপাতাল যথেষ্ট উন্নত হওয়া সত্বেও তারা হিমসিম খাচ্ছে। আমাদের ভারতবর্ষ সেই তুলনায় অনেক গরীব দেশ।

সেই দেশে এই কোভিডের ছায়া বিচ্ছিরি আকারে ছড়িয়ে পড়তে না পারে তার জন্য আমার মনে হয় আইসোলেশন প্রক্রিয়া বা লকডাউন প্রসেস হলো একমাত্র উপায়। কারণ আমরা বলিনা যে প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর মানে আমাদের কাছে একটা বিপদকে আটকানোটা আরো বেশি বুদ্ধিদৃপ্ত ব্যাপার হবে। আমি মনে করি এই সময় হতাশ না হয়ে গিয়ে, নিজেকে নিরাশার মধ্যে ডুবিয়ে না দিয়ে মন শক্ত করুন। নিজের যেটা সবচেয়ে প্রিয় জিনিস নিজের পরিবারকে কাছে পাওয়া গেছে এবং সেই পরিবারের সাথে সময় কাটাচ্ছি। আমরা হয়তো সারাক্ষণ পরিবারে স্ট্রেসের কথা বলি, হয়তো আমরা বলি যে আমরা এতো স্ট্রেসফুল জীবন কাটাচ্ছি। আমাদের সারাক্ষণ স্ট্রেস প্রবলেম হচ্ছে যেমন সারাক্ষণ ফোন বাজছে, সারাক্ষণ ইন্টারনেটের সামনে বসতে হচ্ছে, সারাক্ষণ কিছু না কিছু দেখতে হচ্ছে। তার থেকে আমার মনে হয় এই পিসফুল সময়টাতে নিজেদের ভেতরে গিয়ে নিজেদের সেল্ফ কানেকশনের একটা বিশাল বড়ো সময়। যেখানে নিজের জন্য আমি একটা আয়না কিনে দেখতে পারবো যে আমি কোথায় কোথায় ভুল। আমি নিজে এটা বাড়িতে করছি কারণ আমি মনে করছি মানুষ হিসেবে আমরা সকলেই একটা বড় ভুল করে বসে আছি। আমরা সেই ভুলগুলোকে সংশোধন করতে পারি যাতে নেক্সট জেনারেশনকে আমরা কিছু দিয়ে যেতে পারি। এই নয় যে পৃথিবীর যা যা কিছু সুন্দর সমস্ত শুধু আমরাই উপভোগ করলাম আর সামনের জেনারেশন কিছুই পেলোনা। অক্সিজেন থেকে জল বহন পর্যন্ত কিংবা মেয়েদের একটা সুন্দর বাচ্চার জন্ম দেওয়া পর্যন্ত একটা বিশাল সামাজিক দায়িত্ব রয়ে গেল আমাদের একে অপরের প্রতি। লকডাউনের এই সামান্য কটা দিনে যেন আমরা মনের ভেতরের সেই রিয়েলাইজেশনগুলো এনে কিছু পরিবর্তন আনতে পারি। এই সময়টাতে আমাদের দেহতত্ত্ব অনুযায়ী মেডিটেশন পোগ্রামের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যেটা আমি ভীষণ পছন্দ করি। আমি এর আগে মেডিটেশনের ক্লাসও নিয়েছি। আমার লাইফ এতোটাই স্ট্রেসফুল যে আমি পারিনি সেগুলো নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার বা নতুন কিছু ভাবার বা নিজের ওপর প্রয়োগ করার৷ এখন আমার কাছে সেই গোল্ডেন অপরচুনেটি বা সেই সময় এসেছে।


সাহেব হালদার ( অভিনেতা ) :- করোনা যেহেতু এই মুহূর্তে মানুষের আতঙ্কে পরিণত হয়েছে শুধুমাত্র আমি বলবো না যে আমাদের দেশে বা পার্টিকুলার কোনো জায়গাতে, এটা গোটা পৃথিবী জুড়ে। সারা পৃথিবীতে আতঙ্ক মানে ভয়ানক একটা ব্যাপার। এই মুহূর্তে প্রতিটি মানুষ তাদের দেশের বলো, রাজ্যের বলো যে সরকার রয়েছে তাদের মতানুসারে, তাদের গাইড অনুসারে বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে। সেইমতো আমরা নিজেরা বাড়িতে রয়েছি৷ নিজের ফ্যামিলিকে বাড়িতে সময় দিচ্ছি। নিজের জন্য সময় দিচ্ছি। আমি সবার কাছে একটাই অনুরোধ করবো এই কটা দিন বাড়িতে থাকুন৷ আমি একটা কথাই বলবো যে একটা সুস্থ পৃথিবী পেতে হলে আমাদের এখন এই কটা দিন গৃহবন্দী থাকতে হবে। আমাদের সারাজীবনের জন্য পৃথিবী পেতে হলে একটু কষ্ট তো করতেই হবে৷ যদি বেখেয়ালি ভাবে আমাদের কেউ ধরো বাইরে গেছে সেই একজনের যাওয়ার রেসপন্সিবিলিটি পুরো দেশ নিয়ে নিতে পারে৷ এটা এমনি একটা রোগ কেউ একজন বেরিয়ে গেছে তো সেই একজনের জন্যেও কিন্তু কয়েক লাখ লাখ মানুষের ক্ষতি হতে পারে৷ একটা মানুষ থেকেই দ্রুতগতিতে ভাইরাসটা স্প্রেড করছে। একটা থেকে দুটো, দুজন থেকে পাঁচজন, পাঁচজন থেকে দশজন, দশজন থেকে একশো, একশো থেকে এক হাজার, এক হাজার থেকে দশ হাজার এভাবেই কিন্তু স্প্রেড হচ্ছে। কিন্তু শুরুটা সেই একজনকে দিয়েই হয়েছিল৷ আমি বলবো সেই একজনটা কে? তাই সকলকে বারবার করে বলবো প্লিজ বাড়িতে থাকুন৷ ফ্যামিলকে সময় দিন। প্রতিটি দেশের সরকার থেকে সাধারণ  মানুষ সবাই একজোট হয়ে দায়িত্ব নিয়েছে৷ সকলকে বলবো প্রচন্ড সতর্ক থাকুন৷ ডাক্তার থেকে সরকার সবাই একটা কথাই বারবার বলছে যে কোনো খাবার খাওয়ার আগে বা কোনো জায়গা গেলে আগে নিজের হাতটা সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এই কটা দিনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া অভ্যাস করুন এতে করে এটা নিয়মিত ব্যবহার হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের কাজ বলতে শ্যুটিং তো পুরো বন্ধ হয়ে গেছে। আমার নেক্সট মানথের দশ তারিখ থেকে একটা ছবিতে শ্যুটিং শুরু হবার কথা ছিল। সেটাও পুরো বন্ধ হয়ে গেল। আশা করছি আমরা যেহেতু সবাই মিলে যুদ্ধ করছি, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছি তাতে করে আমরা সেই পুরানো পৃথিবী বা ভালোবাসার পৃথিবীটাকে ফিরে পাবো৷ একটু চোখ মেললেই দেখা যায় এই রোগটা আসার ফলে রাজনীতি, ধর্ম বলে কিছু আর নেই কিন্তু।


সবাই মিলে কিন্তু লড়াই করছে৷ এটা যদি পৃথিবীতে সারা জীবন ধরে থাকে তাহলে কতো সুন্দর পৃথিবী পাওয়া যায়। আমরা যেভাবে একতাবদ্ধ হয়ে রোগের বিরুদ্ধে লড়ছি এভাবে আমরা যদি সারাজীবন একসাথে লড়ি তাহলে পৃথিবীর কেউ আমাদের হারাতে পারবে না। বারবার আমরাই জিতবো৷ কাজেই এই কটাদিন একটু বাড়িতেই থেকে যান। রোজ পুষ্টি জাতীয় খাবার খান৷ শুধু এই কয়েকটা দিন নয়, সারাজীবন যদি আমরা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কোনো রক্তের ভেদাভেদ ছাড়া লড়তে পারি তাহলে পৃথিবীর সমস্ত অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আমরাই জিতবো।

ওলিভিয়া মালাকার ( অভিনেত্রী ) :- করোনা কোভিডা নাইন্টিনের বিরুদ্ধে শুধু আমরা নায়ক-নায়িকারাই নই, সারা পৃথিবীর মানুষ গৃহবন্দী হয়ে রয়েছেন৷ আমার সকলের জন্য একটাই কথা বলার সবাই বাড়িতে থাকুন৷ বাড়ি থেকে কেউ বেরোবেন না কারণ আমাদের দেশের সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা স্ট্রিক্টলি সকলের ফলো করা উচিত। আমি মনে করবো আমার কথাটা যারা এখন পড়ছেন তাদের প্রত্যেককেই অনুরোধ করবো প্লিজ একটুও বেরোবেন না। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পারলে আমি-আপনি সকলেই ভালো থাকবো। আমাদের পরিরারকেও ভালো রাখতে পারবো৷


সন্দীপ্তা সেন ( অভিনেত্রী ) :- আমরা হঠাৎ করে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি যে সকলের পাশে থেকে সকলকে সঙ্গে নিয়ে কোবিড নাইন্টিনের সাথে যুদ্ধে জিততে হবে। সকলকে একটাই কথা বলার যে দয়া করে গভর্নমেন্ট থেকে যা যা ইন্সট্রাকশন দেওয়া হচ্ছে সেগুলো প্লিজ ফলো করুন। সারাদিন বাড়িতে থাকুন। দরকারি জিনিসপত্র ও মেডিসিন আনা ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। আমাদের সকলকে বুঝতে হবে যে ব্যাপারটা কতটা সিরিয়াস। আর দায়িত্ববান নাগরিকের মতো ব্যবহার করতে হবে। অবাধ্য বাচ্চাদের মতো অন্তত নয়। আমি সকলকে একটাই কথা বলবো যে প্লিজ প্যানিক করবেন না। প্যানিক করলে যেটা হবে আমাদের মেন্টাল হেলথ একদমই ঠিক থাকবে না। আমরা শারীরিক ও মানসিক দু'দিক দিয়েই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। আমাদের মেন্টালি খুব স্ট্রং থাকতে হবে। পজিটিভ থিঙ্কিং করতে হবে। আমরা নিশ্চয় ভালোভাবে এই কঠিন সময়টাকে অতিক্রম করতে পারবো।


প্রতিবেদন-সুমিত দে



No comments