'যা দেখি তাই নিয়ে গান গাই। আমি মাটির মানুষ'। 'বড়লোকের বিটি লো' গানের স্রষ্টা রতন কাহারের সাক্ষাৎকার
বীরভূমের সিউড়িতে কান পাতলে আজও ভোরবেলায় শোনা যায় নগরকীর্তনের আওয়াজ। শহরের মানুষের ঘুম ভাঙ্গে সেই আওয়াজে। প্রায় নব্বই বছর বয়সেও তিনি সমানভাবে গানের জগতে নিজেকে ভাসিয়ে রেখেছেন। যিনি সারাজীবন ধরে যুক্ত রয়েছেন লোকসঙ্গীতের সাথে। কালজয়ী সেই গান 'বড়লোকের বিটি লো' গানের স্রষ্টা হলেন তিনি। অচিরেই যার নাম অজানাই থেকেছে বাঙালির কাছে। তিনি হলেন বিখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী রতন কাহার। মাটির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ চিরন্তন। আজকে আমরা কথা বলবো সেই মাটির মানুষটির সাথে যিনি বিস্তৃতির অতলগর্ভে অমলিন। ফোনে কথা বলে আমরা তুলে এনেছি তাঁর একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার।
লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনি সঙ্গীত জীবনে এলেন কীভাবে?
রতন কাহার- আমি নানা জায়গায় গান করতাম আগে। অনেকগুলো দল ছিলো সেখানে গান করতাম। মাটির গান গাইতাম বিভিন্ন জায়গায়। এভাবেই আমি সঙ্গীত জগতে এসেছি।
লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনি
লোকসঙ্গীত গানের অনুপ্রেরণা পান কাদের কাছ থেকে? সেইসব মানুষগুলির কথা যদি বলেন?
রতন কাহার- আমি
শিখেছিলাম আমার মামার কাছ থেকে। আমি যাত্রা করতাম, নাটক করতাম তারপর ওগুলো করতে
করতে আমি ভাদু গানও শিখেছিলাম। মামা এবং বিভিন্ন লোকের অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
লিটারেসি প্যারাডাইস- 'বড় লোকের বেটি লো' গানটায় গানের স্রষ্টাকে যেভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা করা
হয়েছে তার বিরুদ্ধে অনেক বাঙালি প্রতিবাদ করছেন এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
রতন কাহার- এটা তো প্রতিবাদ করতেই হবে।আমার
লেখা গান, আমি গীতিকার, আমি সুরকার, আমি এখনও বেঁচে আছি। আমার দেশের মানুষই তো
বিচার করবে আমার হয়ে। প্রতিবাদ করার যখন কথা তখন কেউ প্রতিবাদ করেননি। কোনো লেখক
আমার পাশে দাঁড়াননি স্বপ্না চক্রবর্তী যখন রেকর্ড করছিলেন। 'বড় লোকের বিটি' গানটা
৭২ সালে আমি লিখেছিলাম।
লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনার সৃষ্টি করা লোকগীতিগুলি আপনাকে কতটা তৃপ্তি দেয়?
রতন কাহার- যা দেখি তাই নিয়ে গান গাই। আমি
মাটির মানুষ আপামর যা দেখি তাই বলি।
লিটারেসি প্যারাডাইস- আজকালকার মানুষদের মনে কোনো আনন্দ নেই অথচ আপনি এই বয়সে এসেও সিউড়ি শহরে
ভোর বেলাতে টহল গেয়ে নগর পরিক্রমা করেন। এই এতখানি শক্তি আপনি এখনও কীভাবে পান?
রতন কাহার- সবই ঈশ্বরের দান। তাঁর কৃপাতেই
পারি। সঙ্গীতদেবতার উপর ভরসা করেই আমি আছি।
লিটারেসি প্যারাডাইস- ঝুমুর
গানের বিস্তার হলেও ভাদু ও টুসু গান কেমন যেন হারিয়ে যাচ্ছে এটা নিয়ে সেইভাবে
বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছেনা। এটাকে বাঁচিয়ে রাখতে কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
রতন কাহার- আমরা যতদিন
থাকবো ততদিন বেঁচে থাকবো জানেন। আজকালকার
মানুষদের কোনো উদ্যোগ নাই। ছেলে মেয়েদের উৎসাহ নাই। তারা অন্যদিকে চলে যাচ্ছে।
সঙ্গীতজগত নিয়ে উন্মাদনা নেই। লোকগীতি গান লোক করছেনা আগের মতো।
লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনার সঙ্গীতজীবনে আপনার গানগুলি অনেকেই চুরি করে নেওয়ার চেষ্টা করেছে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনার হয়ে কী কেউ
প্রতিবাদ করেছিল?
রতন কাহার- প্রতিবাদ করেছিলেন একজন। তিনি
ছিলেন আমাদের সিউড়ির বিধায়ক স্বপন রায়। স্বপ্না চক্রবর্তী যখন গানটা রেকর্ড করে
ছেড়েছিলেন তখন।
লিটারেসি প্যারাডাইস- রাঢ়
বাংলা কবিতা উৎসবে আপনাকে সঙ্গীতস্রষ্টা হিসেবে সন্মানিত করা হয়েছে। কিন্তু সত্যিই
কি আপনাকে মানুষ আপনার প্রাপ্য সন্মান দিয়েছে?
রতন কাহার- হ্যাঁ দিয়েছে।মানুষ খুব ভালো সম্মান দিয়েছেন।বিভিন্ন জায়গাতেই আমি সন্মান পেয়েছি।।।
প্রতিবেদন- অমিত দে
Post a Comment